খুব শখ করে টাকা জমিয়ে জমিয়ে একটা শাড়ি কিনে তারপর সেই শাড়ি পরার পর পার্টিতে গিয়ে হঠাৎ খোঁচা লেগে যদি কোনোভাবে ছিঁড়ে যায় তাহলে সেই দুঃখের প্রলেপ দেয়া আদৌ কি সম্ভব? এমনই এক ঘটনা তৃপ্তির সঙ্গে ঘটে গেল। তৃপ্তি মেঘের বিষাদচূড়ায় যেন বসে আছে। কলেজের শেষ দিনে শাড়ি পরবে বলে মেয়েটি টিফিনের টাকা, রিকশার ভাড়া ইত্যাদি সব কিছু জমিয়ে পছন্দের শাড়িটি কিনল। তারপর কেমন করে যে শাড়িটা ছিঁড়ে গেল তৃপ্তি একটুও টের পেল না।
ছেঁড়া অংশটুকু ছোট্ট করে একটা গিট দিয়ে গালে হাত দিয়ে টেবিলের এক কোণায় বসে রইল। ভাবছিল নিজের কথা। তৃপ্তির বাবা সিএনজি চালায়। তার পক্ষে মেয়ের জন্য নতুন নতুন শাড়ি, জামাকাপড় কিনে দেওয়া একদম অসম্ভব। শাড়িটা ছিঁড়ে গেল- এটা ভাবতেই তৃপ্তি যেন নিজের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল আরো। তারপর সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল তৃপ্তি। কিছুটা কেঁদে-কেটে ফোলাফোলা চোখ নিয়ে বের হয়ে খুশির অভিনয় করল। বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলল। কী একটা জীবন! গরিব থাকাটা যেন অভিশাপ। টাকার কাছে সব মিথ্যা। এই টাকার জন্য তৃপ্তি বান্ধবীর সঙ্গে কোথাও যেতে পারে না, বন্ধুমহলে খাওয়াতেও পারে না। জীবনের অফুরন্ত সময় এখানে থেমে যায় টাকার কাছে।
২. হঠাৎ রূপকথার মতো তৃপ্তির জীবন ঘুরে গেল। রাতারাতি স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়তে আসা। পড়ার পাশাপাশি ছোট্ট একটা জুতার দোকানে চাকরি আর তারপর বাসায় ফিরে অ্যাসাইনমেন্ট আর ক্লাসের পড়া তৈরি করতে গিয়ে তৃপ্তি এখন খেয়ে না খেয়ে কেবল এসব করে।
ভীষণ অপছন্দ করত কফি খেতে। বিদেশে এসে তীব্র তিতাযুক্ত কফি খাওয়া শিখে নিয়ে নিজেকে জাগিয়ে রেখেছে রাত-দিন।
কী এক অমানবিক কষ্টের সঙ্গে নিজের লড়াই। কোনো এক সন্ধ্যায় তৃপ্তি জানালার সামনে মগ হাতে নিয়ে জানালাটা খুলে দেয়। বাহিরে তখন তুষার ঝরে ঝরে পড়ছে। এর আগে তৃপ্তি তুষার ঝরা দেখেনি। সে দেখছে কেমন করে দেখতে দেখতে চারপাশ সাদা হয়ে যায়! তৃপ্তির কাছে মনে হতে থাকে মানুষ যখন পৃথিবীতে আসে তখনো তার মন এমন সাদা থাকে। এরপর ক্লান্তি, ব্যথা, অত্যাচার, কষ্ট এসব মানুষ যত পেতে থাকে তার মন আরো কলুষিত হতে থাকে। এই কলুষিত মনকে নিয়ে মানুষ প্রায় সময় অসহায় বোধ করে। তৃপ্তি ভাবে জীবন এমন কেন- আজ টাকা আছে অথচ সময় নেই। যখন সময় থাকে, তখন টাকা থাকে না। মানুষের জীবন বোধকরি এমনই অপরিপূর্ণ তবুও আকাশসম তার স্বপ্নের ঘর।