কবিতার জন্য আলাদা করে কোনো ভাবনার দরকার পড়ে না। আমি যা ভাবি সেটাই আমার কবিতা। না ভাবলে কি কবিতা হবে? সকালে খোলা আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ কিংবা রাস্তায় দৌড়ে চলা নেড়ি কুত্তাও আমার কবিতা। ঝাকা মাথায় নিয়ে যে মৎস্যজীবী মাছ ফেরি করে সেটাও তো আমার কবিতা। মানুষের ভাবনাই তো কবিতা- যদি তা সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায়। যাপিত জীবনই কবিতা- কবিতার জন্য আমার আলাদা করে হাঁটুমুড়ে বসতে হয় না। যে কবিতা লেখে বা যে প্রকৃত কবি, তার জন্য সময়-ক্ষণ নির্বাচন করে কবিতার বাণী নাজিল করতে হয় না। কারণ তার যাপনের মধ্যেই থাকে কবিতা। কবিতার সঙ্গে বসবাস করলে আপনা আপনিই কবিতা চলে আসে, এর জন্য আসন পেতে বসে থাকতে হয় না। তাই আগে কবিতার সঙ্গে ঘরবসতি গড়ে তুলতে হবে। তবেই না কবিতা। কচি ধানের মাথায় শিশির বিন্দুই যেন আমার কথামালা বা মণি-মানিকের চেয়ে মহামূল্যবান কবিতা। মেকি শব্দ বা ভ-ামি করে কখনও কবিতা হয় না।
প্রেম ও ক্ষুদা
দক্ষিণা হাওয়া যখন মিশে যায় বুকের মধ্যে- নিজের অজান্তে হু হু করে ওঠে মন।
ফিরে যাই ছেড়ে আসা প্রেমিকার কাছে- সন্ধ্যাপ্রদীপের সামান্য আলোয় যার দেখেছিলাম মুখ- সেই তুমি একাকি ওপারে- সাপের জিহ্বা চিরে দেখাও বিশ্বাসের ট্রেন দ্রুতগামী- আমি এপারে। রাতের গভীরে তুমিও দেখেছ নগরের রাস্তায় শত-সহস্র মুখোশের অন্তরালের মানুষ। যাদের সামনে বিছানো থাকে জীবনের প্রামাণ্য দলিল... পথের ছেলেরও জীবনধারাপাত হয়নি পড়া... জানে কী দক্ষিণা হওয়া? প্রেমিকা শুধু চেয়েছিল প্রেম- রাস্তার ছেলেটি চেয়েছিল দুর্ভিক্ষে খাবার। কার দিকে যাই? কাকে বাসি ভালো? কোনদিকে কোন বহমান হাওয়া- দক্ষিণ-উত্তর নাকি পূর্ব-পশ্চিম। সংশয় নেই বুকে- তবুও না পাওয়া বেদনায় উড়ে যায় পূর্বপুরুষের ক্ষুধার্ত কৈতর...
এখানেই শেষ হতে পারত- বেলেজোস্নায় মানুষহ ত্যার কাহিনি- ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারত প্রতিটি পিতা অথবা মাতা- ভেতরে জ্বলে মানুষ; তবু বিষণ্নচোখে তাকিয়ে থাকে প্রেমিকা...
মানুষ
কিছুক্ষণ আগেই আমাদের ছোট ছেলে নিঃশব্দে হাসতে শিখেছে
বলতে শিখেছে- মানুষ...
ফুটবল গড়াতে গড়াতে- নিজেকে চিনে নিয়েছে
কতটা গড়ালে পিঠ পাকাণ্ডপক্ত হয়।
আমি ওড়াউড়ি পছন্দ করি- ভেতরে ভেতরে পুষে রাখি
মৌন নদীর জন্মদাগ কিংবা জ্বলন্ত শরীরের হাড়-কঙ্কাল।
মৃত্যুর শিথানে মৃত্যু; অবিকল উচ্ছ্বাসে হাঁটে পথ...