তিন কবির গুচ্ছ কবিতা
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রায়হান উল্লাহ
শিরোনামহীন ২
বয়সের সমান প্রেয়সীদের
জড়ো করে দেখি
বিস্তীর্ণ নীল পদ্মের
বিরান ভূমি,
তবু দুঃখ আবাদ
ভালোবাসার খামারে।
নীল নীল ছোপ ছোপ
দুঃখ পদ্ম গড়ায়
বয়সের বলীরেখায়,
প্রেয়সীরা পদ্ম চায়
রক্ত মাংস রেখায়,
ষাঁড়ের লাল জামায়
রক্ত বাঁধন হায়।
পদ্ম পিয়াসীরা পালায়
প্রেয়সী ঘুম যায়।
বয়সের সমান পিয়াসীদের
বুড়ো ঘরে দেখি
বিস্তীর্ণ নীল পদ্মার
ছলাৎ ধ্বনি,
তবু দুঃখ নিনাদ
আলোআশার জঠরে।
কৈফিয়ত
জংলি গোলাপ
দূর গাঁয়ে পাপড়ি ছড়ায়
তাদের জড়ো করে
একটু রেণু মাখি।
দেহের সমান সকাল
আড়মোড়া ভেঙে বলে
কীসের মাখামাখি,
ফাগুন চোখ
আগুন মেখে বলে
এবার আমায় রোখ
কীসের দেখাদেখি,
সকরুণ চোখ
পাপড়ি মেলে বলে
আজব চোখাচোখি
কাব্য হাঁকাহাঁকি।
সবিশেষ কী আর করা
আমি আমায় দেখি।
নস্টালজিয়া
অনাগত নারীতে
উত্তুঙ্গ হয়েই বলব-
আমি অনেক কষ্টে
তোমার হাত ধরব
কিছু যায় আসে কি?
অনাগত পিরীতে
উড়ুক্কু হয়েই বলব-
তুমি অনেক কষ্টে
আমার হাত ধরবে
কিছু যায় আসে কি?
একান্ত
ইয়ত্তাহীন অনেক কিছুই
হারিয়ে গেছে
বেধের ভাবনায়,
অন্তরালে থাকে সবই
সুদূরের ছায়ায়।
ছায়া-কায়া একাকার
অস্পৃশ্যকে ছোঁয়াই
রূপেই মাতালো পাখি
খেই হারাই।
অস্পৃশ্যে তোমাতে ডানা
তোমার সুরে মেলাই,
নীলিমার নীলে গেছি
চন্দ্রাহত হয়েছি,
তোমাকে পাবার আশায়।
তাতেই ফলাফল
বিপরীতে কোলাহল,
সরব মাতোয়ারা
ইঙ্গিত ইশারা।
জেনেই তোমাতে যাওয়া
অস্পৃশ্যে তোমাকে পাওয়া,
কুড়ানো যত
তাই একান্ত।
জোবায়ের মিলন
গল্প
আমারে ছাইড়া গেছে জোছনার ফুল. . .
আমি নাকি কালা
আমার নাকি একশো একটা ভুল
আমার নাকি কোঁকড়া মাথার চুল।
আমারে ছাইড়া গেছে এক বিছানার কথা
ছাইড়া গেছে চাদর, বালিশ, তোশক;
আমি নাকি নড়িচড়ি বেশি
আমি নাকি অকারণে ব্যথা।
আমারে ছাইড়া গেছে শেখেরটেকের গলি-
গলির ভিতর একটা হলুদ বাড়ি
বাড়ির ভিতর বি-ফ্লোরের ঘর
ঘরের ভিতর একটা কুসুম নারী। তার কথাই বলি
আমারে ছাইড়া গেছে পুঁটি মাছের গা
পরীর মতন বাহার!
আমি নাকি গ্রাইম্যা গাছের ভূত।
আমি আমার মায়ের মাণিক পুত
আমারে ছাইড়া গেছে লাল ওড়না, কী অদ্ভুত।
মাস্ক
মাস্ক পরার রীতিটা হাসাচ্ছে বটে-
মাস্ক তো আগুন সভ্যতার আগে থেকেই
পরিধান করে আছে মানুষ,
যেদিন থেকে মানুষ স্বার্থ শিখল।
আজ দৃশ্যত মাস্কটা
অদৃশ্য মাস্কটাকে পারবে কি সরাতে?
মানুষের মতো মাস্কদারী প্রাণী
পৃথিবীতে বিরল।
ভূতগ্রস্ত সন্ধ্যার স্বরলিপি
চাখে নেমে এলো শীতসংকুল কুয়াশা
নামতা পড়তে পড়তে মুখস্ত করে ফেলি আদিম চরিত্র,
আমাদের আবহ বদলে আমরাও হয়ে উঠি ভয়ের বস্তু।
সূর্য ডুবে যায়, চাঁদও ডুবে যায়
নিমজ্জিত হয় জল-কাদায়;
চারদিকে ভ্রম, ভাতঘুম, ভ- মিউজিক
আমাদের চন্দন ঠোঁটে নেলপলিশীয় আবির নেমে আসে
আমরা হয়ে উঠি সাঁতার ভোলা রূপচাঁদা-
চাষ করি নিজেরই সাড়ে তিন হাত ছায়া-ব্রহ্মা-
আর ভূতগ্রস্ত সন্ধ্যার স্বরলিপি।
মিনাক্ষী মলয়
ঘন কুয়াশা,
নিদ্রিত রাতের অখ্য- দানা
স্তব্ধ চোখাকৃতি ভাসান উঠান. . .
কই যাও-
কই যাও মিনাক্ষী মলয়?
রমনার চিলেকোঠায় ঝরা পল্লব
নিড়ানো-দোতারা-করতাল. . .সারগাম, সারগাম
পুকুরে জমা জল, কাচঘর, বরফ
সোনাধান পুড়ে যাচ্ছে হিম-ছুরির ছই ছই টানে
ও-গো পিতামহ
কবরফুল বুকে নিয়ে কত আর ঘুমাবে!
জলধির সৈকতে মরা ডলফিন! তিমি।
এসো-না একবার পাতার বাঁশি হই
পাতার বাঁশি হয়ে বেজে ওঠি ঐহ্যিক শীতকামরায়
ন্যুব্জ মনোমলয় মন্দিরে?
আহমদ সাইফের
আরোহী
বাঁধন খুলে দাও-
উড়ে যাবো প্রজাপতি হয়ে!
নিঃশেষ প্রদীপের বিভাজন রেখার আলপথ ধরে।
বিনীত সুর বাধা দিও না- প্রিয়ার কসম তবে!
যোজন হিসেব ছকে এঁকে দিও বিগত উসুলসহ।
আরোহী হয়ে নুয়ে পড়ো-
আমার ফেরার পথে!
বাঁয়ে কিবা ডানে
ফিসফিসিয়ে গান গেয়ে যায়
বাতাস আমার কানে।
পথ চলে যায় পথের বাঁকে
সঙ্গে আমি চলি
তোমায় খুঁজি তোমার কথা
পথের কাছে বলি।
দিনের শেষে রাত্রি নামে
চাঁদের আলোর ঝলক
দু’চোখজুড়ে তোমার স্মৃতি
শ্রান্ত করে পলক।
হাঁটতে থাকি দিন রজনী
আনমনা দিন যাচ্ছে চলে
হাঁটতে থাকি দিন রজনী
হাঁটার মাঝে ক্লান্তি আসে
তবুও যে চলতে থাকি
চলার পথে পথ মাড়িয়ে শান্তি খুঁজি।
বুক ফুলিয়ে সাহস নিয়ে
জীর্ণ পথে পা চালিয়ে দিনকে খুঁজি।
ঘাস মাড়িয়ে পথ চলে যায়