ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফুলের পাশে পক্ষী আসে

গাজী মনুছর আজিজ
ফুলের পাশে পক্ষী আসে

সাধারণত একেক পাখি একেক জায়গায় থাকতে বা খাবার খেতে পছন্দ করে। কেউ বনে, কেই পানিতে, কেউ হাওরে, আবার কেউ কাদাচরে। আমাদের আশপাশের গাছ-গাছালিতেও অনেক পাখি দেখা যায়। তবে এর মধ্যে কিছু পাখি আছে, যারা ফুলের পাশে বসতে বা ফুল পছন্দ করে। সেসব পাখি নিয়েই পাখিবিশারদ ইনাম আল হকের নতুন আরেকটি বই ‘ফুলের পাশে পক্ষী আসে’। এটি মূলত পাখিবিষয়ক শিশুতোষ বই। যেসব শিশু শুধু পড়তে শিখছে বা ছড়া পড়তে শুরু করেছে, তাদের জন্যই এ বই।

পাখির পাশাপাশি ফুলের কথাও রয়েছে বইটিতে। আর ফুল-পাখি পছন্দ করে না, এমন শিশু খুবই কমই আছে। অর্থাৎ, একেবারে শিশুদেরকেও পাখি সম্পর্কে জানাতে বইটি লেখা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব পাখি ফুলের পাশে বসে বা ফুল পছন্দ করে, সেসব ফুল-পাখি নিয়েই বইটির কথা। এ ছাড়া, শিশুরা মূলত ছড়ার ছন্দে পড়তে বা শিখতে পছন্দ করে, সেজন্য এ বইটি ছড়ার ছন্দেই লেখা; যাতে শিশুরা খুবই সহজে পাখিটি সম্পর্কে জানতে পারে, বা কোন পাখি কোন ফুলের পাশে বসে বা কোন ফুল পছন্দ করে, সে সম্পর্কে সহজে জানতে পারবে।

পাখিবিষয়ক লেখালেখিতে ইনাম আল হকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অতি সহজ ভাষায় ও অল্প কথায় পাখি সম্পর্কে মানুষকে জানানো। এবারের বইটিও সেরকভাবেই লেখা। অর্থাৎ ছোট ছোট বাক্যে ও অল্প কথায় বলা হয়েছে ফুল-পাখি সম্পর্কে। বিশেষ করে ছড়ার ছন্দে বলা হয়েছে। মাত্র ছয়টি অধ্যায় রয়েছে বইটিতে। এগুলো হলো- ফুলের জন্য ভালোবাসা, পক্ষী ও পলাশফুল, শিমুলফুল ও পাখি, মান্দারফুলের পাখি, বুনোফুলের পাখিরা, জলবনের ফুল ও পাখি।

ফুলের জন্য ভালোবাসা অধ্যায়ের ‘ফুলে ভরে মন ও পেট’ শিরোনামের একটি ছড়া হলো-

ফুলের পাশে লুকানো যায়;

ফুলটা আবার খাওয়া যায়।

অনেক পাখিই পাপড়ি খায়।

অনেকে ফুলের পরাগ চায়।

ফুলের মধু খেতে চায় না

এমন পাখি পাওয়াই দায়।

ফুলের মধু যে পতঙ্গে খায়

তাদের খেতে পাখিরা ধায়।

এ অধ্যায়ে ফুল-পাখি নিয়ে আরও মজার লেখা আছে। এরপর পক্ষী ও পলাশফুল অধ্যায়ে কাঠশালিক, ঝুটি-শালিক, মৌটুসি, মদন-টিয়া পাখির কথা বলা হয়েছে। যেমন- ‘পলাশ ফুলে দলে-দলে কাঠশালিক আসে। ফুলের মধুতে পোকা আসে; পোকা খেতে পাখি আসে।’ অন্য লেখাগুলোও মজার ছন্দের।

শিমুলফুল ও পাখি অধ্যায়ে বাংলা-কাঠঠোকরা, ধনেশ, কেশরী-ফিঙে, বাংলা-বুলবুল, পাকড়া-শালিক, নীলদাড়ি-সুইচোরা ও বেনেবউ পাখির কথা বলা হয়েছে। এ অধ্যায়ের লেখাগুলোও সুন্দর। যেমন- ‘শিমুল ফুলের মধু খেয়ে কালামাথা-বেনেবউ উড়ে পালায়। পোকা ধরার অপেক্ষায় বসে থাকা ধৈর্য তার নেই।’

মান্দারফুলের পাখি অধ্যায়ে আছে ফুলমাথা-টিয়া, লটকন-টিয়া, ফিঙে, ভাত-শালিক, সিপাহি-বুলবুল, হরবোলা ও ধলাচোখ পাখির কথা। যেমন- ‘মান্দার ফুলের মধু খেয়ে হরবোলা পাখি নির্বাক হয়ে যায়।’

বুনোফুলের পাখিরা অধ্যায়ে আছে পাপিয়া, সবুজ-সুইচোরা, নীলকান্ত, পাকরা-মাছরাঙা, লালমাথা-টিয়া, কাঠকুড়ালি, ছাতারে, সাহেলি, ঘাসপাখি, প্রিনা, লাটোরা, বেগুনিকোমর-মৌটুসি, সিদুরে-মৌটুসি ও বেগুনি-মৌটুসি, মাকড়মার, ফুলঝুরি, ছোটন ও টুনটুনি পাখির কথা। যেমন- ‘ভাটফুলের আড়ালে বসে ধলামাথা-ছোটন গান গায়।’ অন্যলেখাতেও আছে মজার তথ্য।

জলবনের ফুল ও পাখি অধ্যায়ে আছে, ধলাবুক-মাছরাঙা, ডাহুক, পানমুরগি, কানিবক, বগলা, ধুপনি-বক ও দলপিপি পাখির কথা। যেমন- ‘স্বাস্থ্যাবান বিলের শাপলা-দলে সানন্দে চলে দলপিপি।’

সব অধ্যায়ের সব লেখাই ছোট ছোট বাক্যে সাজানো। বলা যায় অনেকটা ছন্দনির্ভর। ফলে শিশুরা খুব সহজেই বুঝতে পারবে কোন পাখি কোন ফুলে বসে, আর কোন পাখি কেমন। ৫৬ পৃষ্ঠার এ বইটি পুরোটাই রঙিন। প্রতিটি পৃষ্ঠাতেই আছে ফুল ও পাখির ছবি। এটি প্রকাশ করেছে ছায়াবীথি। দাম ৫০০ টাকা।

পাখিবিশারদ ইনাম আল হক জীবনের বড় একটা সময় ব্যয় করেছেন পাখি সম্পর্কে জানতে। ঘুরেছেন দেশ-বিদেশের হাওর-নদী, পাহাড়-পর্বত, এন্টার্কটিকা ও উত্তর মেরু। এদেশে পাখিশুমারি, পাখির পায়ে রিং পরানো, পাখির পাখায় স্যাটেলাইট বসানো, পাখিমেলা, পাখির আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ পাখিবিষয়ক নানা গবেষণা তার উদ্যোগে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পাশাপাশি পাখি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে নিয়মিত লেখালিখি করেন। আর তার বড় চেষ্টা থাকে অল্প কথায় সহজ ভাষায় পাখি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে। এরই মধ্যে তার অনেকগুলো বই বের হয়েছে। এর মধ্যে বড়দের জন্য যেমন লিখেছেন, তেমনি ছোটদের জন্যও লিখেছেন। প্রতিটি বই সুখপাঠ্য। মূলত গল্পের ঢঙে তিনি পাখির কথা মানুষকে জানাতে পছন্দ করেন। ফলে তার লেখা ছোট-বড় সবাই যেমন বুঝেন, তেমনি পছন্দও করেন। তার বইগুলোর নামও সুন্দর। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা তার বইগুলোর মধ্যে আছে ‘পাখিদের সুখদুখের কথা’; ‘বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর মতো কত পাখি’; ‘সোনার পালক দিয়ে তিন কন্যার বিয়ে’ ও ‘রূপসী বাংলার পাখি’। এ ছাড়া ‘পাখিদেরও আছে নাকি মন’ বইটি ছোট-বড় সবার জন্যই সুখপাঠ্য। বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইডও লিখেছেন তিনি। তার লেখা ও সম্পাদনায় আছে বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষ (পাখি)। তার একটি চমৎকার ইংরেজি বইও আছে- FEATHERED SPLENDOURS BIRDS of Bangladesh। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’; ‘সিটি ব্যাংক-তরুপল্লব দ্বিজেন শর্মা পুরস্কার ২০২১’; সরকারের ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২’। এ ছাড়া প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত