কবি ও কবিতা
রুবাইদা গুলশান
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
[কবিতা ভাবনা : আমি কি কবি? কিছু লিখলেই কি কবিতা হয়ে যায়? সত্যিই কি কবি হওয়া এত সহজ বিষয়? কবিতাই বা কী? সহজ অথচ বেশ জটিল এই প্রশ্নগুলো আমার কাছে কবিতাকে মনে হয় স্রোতের মতো। আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ। মনের মধ্যে উথাল-পাতাল করা ভাবনাগুলো যখন এক জায়গায় এসে ভিড় করে হৃদয়ের কিনারায় স্রোতের মতো আছড়ে পড়ে, তখন কবিতারা আসে।
কবিতা তো তা-ই যা আমার মনের গোপন ভাবনাগুলোকে প্রাণ দেয়। প্রণয়ের যে সুর, অভিমান, অভিযোগ, প্রেম, সমাজ সভ্যতার অনাচার, আক্রোশ ক্ষোভ কিংবা ভালোবাসার যে কথাগুলো বলা যায় না অন্য কোনোভাবে, তখনই তো কবিতা আসে পঙ্ক্তির ডালা সাজিয়ে। আমার কাছে কবিতাকে সুগন্ধির মতো লাগে। একটা সুন্দর কবিতার রেশ আমার হৃদয়ে লেগে থাকে। এই যে ভালোলাগার আবেশ, তা কিন্তু নিঃসন্দেহে মোহনীয়। আবেশীয় এই ব্যাপারটা কবিতা ছাড়া আর অন্য কিছুতে আমি বোধ করি না।]
নক্ষত্রের সমদূরত্ব
বলো দেখি, কেমন চলছে এইসব দিনরাত্রি!
কেটে যাচ্ছে জীবন বহমান স্রোতের ন্যায়!
তুমি বুঝি বড্ড অবুঝ এখন কুঞ্জলতায়।
মায়ার যে চোখ তা বুঝি ছাড়িয়েছে সংশয়।
তারপর অনেকদিন কেটে গেলো নির্ভার স্মৃতির কণায় কণায়।
একজীবনে আমি কে তা তো কেউ মনে রাখেনি!
তুমিই বলো মানুষ কি পারে এত সহজে সব বাঁধাই করে রাখতে?
একটি প্রিয়মুখ, একটি নির্ভেজাল হাসি আর একটি বিকেল!
মনে পড়ে একটি শালিক ঘরের ভেতর
কী তীব্র আকুতি নিয়ে উড়ছে এদিক আর সেদিক;
ভয় পেয়েছে যদি মানুষেরা ওকে ধরে বসে।
ওর মতো ভয় তুমিও পেয়েছিলে।
ও চেয়েছিল মুক্তি আর তুমি চেয়েছিলে নক্ষত্রের মতো দূরত্ব।
সহজ হয়ে থাকে না কিছুই।
তুমি তোমার মতো করে উড়ে চলেছ নীল আকাশে
আর আমি মাথা উঁচু করে তোমাকে দেখেছি।
আরও দূরে যাও তুমি,
নক্ষত্রের সমদূরত্ব নিয়ে তুমি ভালো থেকো।
আমি ভালো আছি, ভালোবাসা জেনো।
অপেক্ষা
ভেজা তীরে আমার হাতের মাঝে বালি বয়ে যায়,
বয়ে যায় ডুবে যাওয়া কারো কিছু শস্য।
বিস্তীর্ণ সমুদ্রের সামনে, সোনালি গোধূলীর দিকে মগ্ন দৃষ্টি
আমাকে আলতো করে ভাসিয়ে নিয়ে চলে হৃদয়ের সুখের কাছে
যেখানে রঙিন প্রজাপতি ডানা মেলে, পদ্মফুল খুলে দেয় তার পাঁপড়ি,
সূর্য সন্ধ্যায় দেয় তার গোপন কথা, তখন ভাবি এখন আমি নিশ্চিত
অন্য জীবনে আমি তোমাকে ভালোবেসেছি
আর এই জীবনে এখন পর্যন্ত
আমি শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম
বাড়িয়ে হাত কিংবা প্রার্থনা
গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাড়িয়ে দিই হাত;
ছুঁয়ে দেখতে পারি না আকাশ, দেখতে পারি না মেঘ!
তুমুল হলুদ রঙে আলোকিত অন্যঘর;
বুকের ভেতর বাজে হাহাকারের চরাচর!
বাবাকে ফোন করে বলি, শৈশব কি অনেক দূরে ফেলে এসেছি!
বাবা শোনান, জীবনের গান!
তারপর, ভুলে যাওয়া কোন সুরের প্রতি আকুল আহ্বানে
তুমি কিংবা অন্যকেউ ফিসফিস করে কবিতা বলে যায়!
কান পেতে শুনতে গিয়ে দেখি, ক্লান্ত শহরে
স্মৃতিতে জড়ানো কেবল একটি হাসিমুখ!
গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাড়িয়ে দিই হাত;
চারদিকে বাতাসের স্পর্শ ছাড়া কেবলই শূন্যতা!
এর পর বিরতিহীন ট্রেন হঠাৎ থেমে জানিয়ে যায়,
একশত বছর কেটে গেছে, ফিরে যেতে হবে!
নীলফুলের উদ্যান, নীলচে বাড়িতে একদিন
এসেছিলাম দু’হাত বাড়িয়ে!
গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ছুঁয়ে গিয়েছিলাম তোমার হৃদয়!
তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না,
তাই যেতে যেতে জানিয়ে গেলাম,
মানুষের সম্পদ অন্তরে থাকে, পকেটে নয়!
দরজা খুলছে, আলো ধীরে ধীরে তার জায়গা ফিরিয়ে নিচ্ছে,
যেতে হচ্ছে তোমাকে রেখেই!
আনন্দের ছোট্ট নীল প্রজাপতি হাতে এসে বসেছে,
গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছি হাত,
যেন এ হাত ধরেই চলে যাওয়া যাবে চিরবসন্তের দেশে;
তবে কি প্রার্থনা কবুল হলে তুমি ফিরবে?