ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গোলাম মাওলা জসিমের ‘সেলুন পাঠাগার’

গোলাম মাওলা জসিমের ‘সেলুন পাঠাগার’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’ বই আঁধার ঘরে আলোর প্রজ্বলন ঘটায়। মানবতাবোধ, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও সহিষ্ণুতা শেখায়। অথচ দিন যত যাচ্ছে, মানুষ বই পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিষণ্ণতা বা একাকীত্ব দূর করতে, কাজের মধ্যে একঘেয়েমি কাটাতে কিংবা অবসর সময়ে বই হচ্ছে সেরা সঙ্গী। নোবেল বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছেন, ‘বইয়ের মতো এতো বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই।’ মানুষ এ কথাটি এখন ভুলতে বসেছে। বর্তমানে প্রযুক্তির অবাধ ও অপব্যবহারে বিপথগামী হচ্ছে উঠতি বয়সি কিশোর-যুবকরা। তাই অবসর সময়টুকু মানুষকে বইমুখী করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কবি গোলাম মাওলা জসিমের ‘সেলুন পাঠাগার’। মানুষ সেলুনে চুল কাটতে গিয়ে অনেকসময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। কেমন যেন একটা বিরক্তি কাজ করে সবার মধ্যে। মনে হয়, যদি ব্যতিক্রমী কিছু একটা থাকত, তাহলে অপেক্ষার সময়টা ভালোভাবে কেটে যেতো। এমন ধারণা থেকেই ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’ শীর্ষক চিন্তার উদ্ভাবন।

ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রায় দুইশো সেলুনে স্থাপিত হয়েছে ‘সেলুন পাঠাগার’। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের কলকাতা, আগরতলাতেও দশটি সেলুনে এমন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বারোটি সেলুনে শোভা পাচ্ছে ‘সেলুন পাঠাগার’। সেলুনগুলোতে শোভা পাচ্ছে জনপ্রিয় লেখকদের বই সংবলিত দৃষ্টিনন্দন বুকসেলফ। সেলুন পাঠাগারের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মাওলা জসিম বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে একটি পরিচিত মুখ। একাধারে তিনি কবি, শিশুসাহিত্যিক, অভিনেতা, সংগঠক ও ব্যবসায়ী। প্রায় তিনদশক ধরে তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লিখে আসছেন। বিশেষ করে শিশুদের জন্য রচিত তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রশংসিত হয়েছে। নানামুখী কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোমধ্যেই তিনি চ্যানেল আই কৃষি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, বীজন নাট্য সম্মাননা ২০২২, কালার্স একাডেমি সম্মাননাসহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এবার তার ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’ কার্যক্রম দেশব্যাপী নতুন করে আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়েছে। সেলুনে সেলুনে পাঠাগার স্থাপন করছেন সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। ইতোমধ্যেই দেশের যেসব স্থানে সেলুন পাঠাগার স্থাপিত হয়েছে, সেগুলো হলো- রাজধানীর মিরপুর দুই, মিরপুর আট, হাতিরপুলে দুইটি, কাটাবন, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, কাকরাইল, পুরান ঢাকা, ফার্মগেট, হাতিরঝিল, নোয়াখালীর মাইজদীতে বিশটি, সুদারামে দুইটি, কবিরহাটে দুইটি, সুবর্ণচরে দুইটি, বজরায় চারটি, ফেনীর মহিপাল, রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, দেওয়ানহাট, চট্টগ্রাম সিটির নতুন মুনছুরাবাদ, কর্ণেল হাট, ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকা, বিশ্ব কলোনি, ফয়েজ লেক, ওয়ারলেস, দামপাড়া, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, হালিশহর, নয়া বাজার, চেরাগী পাহাড়, বড়পোল, চকবাজার, আকবর শাহ, সরাই পাড়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ, শোলকবহর, দুই নম্বর গেট, আকবর শাহ, মোমিন রোড, বন্দর টিলা, আন্দরকিল্লা, বহদ্দার হাট, মুরাদপুর, লালখান বাজার, দেওয়ান হাট চৌমহনী, মেহেদী বাগ, নতুন ব্রিজ, ফিরিঙ্গি বাজার, বায়েজিদ, পাঁচলাইশসহ বিভিন্নস্থানে ‘সেলুন পাঠাগার’ স্থাপন করা হয়েছে। ‘অবসরে বই পড়ুন’ শীর্ষক স্লোগানে ২০১৮ সালের ৩০ জুন নোয়াখালীর রতনের সেলুনে বই ও বুকসেলফ প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ‘সেলুন পাঠাগার’-এর। এর উদ্বোধন করতে গিয়ে নাট্যনির্মাতা ও প্রযোজক দীল মোহাম্মদ দিলু বলেন, ‘মানুষের উৎকর্ষতা বাড়াতে এবং মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে বই পড়ার বিকল্প নেই। সেই ধারণা থেকে গোলাম মাওলা জসিমের ব্যতিক্রম উদ্যোগ ‘সেলুন পাঠাগার’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আলোকিত মানুষ গড়তে সহায়ক হবে।’ সেলুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও স্বপ্ন সম্পর্কে গোলাম মাওলা জসিম বলেন, ‘স্যাটেলাইট ও মোবাইলের প্রভাবে মানুষ বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে মানুষ সেলুনে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। এসময়টুকু বিরক্তিকর লাগে। তাই গ্রাহকরা যাতে সেলুনে বসে বিরক্তিকর সময়টুকু জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে কাটাতে পারে, তাই সেলুনে সেলুনে পাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করি। কারো সহায়তা ছাড়াই শুধুমাত্র বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির জন্যই সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এ কার্যক্রম চলমান আছে। বিশ্বব্যাপী এ উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে বইপ্রেমী মানুষদের যার যার এলাকায় ‘সেলুন পাঠাগার’ শুরু করার অনুরোধ জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত