গল্প

অনাহূত সময়ের গল্প

সোহেল বীর

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বেশ কিছুক্ষণ মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আলিম সাহেব অফিসের গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলেন। দোকানদারের পরিচিত কাস্টমার না হলেও মাঝেমধ্যে এই দোকানে বসেন তিনি। একটা ড্রাইকেক খাওয়া শেষে চা হাতে নিলেন। চায়ের সঙ্গে সিগারেট ধরাতে গিয়ে আর ধরালেন না। লকডাউনের পুরো সময়টা বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে থাকাতে পুরোনো এই বদ-অভ্যাসটা ছাড়তে পেরেছেন খুব ভালোভাবেই। তবে বসের ঝাড়ি খাওয়া পরবর্তী ক্ষোভ সিগারেটের আগুনে নেভাতে পারে বলে একসময় মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু আজ আর সিগারেটে মুখ দিলেন না। ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে বস অনেক বেশি ‘ঝাড়ি’ দিয়েছেন। এ যেন লঘু পাপে গুরু দণ্ড! তবে সময়মতো সামিনা আসাতে একটু রক্ষা পেয়েছেন তিনি। সামিনা অনুজ সহকর্মী হলেও বসকে বেশ কব্জা করে রেখেছে। লকডাউনের দীর্ঘ ছুটির পর অফিস খোলার তিন দিনের মাথায় বারোজনকে ছাঁটাই করা হয়। মালিকপক্ষ থেকে বসের কাছে নামের তালিকা চাওয়া হয় যাদেরকে না রাখলেও অফিস চালানো যাবে। বারোজনকে ছাঁটাই করার পর থেকে অফিসে যে থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা এখনও বিরাজমান। শোনা যাচ্ছে, আবারও লকডাউনে যেতে পারে দেশ। প্রথম লকডাউনের ঘোষণা আসার আগেই যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল তা কি বলে শেষ করা যাবে? মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যাভলনজাতীয় দ্রব্য মুহূর্তে বাজার থেকে আউট! বহুকষ্টে এক লিটার স্যাভলন আর কিছু মাস্ক কিনতে পেরেছিলেন। অফিসের অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়। অফিসে একবক্স মাস্ক দেওয়া হতো। সেখান থেকে সবাই এক পিস করে পেতেন। অফিসের এক পিস মাস্ক আর ব্যক্তিগত মাস্ক দিয়ে মাস পার করতে হয়েছে সবার। একটা করে মাস্ক দেওয়ার পর অবশিষ্ট মাস্ক থাকত বসের নিয়ন্ত্রণে। সামিনা হলো বসের খুব ঘনিষ্ঠ- ভাবতে ভাবতে এতক্ষণে চা শেষ করলেন। নির্ভাবনায় থাকতে চাইলেই কি আর থাকা যায়! ভাবনা আলিম সাহেবের পিছু ছাড়ে না। আবার যদি সত্যিই লকডাউন দেওয়া হয়! -এক ধরনের আতঙ্ক এসে ভর করে চোখেমুখে।

একটা ফরমে আজ ভুল করে পরের দিনের তারিখ লিখে ফেলেছেন। চাইলে ফরমটা নতুন করে লিখে আনা যেত, তেমনটিই চাইছিলেন আলিম সাহেব। কিন্তু বসের উচ্চবাক্য আর বকাবকিতে নতুন করে লিখে আনার কথাটা বলতে পারেননি। ছোটখাটো ঝাড়ি প্রতিদিন সবারই খাওয়া লাগে। কিন্তু আজকের কথাগুলো কোনোভাবেই হজম করতে পারছেন না। কানের কাছে অবিরাম বাজছে- এক লাত্থি দিয়ে বের করে দেব। চাকরিজীবনের অনেকটা সময় পার হয়েছে। এর আগে দুইটা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, অনেক বসের অধীনে কাজ করেছেন। কিন্তু এভাবে কেউ কখনও আঘাত করে কথা বলেননি।

চাকরি পরিবর্তনের কথা মাথায় এলেও এ মুহূর্তে ভাবনাটা পাত্তা দেওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া লকডাউন পরবর্তী এই সময়টা অনেক কঠিন। নতুন কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই। বরং কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই ভেবে আপাতত সবকিছু সহ্য করে নিচ্ছেন তা নিজেও জানেন। আরও এককাপ চা দিতে বললেন দোকানদারকে। এমন সময় আলিম সাহেবের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে এলো- ওয়াইফ। নিশ্চয় কিছু শেষ হয়ে গেছে, কিনে বাসায় যেতে হবে। বিক্ষিপ্ত মনটা আরও একটু বিরক্তির উদ্রেগ করল। ফোনটা ধরবেন না বলে ভাবলেন। আবারও ফোন। কোনো কিছু না ভেবেই এবার রিসিভ করলেন। কেননা, ফোন রিসিভ না করলে টেনশন বাড়তে পারে।

- হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম।

- ওয়াআলাইকুমুস সালাম। কোথায় তুমি?

- এই তো আছি, চায়ের দোকানে।

- এখনও চায়ের দোকানে! আমি ভাবছি জ্যামেট্যামে আছ।

- না, আজ তেমন জ্যাম নেই। ঠিক আছে, চলে আসব দ্রুত।

- আচ্ছা, বলছিলাম যে, তোমার কাছে কি টাকা আছে?

- কেন?

- না মানে, চাল আনা দরকার। তাছাড়া আটাও শেষ।

- কি! সেদিন না... নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললেন, আচ্ছা দেখি। টেনশন করো না।

লকডাউন পরবর্তী সময়ে সরকার নির্ধারিত অফিসের সময়সীমা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ বেতনও কমিয়েছে সমানুপাতিক হারে। কিন্তু খরচটা আগের মতো থাকায় মাস যেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। দিন-রাতকে পৃথিবীর দীর্ঘতম দিন আর রাত মনে হয়, শেষই হতে চায় না যেন। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুঁ দিলেন।

বাবা-মা গ্রামে থাকেন। কদিন হলো খোঁজখবর নিতে পারেন না। মায়ের সঙ্গে কথা বললে ভেতরের অস্থিরতা কিছুটা কমে। বাড়ির নম্বরে কল দিলেন। অপর প্রান্তে মায়ের কণ্ঠ। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। পাশ থেকে কাশির শব্দ ভেসে এলো।

- আব্বার শরীরডা কি বেশি খারাপ?

- না আছে মুটামুটি। তোর শরীরডা কেমন আছে বাবা? দুুপুরে খাইছিস তো, বউমা, দাদুমণিরা সব কেমন আছে? খবরে দেখি শহরে করোনা বেশি, মানুষও মরছে খুব। সাবধানে থাকিস বাবা। একনাগাড়ে কথাগুলো শেষ করেন আলিম সাহেবের মা বদরুন্নেছা।

- সবাই ভালো আছে, মা। করোনা এখন কমছে। টেনশন করো না- মাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। আবারও ফোনে বাবার কাশির শব্দ শুনতে পান। ‘মা, আব্বার ওষুধ কি আছে, নাকি শেষ?’ -বিনয়ের সঙ্গে জানতে চান। ‘না, মানে কচ্ছিলাম কি, তোর আব্বার ওষুধটা পরশুদিন শ্যাষ হয়ে গিয়েছে। তাই কাশিডা আবার...। মায়ের কথা কেড়ে নিয়ে আলিম সাহেব বলেন, ‘ফোন দাওনি যে, তাছাড়া ইয়াকুব চাচার দোকান থেকে ওষুধ আনাতি পারতে!’

‘বেশ কিছু টাকা দেনা পড়ে গিয়েছে দোকানে, তাই তোর আব্বা লজ্জায় যাননি।’ -মায়ের চিরপরিচিত কণ্ঠস্বর।

‘সমস্যা নেই, তুমি এখনই ওষুধ আনার ব্যবস্থা করো। আমি ইয়াকুব চাচাকে আগেই বলে রেখেছি সামনের মাসে এসে সব টাকা দিয়ে দেব। যখন যা লাগবে নিও।

- ঠিক আছে বাবা, তোর শরীরের যত্ন নিস। তাইলে রাখলাম, ভালো থাকিস বাবা।

- আচ্ছা মা, তোমরাও ভালো থাকো। দুয়া কইরো।

অনেকদিন বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। ইচ্ছে ছিল লকডাউনের মধ্যে গ্রামে গিয়ে থাকবেন। কিন্তু আগে থেকে কোনোকিছু জানতে না-পারাই বন্দি হয়ে পড়েন। গ্রামে যাওয়া আর হয়নি সে সময়। একসময় গ্রামে বাবার আড়ত ছিল। আড়তে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ব্যবসা ছিল। বাবার বয়সের ভারে সে আড়ত আরও আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া আলিম সাহেব চাননি, বাবা এই বয়সে কাজ করুক। বাবা ব্যবসা নিয়ে থাকতেন, একমাত্র ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে গেছেন স্বল্পশিক্ষিত মায়ের কড়া শাসন আর নিবিড় পর্যবেক্ষণ। তিন মেয়ের পরে ছেলের মুখ দেখেন তারা। মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে হলেও ছেলেকে ঠিকই উচ্চশিক্ষায় নিয়ে গেছেন বদরুন্নেছা।

আলিম সাহেবের ফোনটা আরও একবার বেজে উঠল। আবার হয়তো স্ত্রী ফোন দিয়েছেন কোনোকিছু কেনার জন্য- এই ভেবে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালেন। মুহূর্তে হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম। লকডাউনের সময় দু’মাস বেতন বন্ধ থাকায় বেশ কিছু টাকা ধার করেছিলেন। ভেবেছিলেন অফিসের কারোর কাছ থেকে ধার নিয়ে আরিফ সাহেবের টাকাটা ফেরত দেবেন। কিন্তু বসের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারে তা আর হয়নি। টাকাটার কথা বেমালুম ভুলে বসে আছেন। আজ তো আর কোনোভাবেই টাকাটার সুরাহা করা সম্ভব নয়। অফিস শেষে সবাই চলে গেছেন। ফোন না ধরে বরং ফোনটা বন্ধ করে রাখলে সুবিধা। কাল টাকাটা ম্যানেজ করে তবেই ফোন অন করবেন। সব ধরনের নেটওয়ার্কের বাইরে আলিম সাহেব। স্ত্রী, সন্তান, পাওনাদার, বস- সবার থেকে দূরে। চাইলেই এই মুহূর্তে কেউ তাকে খুঁজে পাবে না। অল্প সময়ের জন্য হলেও নিজের কাছে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এলো। মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনটাকে ‘স্পাই’ মনে হয়, যেন সারাক্ষণ সেটা তাকে নজরদারিতে রাখে। নিজের বলে কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকে না। খেয়ে, ঘুমিয়ে এমনকি বাথরুমেও যেন স্বস্তি নেই। ফোন বেজে উঠলেই সবকিছু বাদ দিয়ে কল ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়া লাগে। যাপিত জীবন কি ব্যহত হয় না ফোনের কারণে! এক সময় কি ফোন ছাড়া মানুষের চলেনি? কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব নয় বলেই বাড়তি একটা ঝামেলা সঙ্গে করে নিয়ে বেড়াতে হয়। দিনদিন মানুষের ফোনের প্রতি যেমন নির্ভরশীলতা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে আসক্তিও। বিশেষজ্ঞরা সবাইকে ফোনাসক্তির বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। ফোনের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি ও রেডিয়েশনের কারণে শরীর ঝুঁকিতে পড়ছে। এ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে বিষয়ে ভাবাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই যে-কারণে হোক ফোনটা বন্ধ থাকলে আলিম সাহেব সেই সময়টাকে খুব বেশি উপভোগ করেন।

দ্বিতীয় কাপ চা খেতে খেতে চোখ পড়ল দোকানের শেলফে। বিস্কুট, চানাচুর, কেকের পাশাপাশি কিছু বই সাজানো আছে। চায়ের দোকানে বই- বিষয়টা বিরল। তবে খুলনার সেই সেলুনের মালিক মিলন শীলের বই রাখার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই এখন দু-একটা বই, সঙ্গে স্বল্পমূল্যের দৈনিক পত্রিকা রাখেন দোকানে। এতে দোকানে আগত কাস্টমারদের আড্ডাটা জমে ওঠে, আরও বেশি প্রাণবন্ত হয় দোকানের পরিবেশ। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্রসহ নানা লেখকের ৩শ’র মতো বই সেলুনের শেলফে দেখেই বোঝা যায় কতটা বইপ্রিয় একটি সেলুনের মালিক। তবে সেই সেলুনের মতো অত বই না থাকলেও চায়ের দোকানে বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু ক্ল্যাসিক বই সাজানো আছে। কবিগুরুর গীতাঞ্জলি, গল্পগুচ্ছ ও শেষের কবিতা, নজরুলের সঞ্চিতা ও শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, শরৎচন্দ্রের দেবদাস, মানিকের পুতুল নাচের ইতিকথা, জীবনানন্দের বনলতা সেনসহ আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ও আরও কিছু লেখকের বই এক কোনায় থরে থরে সাজানো। প্রিয় সব লেখকের প্রিয় বইগুলোর নাম দেখেও যেন অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করে। বইপড়ুয়াদের খুুব বেশি আপন মনে হয়। বাসার শেলফে এখনও কতশত বই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এক সময়ের ভীষণ বইপাগল আলিম সাহেব কতদিন যে বইগুলোয় চোখ বুলাতে পারেন না তা তিনিও ভুলে গেছেন। আগের মতো হলে এখনই দোকান থেকে একটা বই নিয়ে সমাগত বিকেলটা মুহূর্তে কাটিয়ে দিতেন। ‘বইয়ের মতো এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই।’ -আমেরিকার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের এই কথাগুলো বইপড়াতে দারুণভাবে কাজে লেগেছিল। স্কুল ফাঁকি দিয়ে অলস দুপুরে বকুলতলায় ফেলুদা পড়া, পাঠ্যবইয়ের পাতার ফাঁকে রেখে তিন গোয়েন্দা পড়ার সে কি মজা; আবার পাঠ্যবই না পড়ে ‘আবোল-তাবোল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়তে গিয়ে মায়ের কাছে ধরা পড়ে মাইর খাওয়া- বইপড়া নিয়ে কতশত তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা তা কি বলে শেষ করা যাবে! এখনও মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে আগের মতো বইয়ের সাগরে হারিয়ে যেতে। কিন্তু সেই সুযোগ কই? বাস্তবতার কঠিন জালে আবদ্ধ হয়ে তাড়াখাওয়া মাছের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে সময় পেরিয়ে যায়। যান্ত্রিকতার দহনে পুড়িয়ে এই নগর সবাইকে একটি করে যন্ত্রমানব বানিয়ে ছাড়ে। কবিগুরুর মতো খুব করে বলতে ইচ্ছে করে, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।’ তবু এই নগরের কাছেই বারবার ফিরে আসতে হয় জীবন ও জীবিকার জন্য। আলিম সাহেবের কাছে জীবনটাকে মাঝে মাঝে হালভাঙা জাহাজের মতো মনে হয়। এই বুঝি সাগরের অতলে ডুবে গেল! সহসায় প্রখ্যাত লেবানিজ কবি কাহলিল জিবরানের প্রফেটের একটি কথা মনে পড়ে যায়, ‘একটা হালভাঙা জাহাজ বিপজ্জনক দ্বীপের মধ্যে উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ালেও সাগরের অতলে ডোবে না।’ ঠিক জীবনজাহাজও যেন না ডুবে ভেসে থাকে নতুন কোনো ভোর কিংবা সূর্যের আলো দেখা আগামীর প্রত্যাশায়। সুখস্মৃতিতে হারিয়ে যাওয়া আলিম সাহেব যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। চোখে পড়ল মানুষের ছোটাছুটি। সবাই দৌড়ে সামনের দিকে যাচ্ছে। দূরে চোখ পড়তেই দেখলেন একটা ট্রাক এসে দাঁড়াল। ভালো করে খেয়াল করলেন- টিসিবির পণ্য বিক্রির গাড়ি। বাজারদরের চেয়ে কমমূল্যে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের অন্যতম ভরসাস্থল। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আজ আবার টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হচ্ছে। মানিব্যাগ বের করে চায়ের দোকানের টাকা পরিশোধ করতে করতে টাকা থাকতে পারে এমন সম্ভাব্য সবগুলো ভাজে চোখ বুলিয়ে নিলেন। চাল আর আটার কথা ঠিকই মনে আছে। আটা না হলেও চালের ব্যবস্থা করে তবেই বাসায় ফিরতে হবে। মানিব্যাগের ওজন খুব বেশি সুবিধার নয়। তাছাড়া বাকির টাকা পরিশোধ না করে মোড়ের দোকান থেকে নতুন করে বাকিতে জিনিস কেনার উপায়ও নেই। সামনের মাসের তিন তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সেটা ভালো করেই জানেন। অগত্যা মনে পড়ল পুরোনো দৌড়বিদ্যার কথা। ভাবলেন, বহুদিন পর পুরোনো এই বিদ্যাটা কাজে লাগানোর সময় এসেছে। এক সময়ের তুখোড় দৌড়বিদ স্যুট-টাই পরা জনাব আলিমুল হক করপোরেট ব্যাগ হাতে সবার আগে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে সামনের দিকে পা বাড়ালেন। অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে সামনে দৌড়ানো দেখে পিছন থেকে কে যেন তার নাম ধরে ডাক দিতে থাকে। কণ্ঠস্বর পরিচিত মনে হলেও আলিম সাহেবের তা শোনার সময় নেই, তিনি দুর্বার গতিতে ছুটে চলেন সামনের দিকে।