নদী

তানিয়া আক্তার

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

জানালাটা খোলা ছিল, আমার ঘরটি নদীর ঠিক পাশেই, যেন নদীর প্রহরী আমি। রাত তখন দেড়টার আশপাশে হবে হয়তো, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় জানালা দিয়ে একটু বাইরের দিকে তাকালাম, অবাক হয়ে দেখলাম নদী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। আকাশে চাঁদ ছিল আলোর প্রতিফলনে ঝলমল করছে চারিদিকটা, তখন হঠাৎ নিজেকে নদীর সঙ্গে তুলনা করতে লাগলাম আর ভাবলাম, আমি যদি নদী হতাম তাহলে এই চাঁদের আলো আমার গায়ে এসে পড়তো, কতো সুন্দর করে নদীর স্রোতের সাথে আমিও কোন এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আপন মনে ছুটে চলতাম, কতো শখ ছিল ছুটে চলব নদীর মতো যার কোনো শেষ বলতে কিছু নেই, এর মধ্যেই আবার মনে হলো আমি তো মানুষ, নদী নই, এই ভেবেই নিজেকে সান্ত¡না দিচ্ছি এছাড়া আমার আর কিই-বা করার আছে। মনটা আবার একটু বিষণ্ণ হয়ে গেল, যাক এগুলো ভেবে আর কি করব এই ভেবে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু ঘুমাতে পারছিলাম না।

এর মধ্যেই মনে হলো হিমুর (ছদ্মনাম) কথা, আমার বাড়ি ছিল নদীর এপারে তার বাড়ি ঠিক উল্টো দিকে।

নদীর দুই ধারে বসে দুইজনের কতোই না ফোনে কথা হতো, অস্পষ্ট মুখ আর ফোনে কথা বলা, রোজগার রুটিন ছিল আমাদের, বলে রাখা ভালো হিমু ছিল আমার প্রাক্তন প্রেমিক, নদীর ভেতরে মাটির ঢিল ছুড়তাম আর দুজনে কথা বলতাম, একটা সময় আমাদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমি নদীর পাড়ে বসে থাকি কিন্তু আগের মতো আর উতলা বাতাস বয় না, ওপাশে থেকে ফোনও আশে না, মনে হয় যেন চৈত্র মাসের নদীর মতো আমার মনেও কোনো ভালোবাসার জল নেই। তাকে বলেছিলাম নদীর মতোই ভালোবাসবো তোমায়, তুমি স্রোতের মতো আমার বুকের ওপর দিয়ে ভেসে যাবে। আর শত কষ্টের মাঝেও তোমাকে আটকাবো না।

সে আমার দেয়া কথা ঠিকই রেখেছে, কিন্তু আমি আর তার সঙ্গে যেতে পারিনি। হয়তো অজানা কোনো এক কারণে আমি আটকে ছিলাম কোথাও তাই যেতে পারিনি। হঠাৎ আকাশে তাকিয়ে দেখি আকাশের চাঁদ টাও যেন আমার ভাবনা শুনে দূরে কোথাও হারিয়ে গেল। যাক এগুলো ভাবতে ভাবতে মনটা অনেক হিম হয়ে আসছে।

বারবার মনে হয় কোনো দিন স্বাধীন হলে নদীর মতো হবো, যার কোন ছুটে চলার শেষ নেই। অনন্তকাল ধরে চলতে চাই, পাখির মতো স্বাধীন নয়, যারা কি না রাত হলে আবার নিজের ঘরে ফেরার চিন্তায় ব্যস্ত। এতো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় এভাবেই কেটে যায় মানুষের জীবন।