সমরেশ মজুমদারের আগে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ঔপন্যাসিকের জন্ম হয়েছে, পরেও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বহুমাত্রিক এক প্রতিভা পেয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো উপন্যাসেও তিনি সোনা ফলিয়েছেন। গোরার কথাই ধরা যাক, আম পাঠকের কাছে খুব বেশি জনপ্রিয় না হলেও উপন্যাস হিসেবে শক্তিশালী। রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’ জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছে উনার সব উপন্যাসকে। অমিত ও লাবণ্যর কথা আমরা কে না জানি। এমনকি কেতকীও আমাদের ড্রয়িংরুমেরই একজন।
রবীন্দ্রনাথের সময়ের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শ্রীকান্ত, রামের সুমতি, দেবদাস, পথের দাবি, দত্তার মতো পাঠকপ্রিয় উপন্যাসের জনয়িতা তিনি। দেবদাস উপন্যাসের জনপ্রিয়তা কিংবদন্তীর মতো। শরৎচন্দ্র জীবদ্দশায় যতটা জনপ্রিয় ছিলেন মৃত্যুর পর বেড়ে যায় আরও বেশি। এবং সেটা কয়েক দশক ধরে প্রবহমান ছিল। দেবদাসের জনপ্রিয়তার দিকটা উন্মীলিত হয় যখন আমরা দেখি দেবদাস কবিতা ও গানের জায়গাতেই নিজের অবস্থান উচ্চকিত করেছে। দেবদাস, পার্বতী, চন্দ্রমুখী, চুনীলালের মতো চরিত্র উপন্যাসের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের পড়শি হয়ে ওঠেন, হোন চিরচেনা আপনজন।
আমাদের আড্ডায়, সভা-সেমিনারে, অফিসে-আদালতে, বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওইসব চরিত্রেরা আমাদের সঙ্গ দেন- সঙ্গীও হয়ে ওঠেন। শরৎচন্দ্রের যখন দোর্দ- জনপ্রিয়তা তখন নিমাই ভট্টাচার্য হাজির। জনপ্রিয়তায় আলাদা এক জগৎ নির্মাণ করেন তিনি। ‘মেমসাহেব’ উপন্যাসের জনপ্রিয়তা পৌঁছে যায় মিথের পর্যায়ে। মেমসাহেব ও বাচ্চু আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। বাংলা সাহিত্য এ সবেরই ধারাবাহিকতায় পেয়েছেন পাঠকজয়ী অসংখ্য উপন্যাস ও তার স্রষ্টাকে। এক-একটা সময়কালে উনারা এককভাবে কিংবা সম্মিলিতভাবে পাঠকের মনে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন। পাঠককে মোহাবিষ্ট করে রেখেছেন বিষয় ও বিষয়ীতে। নাম বলে শেষ করা মুস্কিল। সবাইকে স্মরণ করাও সম্ভব নয়, কেননা তালিকাটা মোটেই ছোট নয়।
ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করা যেতে পারে। উনার ‘শাপমোচন’, ‘চিতা বহ্নিমান’ উপন্যাসে বুঁদ হয়েছেন যারা কেবল তারাই জানেন পাঠককে ধরে রাখা ও হৃদয়কে তোলপাড় করার মতো কী অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়েই তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন লেখালেখির জগতে। এ তালিকায় এসে যায়, যাযাবর, জরাসন্ধ, বিমল মিত্র, শংকর, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের নাম।
এঁদের কেউ কেউ তো সমরেশ মজুমদারের সমসাময়িক, একটু আগে পরেরও। সৃজন শৈলী দিয়ে উনারা যখন আলো ছড়াচ্ছেন পূর্ণিমার রাত্রির মতো। তখন সমরেশ মজুমদারও একের পর পাঠকপ্রিয় উপন্যাস রচে প্রমাণ করলেন পাঠকের চিত্তজয়ে তিনিও পারঙ্গম। কিংবা অন্যদের থেকে একটু কিংবা অনেকখানি বেশিই উনার পারঙ্গমতার দৌড়। কিছুটা কম বয়সেই পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নেয়ার পাশাপাশি জয় করে নিলেন মর্যাদাপূর্ণ একাধিক পুরস্কার। সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার পেয়েছিলেন সমসাময়িকদের তুলনায় একটু আগেভাগেই। যদিও এসব দিয়ে সমরেশ মজুমদারের প্রতিভা মূল্যায়ন করা সমীচীন নয় মোটেই।
উনাকে বুঝতে হলে ফিরে ফিরে যেতে হবে উনার বিষয় ও বিষয়ীতে। যেখানে বসবাস করেন উনার চরিত্ররা। যে জগৎ নির্মিত ও উন্মোচিত হয় তাদের জীবনযাপন ও পদচারণে। লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, সমরেশ মজুমদারের চেয়েও একাধিক জনপ্রিয় লেখক এসেছেন। সেটা উনার পূর্বে, সমসময়ে এবং পরেও। এটা প্রকৃতির বিধান। ঋতুবদলের মতো চিরন্তন। রবীন্দ্রনাথসহ পূর্বজ ও সমসাময়িক কয়েকজনের নামও উল্লিখিত হয়েছে। উনার পরেও এ ধারা অব্যাহত ছিল, এখনও আছে।
সমরেশ-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের কথা বললে বলতে হয় হুমায়ূন আহমদের কথা। হুমায়ূন উনার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও লেখালেখি শুরু করেছিলেন উনার একটু আগে, জনপ্রিয় হয়েছেন কিঞ্চিত পরে। হুমায়ূন দুই বাংলায় সমান প্রভাববিস্তারী না হলেও ভীষণরকম জনপ্রিয় ছিলেন এবং সেটা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছিল। আকস্মিক ও অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যাতে ভাটা পড়ে। হুমায়ূন মৃত্যুর আগে আগে এবং লেখালেখির শেষের দিকে দুই বাংলাতেই হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। তার বইগুলো দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিসির আলী থেকে শুভ্র, হিমু, রূপা চরিত্ররা হয়ে উঠেছিল অনেকেরই প্রিয়। বিশেষ করে হিমু চরিত্রের আবেদন তৈরি হয়েছিল অন্যরকম। তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ নিজেদের হিমু ভাবতে শুরু করেছিল। কেউ কেউ হয়ে উঠেছিলেন রূপা। যারা নিজেদের হিমু জ্ঞান করত হলুদ পাঞ্জাবি পরে, খালি পায়ে ঢাকা শহর ঘুরে আর চন্দ্র দর্শন করে প্রমাণ করতে চাইত বাস্তবিকই তারা হিমু হয়ে উঠেছেন।
যে কথা বলার জন্য এতসব প্রসঙ্গের অবতারণা সেটা হলো, সমরেশ মজুমদারের চরিত্রের শক্তি, মোহাবিষ্ট করার ক্ষমতা এবং একটা চরিত্রকে অন্যব্যক্তির মধ্যে চারিয়ে দেয়ার দুঁদে প্রতিভা। এক্ষেত্রে সমরেশের প্রতিভা ছিল রাজসিকতাপূর্ণ।
সমরেশের কালজয়ী সৃষ্টি হলো ট্রিলজি ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ ও ‘উত্তরাধিকার’। অবশ্য এর সঙ্গে ‘মৌষলপর্ব’ যুক্ত করে চতুর্ভুজ হিসেবে আখ্যা দেন অনেকেই। এ ছাড়া উনার বিখ্যাত রচনার মধ্যে রয়েছে দৌড়, সাতকাহন, আটকুঠুরি নয় দরজা, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, অনুরাগ, তেরো পার্বণ প্রভৃতি। কালবেলা স্রষ্টা হিসেবেই তিনি সবার কাছে অধিক প্রিয়। কালবেলার অমর দুই চরিত্র অনিমেষ ও মাধবীলতা। সমরেশ এ উপন্যাসের দুই চরিত্র সৃজনে জাদুকরের ভূমিকা পালন করেছিলেন। জাদুকর যেমন তার থলে থেকে যা কিছুই বের করেন তাতে থাকে তাক লাগিয়ে দেয়ার ক্ষমতা, মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়ার মোহন বাঁশির সুর। কালবেলা যারা পড়েছেন, তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, এ উপন্যাসের দুই চরিত্র কীভাবে তাদের ওপর ভর করেছে। কীভাবে অনিমেষ ও মাধবীলতা মায়ার মতো নিজের ওপরই আসন বিছিয়ে নিজেকেই গ্রাস করেছে।
সবাই নিজেকে অনিমেষ ও মাধবীলতা জ্ঞান করেছেন, মান্যতা দিয়েছেন এবং অনিমেষ ও মাধবীলতা হয়ে উঠেছেন। সে এক সময় গেছে বটে। যখন সবাই, বিশেষ করে যারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়তে ভালোবাসেন, অন্য বইয়ের খোঁজখবর রাখেন এবং এ পরিভ্রমণের মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠেছেন কিংবা পৌঁছে গেছেন সমরেশের বইয়ে, তারা সবাই এক একজন হয়ে উঠেছেন অনিমেষ কিংবা মাধবীলতা। বাংলা সাহিত্যে আর কোনো উপন্যাসের চরিত্র এভাবে পাঠককে ভর করতে পারিনি। আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতেও পারেননি। এ ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন সমরেশ মজুমদার। তখন যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তাদের একটা বড়ো অংশ অনিমেষ ও মাধবীলতার মায়ায় নিজেকে বেঁধে আনন্দিত হয়েছেন। প্রত্যেকের ছদ্মনাম হয়ে উঠেছে ওই দুই নাম। যারা ডায়েরি লিখছেন, সেখানে নিজেদের ওই নামে প্রকাশ করছেন। প্রেমিক-প্রেমিকা আড়ালে-আবডালে নিজেদের সম্বোধিত করছেন অনিমেষ ও মাধবীলতারূপে। তখন ছিল পত্রমিতালীর যুগ। সে সময় পত্রমিতারাও হয়েছিলেন এক একজন সাক্ষাৎ অনিমেষ কিংবা মাধবীলতা।
কালবেলা গত শতাব্দীর আটের দশকের শুরুতে প্রথমে কলকাতার একটা সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। এ প্রকাশনাকালে তার জনপ্রিয়তার আঁচ টের পাওয়া যায়। সেটা প্রবল তাপ ও চাপ নিয়ে আবির্ভূত হয় যখন বই আকারে প্রকাশিত হয়। কালবেলার যে ত্রিভুজ কিংবা চতুর্ভুজ, সেখানে মার্কসবাদী চেতনা মুখ্য হয়ে উঠেছে। পুরো ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির চালচিত্র হাজির রয়েছে। তখন পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতিতে সবেমাত্র কংগ্রেসকে হটিয়ে সিপিআই (এম) ক্ষমতাসীন হয়েছে। মার্কসবাদ, সমাজতন্ত্র সবই তখন তরুণদের মধ্যে ভীষণভাবে জাগরুক। সমরেশ এই সময়ের কথা বলছেন না ঠিকই। বলছেন আরও একদশক কিংবা তারও আগের কথা। কিন্তু সেসবকে তরুণরা এবং ওই সময়ের অন্যান্য বয়সিরাও দারুণভাবে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশে তখন চলছে স্বৈরতন্ত্র, সামরিক শাসন। সমাজ-রাষ্ট্রে তো বটেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দম বন্ধ করা পরিবেশ। মিটিং-মিছিল, সভা-সমিতি আর পুলিশের দাবড়ানি তখন যেন প্রতিদিনের বাস্তবতা। এই সময়ে যে তরুণ মিছিলে যাচ্ছে সে কালবেলার মধ্য দিয়ে নিজের স্বপ্নকে প্রাণ দেয়ার যেন একটা সুযোগ পাচ্ছে। হয়তো সেটা ইউটোপিয়া। কিন্তু সেটাই তখন চরমতম এক সত্যরূপে হাজির হচ্ছে তার সামনে। তার আগে ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ পড়ে যে তরুণ নিজেকে পাভেল ভেবেছিল, কালবেলা তাদের সামনে উন্মোচন করে নতুন দিগন্ত। অনিমেষ হয়ে মাধবীলতাকে প্রেমিকারূপে পাওয়ার অফুরান সম্ভাবনা।
কালবেলার এসব সুযোগ তাকে আপনার ক্ষেত্রটাকে বিকশিত হয়ে ওঠার সুবিধা দেয়। এ বাংলা, ও বাংলা দুই জায়গাতেই অনিমেষ ও মাধবীলতার ভেতর দিয়ে তরুণরা তো বটেই অন্যবয়সিরাও যেন আদর্শিক একটা জায়গা খুঁজে পায়। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ঘেরাটোপের বাইরে গিয়ে এ আদর্শ তাদের কাছে গুরুত্বও পায়। যে কারণে কালবেলার চরিত্রদ্বয় ফিকশন বা কল্পজগতের মানুষ হয়েও বাস্তবের মানুষের ওপর আছর করে। দুই বাংলার পাঠকই হয়তো তখন একটা আছরের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।
হয়তো সেটা ছিল আছরেরই কাল। একারণে আছরকে তারা স্বাগত জানাল, বরণ করে নিল সাদরে-গভীর উষ্ণতায়। ফিকশনের দুনিয়ায়, উপন্যাসের বাংলা মুলুকে এ ধারা বা নজির নতুন নয় মোটেই। সমরেশের আগে-পরেও যে হাওয়া ভাসিয়েছে পাঠককুলকে। কিন্তু সমরেশের ব্যতিক্রমিতা হলো, তার মতো করে কেউ বান ডাকতে পারিনি। বানের তোড়ে যেমন ভেসে যায় সব। কেবলই বানের হু হু শব্দ শোনা যায়। সমরেশেও তাই। সমরেশের অনিমেষ ও মাধবীলতা কেবল ভাসিয়ে নিয়ে গেল না। ভাসিয়ে থিতু হয়ে রইলেন। অন্যদেরও অনিমেষ ও মাধবীলতায় রূপদান করলেন। সমাজতন্ত্রের, মার্কসের, লেনিনের, মাওয়ের, নকশালের আদর্শিকতাকে শ্রেয়জ্ঞান করালেন, করালেনও। এতে দুঃখ আছে, বেদনা আছে, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খেরোখাতায় হাজার রকমের প্রশ্নও যেমন আছে, তেমনি স্বস্তিও আছে, জীবনকে গৌরবদান করার মতো উপাদান ও উপকরণও আছে। যাকে উপন্যাস হিসেবে নির্মাণে স্বার্থক হয়েছেন সমরেশ মজুমদার। এ কারণে তার চরিত্রেরা বাস্তবের মানুষ হয়ে উঠতে চেয়েছেন। এবং এ পর্যন্ত সমরেশ যেন রূপকথার সেই রাখাল বালক তিনি যা ছুঁয়ে দেন তাই সোনা হয়ে উঠেছে। আমাদের জানা নেই রূপকথার সেই সোনা শেষাবধি সোনারূপে থেকে যায় কি-না। শুধু এতটুকু জানা আছে, যারা অনিমেষ এবং মাধবীলতা হয়ে উঠতে চেয়েছিল- তারা শেষাবধি কিন্তু সেটাকে কনটিনিউ করলেন না, ব্যতিক্রম আছে কি-না জানা নেই। অনিমেষ-মাধবীলতারা শেষাবধি কেন অনিমেষ, মাধবীলতা থাকেননি, তার কারণ জীবনের দৌড় সেটাকে সমর্থন করে না। সমরেশ মজুমদাররা জীবনের রেখায় কালবেলার পরিভ্রমণকে সমাপ্তি দেন না। বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার-উন্যাসের ফারাক যেন জীবনের গদ্যকেই প্রস্ফুটিত করে, প্রকটরূপে।
সমরেশ মজুমদার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সূর্যসেনরা চট্টগ্রামে ব্রিটিশদের পরাজিত করেছিল, কয়েকদিন সেটা স্বাধীনও রেখেছিল। কিন্তু সেটাকে কনটিনিউ করতে পারেননি। জয়ী হওয়ার পর বসেছিল, কী করতে হবে জানা ছিল না। নকশালীদেরও জানা ছিল না, জয় হলে কী হবে, কীভাবে চলবে? এই বোঝাবুঝির চিত্রায়ণ অনিমেষ-মাধবীলতাতেও হাজির ছিল কী? এ কারণে যারা অনিমেষ-মাধবীলতা হতে চেয়েছিল, হয়েওছিল; কিন্তু তাদের কেউই অনিমষ, মাধবীলতার জীবনযাপন করেননি। উপন্যাসের জীবনযাপন করার কথাও নয়। কেননা, উপন্যাস শেষাবধি উপন্যাসই। কিন্তু তারা তো উপন্যাসের জীবনই যাপন করতে চেয়েছিলেন, সেটা পারলেন না, নিজের দোষ ও সীমাবদ্ধতায়, নাকি রচয়িতার বোঝাবুঝির সংকট ও দ্বিধায়?