ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোদে কার ছায়া

জোবায়ের রাজু
রোদে কার ছায়া

ফিরোজ নতুন বাইক কিনেছে। বাইকের প্রতি কখনো তার ঘোর ছিল না। কিন্তু কর্মজীবন শুরু করার পর একটা বাইক ফিরোজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে বাইক কিনে ফেলল মোটা অংকের টাকায়। আজ সোমবার। কর্মস্থল থেকে বিকালে বাসায় ফিরছে ফিরোজ। কলেজ রোড পার হতে যাবে, ঠিক এমন সময় অচেনা এক নারী কণ্ঠ পেছন থেকে ডাকল ফিরোজকে। ‘এই যে ফিরোজ ভাই, একটু সাহায্য করবেন?’ কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে ফিরোজ। বাইক থামিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অচেনা এক তরুণী মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। এই মেয়েকে আগে কোথাও দেখেছে বলে মনে পড়ে না ফিরোজের। -ফিরোজ ভাই, আমাকে একটু সাহায্য করবেন? -কিন্তু তুমি কে? চিনতে পারিনি! -আমি তামান্না। -কোন তামান্না? -আরে আপনাদের পাশের বাসার তামান্না, এই মাসেই আমরা নতুন ভাড়াটিয়া এসেছি।

-ও আচ্ছা। তুমিই তামান্না? আমার বোনদের কাছে তোমার অনেক গল্প শুনি। কখনো দেখিনি তোমায়। সকালে বের হই আর ফিরি বিকেলে। -জি। আপনার বোনের মোবাইলে আপনার অনেক ছবি দেখেছি। তাছাড়া গতকাল সকালেও আমাদের বারান্দা থেকে নিচে আপনাকে দেখেছি। আচ্ছা একটু সাহায্য করেন ফিরোজ ভাইয়া? আমাকে কোনো এক কাঁচাফুল দোকানে নিয়ে যান তো। কিছু কাশফুল কিনবো। -কাশফুল? কি বলো, এত ফুল থাকতে কাশফুল কেন? -এখন শরৎকাল তো। আমার উনার জন্য কাশফুল কিনতে হবে। -কিন্তু ফুল দোকানে তো কাশফুল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। -তাহলে কি করা যায় ফিরোজ ভাই? -আমার পরিচিত একটা জায়গা আছে। আমিশাপাড়া হাইস্কুলের পাশে যে গাঙপাড়, সেখানে এই পড়ন্ত শরতে কাশফুলে সাদা হয়ে আছে প্রকৃতি।

-তাহলে চলেন। তামান্না ফিরোজের বাইকের পেছনে চেপে বসে। কালো ধোঁয়া ছেড়ে বাইক ছুটে চলে গাঙপাড়ের কাশবনে। তামান্নার বাইকে চড়ার অভিজ্ঞতা কম। তাই সে ভয় পাচ্ছে। আলতো করে ফিরোজের কাঁধে হাত রাখল। -তোমার মনের মানুষ কাশফুল পছন্দ করে বুঝি? -না, আমি ইচ্ছে করেই তাকে কাশফুল দেব। -আচ্ছা। কি নাম তার? -মকবুল আহমেদ। -খুব প্রবীণ নাম। আজকের প্রেমিক পুরুষদের নাম তো হয় আধুনিক টাইপের। -সে তো প্রবীণই। মানে? -ফিরোজ ভাই, আমি এক বুড়ো লোকের প্রেমে পড়েছি। ভদ্রলোকের অনেক বয়স। উনার স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলেরা এখন বাবার খবর রাখে না। ভদ্রলোক সিঙ্গেল থাকেন। আমি মাঝে মাঝে তার বাসায় যাই। ভদ্রলোকের জন্য মায়া জন্মে গেছে খুব।

-নাটকের গল্প শোনাচ্ছো আমাকে? -না না ফিরোজ ভাই। সত্যি বলছি মুকবুল আহমেদ আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। আমার হৃদয়ের সমস্ত রোদে এখন মকবুল আহমেদের ছায়া। সে ছায়া শুধু আমি দেখি। -হাহাহা। -আপনি হাসছেন কেন ফিরোজ ভাই? আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা বিশ্বাস না হলেও সমস্যা নেই, আমরা কাশবনে যেতে আর কতক্ষণ লাগবে?

২. কাশবন দেখে উতলা হয়ে উঠল তামান্না। বাইক থেকে নেমে চঞ্চল পায়ে ছুটে গেল গাঙপাড়ে। অবুঝ বালিকার মত সমস্ত কাশবনে পায়চারি করতে থাকে। ফিরোজ বাইকের গদিতে বসে তামান্নার কাশবনের দস্যিপনা দেখছে। রূপের কোনো খুঁত খুঁজে বের করা যাবে না তামান্নার। যে ছেলে ওর জীবনে আসবে, খুব লাল টুকটুকে একটা বউ পাবে। কিন্তু মকবুল আহমেদের নামে যে কাল্পনিক বরকে প্রেমের গল্পের নায়ক বানিয়ে তামান্না এতক্ষণ ঠাট্টা করেছে, সেটা ভেবে ফিরোজ মুখটিপে হাসছে। কাশবন থেকে ফেরার নাম নেই তামান্নার। ফিরোজ জোর গলায় বলল এবার ফিরে এসো তামান্না অদূরে কাশবন থেকে তামান্নার জোর গলায় জবাব দেয়, আপনি চলে যান ফিরোজ ভাই, আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে, আমি আরো পরে বাসায় যাব। ফিরোজ আর কথা বাড়ায় না। বাইক চালিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

৩. আকবর ভবনের সামনে ভিড়। শত শত মানুষ। ফিরোজ ভেবে কুল পায় না, তাদের বাসার নিচে এত ভিড় কেন! কোন সমস্যা নাকি! কি হয়েছে! গ্যারেজে বাইক রেখে বাসায় উঠে আসে ফিরোজ। পুলিশও দেখা যাচ্ছে। তাদের পাশের বাসা থেকে চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে।

বাসায় ঢুকে মায়ের কাছে শুনল আসল ঘটনা। পাশের বাসার নতুন যারা ভাড়াটিয়া এসেছে, তাদের মেয়ে তামান্না সিলিংফ্যানের সঙ্গে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁসি দিয়েছে। -তুমি এসব কি বলছো মা? -সত্যিটাই বলছি।

-তামান্নাকে তো আমি একটু আগে কাশবনে দিয়ে এসেছি। -তুই পাগল নাকি? ও ফাঁসি দিয়েছে আরো চার ঘণ্টা আগে। মকবুল আহমেদ নামের এক বুড়ো বেটার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছে। -মা, কি বলছো? -হ্যাঁ। তামান্না ওই বুড়ো বেটাকে বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বাবা-মা বকাঝকা করেছে বলে আর আত্মহত্যা করেছে। ফিরোজের মাথা ঘুরে উঠল। তামান্নাকেই তো সে বাইকে করে কাশবনে দিয়ে এসেছে। মকবুল আহমেদের গল্প তো সেও বলেছে। তার মানে ওই মেয়ে কে ছিল? তামান্নার আত্মা! গায়ের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে গেল ফিরোজের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত