বিজ্ঞানীরা যা ভেবেছিলেন চাঁদ তার চেয়েও বেশি সক্রিয় বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, কোটি কোটি বছর ধরে ভূতাত্ত্বিকভাবে মৃত চাঁদ, অর্থাৎ এর ভেতরে সব রকমের বড় ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন গবেষণা বলছে, এখনো চাঁদের পৃষ্ঠের নীচে ভূতাত্ত্বিক আন্দোলন রয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও বেশি সক্রিয় করে তুলেছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটিকে। চাঁদের ইতিহাস বোঝার জন্য কয়েক দশক ধরে এর পৃষ্ঠ গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাচীন লাভার মাধ্যমে গঠিত চাঁদের অন্ধকার ও সমতল অঞ্চল ‘লুনার মারিয়া’, যার থেকে প্রমাণ মিলেছিল, কোটি কোটি বছর আগে সংকুচিত ও গুটিয়ে গেছে চাঁদ।
তবে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নাল’-এ প্রকাশ পাওয়া সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রটিতে উঠে এসেছে ভিন্ন কথা। ‘স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন’ ও ‘মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি’ বা ইউএমডি’র একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন চাঁদের দূরবর্তী দিকের কিছু শৈলশিরার বয়স কাছের দিকে থাকা বিভিন্ন শৈলশিরার চেয়ে কম। ইউএমডি’র গবেষণা বিজ্ঞানী জ্যাকলিন ক্লার্ক বলেছেন, ‘অনেক বিজ্ঞানী অনুমান করতেন, চাঁদের প্রধান ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ প্রায় তিনশ কোটি বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদের কিছু ভূতাত্বিক গঠন গত ২০ কোটি বছরেও সক্রিয়তা দেখিয়েছে, যা চাঁদের দীর্ঘ ইতিহাস বিবেচনায় নিলে খুব সাম্প্রতিক।’ উন্নত ম্যাপিং ও কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে চাঁদের দূরবর্তী অংশে অজানা ২৬৬টি ছোট শৈলশিরা শনাক্ত করেছে গবেষণা দলটি। এ সব শৈলশিরার খোঁজ মিলেছে তিনশ ২০ কোটি থেকে তিনশ ৬০ কোটি বছর আগে গঠিত আগ্নেয়গিরির অঞ্চলে। সেই তুলনায় এ সব শৈলশিরার নিজেদেরই বয়স অনেক কম। এদের বয়স অনুমানের জন্য ‘ক্রেটার কাউন্টিং’ বা গর্ত গণনা নামের এক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। এ ধারণাটি বোঝা বেশ সহজ অর্থাৎ কোনো পৃষ্ঠ যত পুরানো হবে, তত বেশি গর্ত থাকবে। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশের প্রভাবের সংস্পর্শে এসেছে এটি। ‘এ সব শৈলশিরার আশপাশে থাকা বিভিন্ন গর্ত গণনা করে আমরা দেখতে পাই, কিছু শৈলশিরা এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন গর্ত কেটে ফেলছে। যার অর্থ এরা পরে গঠিত হয়েছিল। এ থেকে ইঙ্গিত মেলে, গত ১৬ কোটি বছরে এর টেকটোনিক কার্যকলাপ ঘটেছে,’ বলেছেন ক্লার্ক। নতুন আবিষ্কৃত এসব শৈলশিরা চাঁদের নিকটবর্তী বিভিন্ন শৈলশিরার মতোই অর্থাৎ উভয়ই একই শক্তির মাধ্যমে আকার পেয়েছে। চাঁদের ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ বোঝা ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চাঁদে যদি এখনো ভূমিকম্প হয় তবে নভোচারীরা কোথায় অবতরণ করবে, কোথায় ঘাঁটি স্থাপন করবে ও ভবিষ্যতে সেখানে ঘাঁটি কীভাবে তৈরি হবে তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এটি। ক্লার্ক বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতের চাঁদ অভিযানে এর ভূপৃষ্ঠের নীচে কী ঘটছে তা গবেষণার ভূগর্ভে অনুপ্রবেশকারী রাডারের মতো টুল অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’ গবেষকরা বলছেন, এ আবিষ্কার বলছে, চাঁদ ততটা প্রাণহীন নয় যতটা আমরা একসময় ভেবেছিলাম। পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি রয়ে গেছে আমাদের।