ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কবিতার আলোয় ‘আমার দেখা নয়াচীন’

কাজী মিজানুর রহমান
কবিতার আলোয় ‘আমার দেখা নয়াচীন’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে রাজবন্দি থাকা অবস্থায় নয়াচীন ভ্রমণকে সহজ-সরল রসাত্মক এবং সাংগঠনিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে নয়াচীনের পিকিংয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব বাংলা থেকে তদানীন্তন পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু নয়াচীন ভ্রমণ করেন। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে বঙ্গবন্ধু শুধু ভ্রমণকাহিনিই তুলে ধরেননি; বরং সদ্য জন্ম নেওয়া একটি দেশ কীভাবে বৈষম্যহীনভাবে বিনির্মিত হচ্ছে, সেটিই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বর্ণনা করেছেন। যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বই অবলম্বনে আফরোজা নাইচ রিমা লিখিত কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন বইয়ে বর্ণনা করেছেন এভাবে- ‘শান্ত চীনে ১৯৫২-এর সেপ্টেম্বরের পিকিং শান্তি সম্মেলনে, স্পর্শ করে সহজ্র কণ্ঠে শান্তির সৈকতে, সন্ধি করো চীনের আওয়াজের সাথে’ আমরা শান্তি চাই ‘মানুষের মঙ্গল আর পাকিস্তানের স্বার্থে।’

নয়াচীন ভ্রমণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু মিয়ানমার, ব্যাংকক, রেঙ্গুন শহর ভ্রমণ করেন। সেই ভ্রমণের সার-কথন এই আমার দেখা নয়াচীন বই। যেটি আফরোজা নাইচ রিমা তার কাব্যগ্রন্থের ‘রেঙ্গুন শহরে ঘোরা’ কবিতায় তুলে ধরেন এভাবে- ‘রেঙ্গুন শহরে ঘোরাঘুরি, ক্লাব, বৌদ্ধদের প্যাগোডাসহ সকল সুন্দর জায়গায়। কেটে গেল রেঙ্গুন শহরে, বিকেল থেকে রাতে।’

শেখ মুজিবুর রহমান যখন ব্যাংকক হয়ে হংকং পৌঁছালেন তখনকার প্লেন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতোন। যেটি আফরোজা নাইচ রিমা কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন বইয়ের ‘মেঘের মধ্যে থাকে না হাওয়া’ কবিতায় তুলে ধরেছেন এভাবে-

‘প্লেন মেঘের মধ্য দিয়ে যায় যখন, অনেকের শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখন,

মেঘের মধ্যে থাকে না হাওয়া, এভাবেই ব্যাংকক থেকে হংকং-এ আসা-যাওয়া।’

চীনের অপরূপ রূপের বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সুন্দর শব্দ চয়নের অক্ষমতার কথা বারংবার তুলে ধরেছেন। আমার দেখা নয়াচীন বইয়ে ৬৬নং পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘আমি লেখক নই, অনুভব করতে পারি মাত্র, লেখার ভেতর দিয়া প্রকাশ করার ক্ষমতা খোদা আমাকে দেন নাই।’

কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন বইয়ের ‘আমি লেখক নই’ কবিতায় ফুটে উঠেছে এভাবে- ‘আমি লেখক নই, ভাষা নাই সৌন্দর্য বর্ণনা করতে, মহানুভবের শিক্ষা নিতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে।

কী অমায়িক আর সাবলীল কথা কলমের কালিতে! তব্ওু কেন বলতে গুছিয়ে পারো না লিখতে!’

আমার দেখা নয়াচীন বইয়ের ২৫নং পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু হংকংয়ের কোলন হোটেলে উঠে তার সুখানুভূতি বর্ণনা করেছেন এভাবে- ‘হংকংয়ে বহু দোকান দেখলাম সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুদের। আমাদের পেয়ে তারা খুব খুশি হলো। আমরাও তাদের সান্ত¡না দিলাম, বললাম, দেশ সকলের, আপনারা ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আপনাদের ঘরবাড়ি ফিরে পাবেন।’ আফরোজা নাইচ রিমা তার কবিতার আলোয় আমার দেখা নয়াচীন বইয়ে বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়াচীন বই অবলম্বনে ‘কোলন হোটেল’ কবিতায় লিখেছেন- ‘সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুদের হংকংয়ে দোকানি করতে,

খুশি হলো তারা তোমাদের দেখতে পেয়ে। আশায় বুক বাঁধে তারা, পাকিস্তানে ফিরে যেতে চায় যারা। রাত নয়টায় ফিরে এসে হোটেলে খেয়ে-দেয়ে আর ঘুমে ক্লান্তি দূর করলে।’

বাংলা ভ্রমণাঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়াচীন বইটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে ধরা দিয়েছে প্রভাবক বই হিসেবে। যেন যে কোনো বয়সের কাছে দেখা দিয়েছে একদিকে ভ্রমণ; অন্যদিকে সাহিত্যরসে ভরপুর প্রেমময় এক গল্পগাথা। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ভ্রমণবিষয়ক কাহিনির আঁকা ছবি যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি তার অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক চেতনায় শোষণহীন সমাজ গ্রহণ করতে সাহায্য করেছিল। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বই একদিকে যেমন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দলিল, অন্যদিকে আদর্শ রাজনৈতিক চিন্তার দর্পণও বলা চলে। এককথায়, সমাজ-রাষ্ট্র এবং একটি দেশের উন্নয়নের জন্য চিন্তা উদ্রেককারী একটি অবিনাশী বই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত