ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এনাম রাজুর কবিতা

কবিতার ছত্রে ছত্রে যে মানুষটি, মাটি ও মানুষের সন্ধানে ছুটে চলছেন, তিনি এনাম রাজু। শব্দের পর শব্দ গুছিয়ে, কবিতায় নানান বিষয়কে খুব সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। তার কবিতার ভাষা সহজ, সরল ও আটপৌরে। জীবনের ব্যথা-বেদনা, সুখ-দুঃখ ও সমাজের নানান অসঙ্গতি তার কবিতার বিশেষ চিত্র-
এনাম রাজুর কবিতা

বিশ্বভ্রমণে এসেছি

একটা দীর্ঘশ্বাস বলে দিয়েছে অন্যকিছু...

তোমার হাই তুলে কথা বলায়-

পাড় ভাঙা ঢেউয়ের শব্দ পেলাম

মাথার ওপরে শুরু হলো কাকের আর্তনাদ

আর মৌমাছিরা ভুলে গেলো ঘরে ফেরার পথ

তুমি কি এক আশ্চর্য জোরে নি:শ্বাস নিলে

যার ছোবলে নিভে গেল জোছনার চাঁদ

ডুবে গেল আশার প্রদীপ।

এভাবে দীর্ঘশ্বাসে লুকিয়ে রেখো না খেয়ালি আগুন

জন্মকাল থেকেই আমি বিচ্ছিন্ন হতে জানি

মায়ের পেট থেকে যেভাবে নিজের সুখের নেশায়

পৃথিবী ভ্রমণে এসেছি কয়েক বছর আগে।

কেমন করে ফুল দেব

অতপর মনে হলো সে এখন কোথায়?

ফুল বাগানে দেয় কি পানি আগের মতো,

খুব সকালে পার্কে যায় নিয়ম মেনে

আমায় খোঁজে- না চেনার নতুন ঢঙে!

পাখিরা কি ফিরছে ঘরে সন্ধ্যে হলে

নদীর পানি যাচ্ছে মিশে সাগরদেশে

ফুলের পাঁপড়ি সুবাস ছড়ায় ভালোবেসে

সেও কি দেখছে এসব হৃদয় খুলে

জানতে বড় ইচ্ছে করে জানলা ভেঙে রোদ্দুর এলে...

আমিও তাকে দেখতে পাগল সারাবেলা

রোদ-বাদলে দাঁড়িয়ে ছিলাম গভীর মনে

আজকে সে কোথায় আছে! কেমন আছে?

কেমন করে ফুল দেবো তার খোঁপায় বেঁধে।

একটি লাশ

বৃষ্টির সঙ্গে হেলেদুলে যাচ্ছে একটি লাশ

সমস্ত আহত জলকে বুকে ধারণ করে

গর্ভের সুখ হৃদয়ে ভরে।

বিজলির আলো আর আষাঢ়ের মেঘ দেখলেই সে পুলকিত হয়

সে জানে তার মতো অসংখ্য লাশ মৃত্যুর ঘুম থেকে জেগে উঠবে

যাদের পেটে মানুষের বসবাস ছিল

জলজের বেঁচে থাকার আনন্দ ছিল

ছিলো মাছরাঙা-বকের ধ্যানজ প্রত্যয়।

লাশের জেগে ওঠায় নড়েচড়ে বসেছে কাশফুল

ঘরের বাইরে এসেছে ব্যাঙ সমাজ

সবাই নৃত্য করছে, বৃষ্টিবিলাস হচ্ছে

লাশ আবার হেসেখেলে সমুদ্র স্নানে যাবে।

প্রাণহীন প্রাণের আকুতি

অতপর ঘুম ভেঙে জেগে উঠে দেখি

প্রাণ ত্যাগ করা আমি এক তাজা লাশ।

লাশ ঘিরে ঘুরছে কতিপয় কুকুর

স্বভাবতই যারা থাকে সদর দরজায়

চারপাশে নেই তাদের পুষ্পিত স্বজন

দেয়ালের ওপারে দেখে না গর্ভবতী চাঁদ।

যে লাশ নক্ষত্রের জেগে থাকা দেখেনি কখনো

তবুও ভোরের কোমর গলে আসা কিশোরি রোদ

অনুভূতিতে কামনার শিহরন জাগায়,

তার প্রাণহীন প্রাণের আকুতি দেখে

লেজ নাড়ে ইতর প্রাণ অহিংস ভালোবাসায়।

জিহ্বা একটি স্বাধীন সাপ

কথাস্ত্র সচল লাশের বুকে ছবি আঁকতে...

জিহ্বা রাতের বাঁধ

সমুদ্রের আগ্রাসনে তলিয়ে যাওয়া মৃতের দেহ,

বৃষ্টিকে বেঁধে রাখা গভীর কূয়ো,

এবং চোখ বন্ধ, জনতাকে গাধার মতো শান্ত করার

চৌকশ সন্ধির পাতা।

জিহ্বার সামনে প্রসারিত পৃথিবী

সে একটি স্বাধীন সাপের মতো বিষাক্ত

তা ফোঁটায় কালো গোলাপ

তা জমায় রক্তজবার ঘাম

ওড়ায় ঘুড়ির প্রণয়

প্রেমিকার চোখের বীর্য, প্রেমিকের অপ্রাপ্তি।

জিহ্বা এখনও ছুটছে স্বার্থান্ধ হয়ে

যখন এক নিরীহ লাশ সভ্যতার পাহারা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত