মানুষের মস্তিষ্ক বড় কেন?
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রযুক্তি ডেস্ক
অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষের মস্তিষ্ক বড়। কিন্তু বড় মস্তিষ্ক মানুষ পেল কী করে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে মানুষের পেটে এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমাদের মস্তিষ্কের আকার বড় হওয়ার কারণ হতে পারে অন্ত্র বা পেটের মাইক্রোবায়োমের প্রভাব। মাইক্রোবায়োম হচ্ছে অণুজীবের সম্প্রদায়, যেমন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস।
অন্ত্রের বিভিন্ন অনুজীব মানবদেহ ও মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এগুলো নিউরোট্রান্সমিটারসহ বায়োঅ্যাকটিভ রাসায়নিক যৌগ তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের অন্ত্রে শত শত কোটি অনুজীব রয়েছে, যা গ্লুকোজ তৈরিতে ব্যবহৃত বিপাকীয় শক্তি উৎপাদন করার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনে প্রভাব ফেলে। প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় দেখা গেছে, দেহের বায়োলজি ও বিবর্তনকে আকার দিতে পারে বিভিন্ন প্রাণীর অন্ত্র বা পেটের মধ্যে থাকা অনুজীব। কাজ করার জন্য মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয় অনেক বেশি শক্তির, বিশেষ করে মানুষের মতো বড় মস্তিষ্কওয়ালা স্তন্যপায়ীদের বেলায়। দেহের ওজনের কেবল দুই শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও মস্তিষ্ক শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ শক্তি খরচের পেছনে কাজ করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘মাইক্রোবিয়াল জিনোমিক্স’-এ। গবেষণা অনুসারে, মানুষের মতো বড় মস্তিষ্কওয়ালা প্রাণীরা কীভাবে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা মেটায় তা বোঝার চাবিকাঠি হতে পারে পেটের মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট কিছু অনুজীব। এ জন্য পরীক্ষাগারে ইঁদুরের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রাইমেটের অনুজীব ইমপ্ল্যান্ট করেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে কিছু ইঁদুরের দেহে মানুষ ও কাঠবিড়ালি বানর বা বড় মস্তিষ্কওয়ালা প্রাইমেটের অনুজীব ও অন্যকিছু ইঁদুরের দেহে ম্যাকাক বা ছোট মস্তিষ্কওয়ালা প্রাইমেটের অনুজীব প্রবেশ করান তারা। এরপর ৬০ দিন বা দুই মাস ধরে ইঁদুরের শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখেন গবেষকরা। এ সময় ইঁদুরের লিভারের কার্যকারিতা, ওজন বৃদ্ধি, দেহের চর্বির পরিমাণ ও অন্যান্য নানা বৈশিষ্ট্যের উপর নজর রাখেন তারা। ম্যাকাক-এর অনুজীবওয়ালা ইঁদুরের তুলনায় মানুষ ও কাঠবিড়ালি বানর-এর জীবাণুওয়ালা ইঁদুরের দেহে শক্তি উৎপাদনের সক্ষমতা বেশি হওয়ার পাশাপাশি শক্তি খরচের সম্ভাবনাও দেখা গেছে বেশি। ‘গবেষণার এসব ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, মানুষ ও কাঠবিড়ালি বানর প্রজাতি উভয়ই আলাদাভাবে যখন বড় আকারের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়, তখন তাদের বিভিন্ন অনুজীব সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহে সহায়তা করতে একই ভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল,’ বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র নৃবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ক্যাথরিন আমাতো। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মানুষ ও বড় আকারের মস্তিষ্কওয়ালা অন্যান্য প্রাইমেটদের বিবর্তিত হতে সাহায্য করেছে অন্ত্র বা পেটে সক্ষমতার সঙ্গে কম সময়ে দ্রুত শক্তি উৎপাদন করে এমন বিভিন্ন অনুজীব। কারণ ওই সময় দেহকে চালানোর জন্য মস্তিষ্কের প্রয়োজন ছিল আরো বেশি শক্তির। ‘আমরা এরই মধ্যে জানি, বড় অন্ত্রে থাকা বিভিন্ন অনুজীব এমন যৌগ তৈরি করে যা মানব দেহের বায়োলজির নানা দিকের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন দেহের বিপাকের পরিবর্তন ঘটায় এটি, যা ইনসুলিন প্রতিরোধের পাশাপাশি বাড়িয়ে তুলতে পারে দেহের ওজন,’ বলেছেন আমাতো। ‘অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা বা ভূতাত্ত্বিক সময়ের অণুজীরের পরিবর্তন হচ্ছে এক ধরনের অনাবিষ্কৃত প্রক্রিয়া। যেখানে মস্তিষ্কের শক্তির প্রয়োজনীয়তাকে সহজ করতে পারে প্রাইমেট মেটাবলিজম।’