অনুগল্প
ঢোল বাজে
স্বপ্ন নীল
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢোলের বাদ্য বাজে তালে তালে, নাচে আকাশ, নাচে বাতাস, নাচে পাখি আর নাচে কাশফুল... ইছামতি নদীর ছোট ছোট ঢেউ ঢোলের সুমধুর ধ্বনি নিয়ে অলস ভঙ্গিতে গড়িয়ে চলেছে। নদীর দুই ধার আজ সেজেছে মনের মত করে...। বাতাস কাশফুলকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, এলোমেলো করে দিচ্ছে তার বাধা সুন্দর সাদা কেশ। ঢোল বাজে লো/ঢোল বাজে ঢোল/
মন রহে না ঘরের ভেতর... দূর হতে ভেসে আসছে মিষ্টি গান। ইছামতির তীরে হিজল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে কোন সে নারী! ! কাঁখে মাটির কলসি, পরনে লাল শাড়ি, সিথিতে সিদুর, পায়ে আলতা, হালকা ঘোমটার তলে ডাগর চোখে কেন এত বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে! ! !
কার কথা তুমি মনে করহে বধূ! ! ক্লাস এইটে পড়ুয়া কয়েকটি মেয়ে পূঁজা দেখতে যাচ্ছে, রাজ্যের সব আনন্দ যেন তাদের...। একটি মেয়ে থমকে দাঁড়ায়, বউদি বলে জড়িয়ে ধরে বধূকে...। ভেজা চোখে বধূর রাজ্যের কষ্ট ভেসে উঠেছে... মেয়েটি যেন সব না বলা কথাগুলো বুঝতে পারে, নায়রীর নৌকাখানি দাদা ফিরিয়ে দিয়েছে... ফিরে যাওয়া নৌকা যে পথে চলে গিয়েছে সেদিকেই তাকিয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে তার প্রিয় বউদি... বউদির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চায়... বধূ কোনো কথা না বলে চলে যাওয়া ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে... যেদিকে পাল তোলা নৌকা চলেছে সারি সারি...। মেয়েটি বলে, বউদি তুমি আজকে এই কলসি ভাসিয়ে দাও... বল! ওরে কলসি! সবগুলো কষ্ট তোর ভিতর ভরে পাঠিয়ে দিলাম.. তুই চলে যা, তুই ভেসে যা...’ বধূ ফিক করে হেসে উঠে, তার ডাগর নয়নজোড়ায় আনন্দের ঢেউ খেলে যায়... দুইজন মিলে কলসি ভাসিয়ে দেয়, কষ্ট ভাসিয়ে দেয়...। সবগুলো মেয়ে ঘিরে ধরে তাকে, নিয়ে আসে বাড়িতে, সাজিয়ে দেয় নতুন করে, তার রূপে নতুন সিদুর আর নতুন শাড়ি যেন লজ্জা পাচ্ছে...। ঢোলের বাদ্য ভেসে আসছে, ভেসে আসছে কীর্তন, বধূ যখন তার জীবনসঙ্গীর হাত ধরে ইছামতির ধার দিয়ে আলতা পায়ে এগিয়ে চলেছে... তখন নদী আনন্দিত চিত্তে কুল কুল শব্দ করে বয়ে চলেছে দূর অজানায়...