পৃথিবীর চেয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে ঘড়ির কাঁটা দ্রুত চলে। কিন্তু এর পেছনের কারণ কী-তা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। নাসা’র লক্ষ্য, মানুষের বসবাসের জন্য চাঁদে টেকসই পরিবেশ তৈরি করা। সেই লক্ষ্যে চলমান উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন মহাকর্ষীয় পরিবেশে, বিশেষ করে চাঁদে পৃথিবীর তুলনায় ঘড়ি বা সময় কীভাবে কাজ করে তা খতিয়ে দেখছেন গবেষকরা।
চাঁদে সময় দ্রুত চলে : গবেষকরা বলেছেন, পৃথিবীর চেয়ে চাঁদে সময় দ্রুত চলে। চাঁদের কাছাকাছি কোনো ঘড়ি রাখলে প্রতিদিন তা অতিরিক্ত ৫৬.০২ মাইক্রোসেকেন্ড বেশি টিক টিক করে। আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মতে স্থান, কাল ও ভর পরম নয়, এ সবই আপেক্ষিক। আর চাঁদে সময়ের এই দ্রুততার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে আইনস্টাইনের এই সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। এই ঘটনাটির জন্য দায়ী দুটি মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের পার্থক্য। সময়ের এই দ্রুততার পেছনে আছে মূলত মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের পার্থক্য। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র পৃথিবীর তুলনায় কম, সেটিই এর কারণ। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল’-এ। এতে উঠে এসেছে মহাকাশের বিভিন্ন ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে ঘড়ি কেমন আচরণ করে সে সম্পর্কেও বিশদ তথ্য। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট হচ্ছে, মহাকাশের এমন এক স্থান যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর মতো দুটি সিস্টেমের মহাকর্ষীয় শক্তির বিপরীতমুখী আকর্ষণের ফলে তৈরি হয় এক আকর্ষণহীন স্থান। এসব স্থানের নির্দিষ্ট বিন্দুতে মহাকর্ষীয় বলের ভারসাম্য বজায় থাকে। এসব পয়েন্টকে মহাকাশে বিভিন্ন মহাকাশযানের ‘পার্কিং স্পট’ হিসাবেও ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। যেমন চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ভ্রমণের সময় বিভিন্ন মহাকাশযান ভবিষ্যতে কোনো মিশনের জন্য এসব পয়েন্ট ব্যবহার করে। মহাকাশে যোগাযোগ বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এসব পয়েন্ট। এ ছাড়াও বিভিন্ন মহাকাশযানের সফল অবতরণ নিশ্চিত করতে ও যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে গ্রহের সময় ও গতিবিধির সঙ্গে মিল রেখে চলতে সাহায্য করে এসব পয়েন্ট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি গ্রহের মধ্যে সময়ের পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহাকাশ নিয়ে মানুষের গবেষণা বা অনুসন্ধান করার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এটি। একই সঙ্গে এটি সহায়তা করে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতিটি গ্রহের মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান বোঝার বেলাতেও।