তাহার জন্য অপেক্ষা

ইমন ইসলাম

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সময়টা তখন কালীর সন্ধ্যা। ফেসবুক স্ক্রল করছিলাম। হঠাৎ একটি নোটিফিকেশন। সদ্য এক জুনিয়র বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়েছে। নামটি তার ইয়াসমিন। অনুরোধটা গ্রহণ করা মাত্রই মনের মাঝে উঁকি দিয়ে উঠল অতীতের সেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি। যে অনুভূতি মনের কোণে ছাই চাপা হয়ে পড়ে ছিল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গড়াতে শুরু করেছে। হঠাৎ বার্তা এলো আগামীকাল কোনো ক্লাস নেই। তাই আমিও বসে গেলাম অতীতের সেই সুখকর স্মৃতি রোমন্থন করতে। সদ্য সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছি। নতুন ক্লাসে নিজেকে যেন নতুন করে খুঁজে পাচ্ছিলাম। মনে যেন রঙ লেগেছে, এমন একটা অবস্থা। সবার অগোচরে আমি যেন কি এক অদ্ভুত মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। শুধু তাকিয়ে থাকতাম তাহার পানে। তবে সেটা কোনো বই নয়, ওটা ছিল একটা মায়াপরী। পরীরা মনে হয় একটু মায়াবী হয়, ওকে না দেখলে বুঝতামই না। বয়স অল্প, মনের ভেতর আবেগগুলো যেন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত। ক্লাসের মধ্যে সুযোগ পেলেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম। তবে ওকে সেটা বুঝতে দিতাম না। স্কুল শেষে যখন সে বাড়ির পথে রওনা দিত তখন আমি অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবতাম আমার বাড়িটা যদি ওদিকে হতো তাহলে বেশ দারুণ হতো। আরো কিছু সময় তাকিয়ে থাকতে পারতাম। ভালোবাসা কি জিনিস তখন বুঝতাম না ঠিক। তবে ওকে শুধু দেখতে মন চাইত। আর ওর দুষ্টুমিগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগত। পার্থক্য বলতে ও বই পড়তে বেশি পছন্দ করত আর আমি ওকে দেখতে পছন্দ করতাম। তবে ওকে ভয় পেতাম। ভাবতাম কথা বললে যদি রাগ করে আমাকে ব্লক করে দেয়। যদিও তখন ফেসবুক কিংবা মোবাইল ছিল না কারো কাছে। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েকটি বছর। মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই। দুজনের কলেজ আলাদা হয়ে যায়। নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। তখনো ওর কথা বেশ মনে পড়ত। ভালোই কাটছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়। হঠাৎ একদিন ওর কথা মনে পড়তেই, ফেসবুকে ওর নাম লিখে সার্চ করলাম। অনেকগুলো আইডির মধ্যে ওকে অবশেষে খুঁজেও পেলাম। বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠালাম। তখন অনেক আনন্দ হচ্ছিল মনের মধ্যে। ওকে একটা মেসেজ পাঠালাম ‘হ্যালো, কেমন আছো?’ রিপ্লাই এলো, ‘ভালো।’ পরিচয় দিতেই চিনে ফেললে। এভাবেই খুলে গেল আমাদের নতুন বন্ধুত্বের হালখাতা। পুরনো অনুভূতিগুলো বলতেই ও যেন এক গাল হেসে দিল। স্কুল জীবনে যেটা বলতে পারিনি, এখন সেটা অনায়াসে তাকে বলে দিতে পারি। তখন গর্বে বুকটা যেন ফুলে ফেঁপে ওঠে। দেখে মনে হবে যেন মহৎ কোনো কীর্তি সাধন করেছি। তার সাথে অনেক বিষয়ে কথা হয় তবে ভালোবাসি কথাটি আজো বলতে পারিনি। জীবন যুদ্ধের এই নির্মম বাস্তবতায় ভালোবাসি কথাটি বলতেও যেন কি এক ভয় এসে ঘিরে ধরে। তবুও ইচ্ছে করে বলতে তোমাকে আমি ভালোবাসি। সেও কি আমার কথা ভাবে! হয়তো বা ভাবে। আচ্ছা কী ভাবে! জানতে খুব ইচ্ছা করে। ‘এমন একটি মায়াবী মেয়েই তো চেয়েছিলাম জীবনে। টাকা-পয়সা, যোগ্যতা দিয়ে কি হবে যদি আমাকেই ভালো না বাসে। এরকম ভালোবাসাই তো আমি চেয়েছিলাম। বন্ধু বান্ধবদের কাছে গর্ব করে বলবে, ‘জানিস সে অনেক কেয়ারিং, আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। সারাক্ষণ ফোন দেয়। ওইদিন একটা নীল পাঞ্জাবি পড়ে এসেছিল। কত যে ভালো লেগেছিল। আমিও একটি লাল শাড়ি পড়েছিলাম সেদিন। আমার কাছে মনে হয়েছিল আমরা দুজন যেন স্বামী-স্ত্রী। জানিস আমার জন্য কি সুন্দর একটি গিফট এনেছিল। আমি তো দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ঠিক যেন আমার পছন্দের জিনিসটা আমাকে এনে দিয়েছে। হ্যাঁ ওই আমার জীবনের সব, ওই আমার হৃদয়ে বয়ে যাওয়া নদীর কলরব। অপেক্ষায় আছি। হয়তো একদিন সে সবাইকে বলবে ইমনের আমাকে দরকার নেই, আমারই ইমনকে দরকার।