অফিসে যাবার জন্য বাসা থেকে রওনা দেবার বিশ মিনিট পর ফারিয়াকে ফোন করলো আমান। এমনতো সাধারণত হয় না। তবু কল রিসিভ করতেই ওপর থেকে আমান জানায়, ‘বাসায় কি মিজান নামের কেউ এসেছে?’ ফারিয়া বলল, ‘না তো!’ ওপার থেকে আমানের তরল গলা, ‘ও আচ্ছা।’ আমানের মুখে মিজানের নামটা শুনে বুকটা ধক করে উঠল ফারিয়ার। মানে কি! কোন মিজানের কথা বলছে আমান! ফারিয়ার একসময়ের প্রেমিক পুরুষ মিজান না তো! অস্থিরতা বাড়ে ফারিয়ার। আমানের সাথে মিজানের যোগাযোগ আছে? ডিভোর্সের পর মিজান অবশ্য নানাভাবে হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘ যেখানে বিয়ে হোক না কেন, তোমাকে আমি শান্তিতে থাকতে দেবো না।’ তাহলে কি সেই কঠিন দিন এসে গেছে! মিজান নিশ্চয়ই আমানের সাথে কৌশলে যোগাযোগ রাখছে। বিষয়টা সুনিশ্চিত হতে ফারিয়া আমানকে কল দেয়। কিন্তু ওপারে আমানের নাম্বার বিজি। বেশ অস্বস্তিতে পড়ল ফারিয়া। মিজানের সঙ্গে যে তার কোর্টম্যারেজ এবং পরে সেটা ডিভোর্সে সমাধান, এসব ঘটনা তো আমান জানে না। বিয়ের সময় আমানের পুরো পরিবারের কাছে গোপন রাখা হয়েছে ফারিয়ার আঁধারে ডাকা অতীতের গোপন গল্প।
দুই বছরের সম্পর্ক শেষে ফারিয়া মিজানকে কোর্টম্যারেজ করতে বাধ্য হয়। কারণ তার পরিবার মিজানকে পছন্দ করেনি। কিন্তু ফারিয়া তখন এতটাই নাছোড়বান্দা ছিল যে, মিজানকে কোর্টম্যারেজ করে এবং কিছুদিন পর জানতে পারে মিজান একজন নারী পাচারকারী। বিয়ের নামে নাটক করে এরইমধ্যে সে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। শেষ পর্যন্ত এমন অমানুষকে জীবন থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয় ফারিয়া। সমাধানটি খুঁজে নেয় ডিভোর্সে। নিজের ভুলের জন্য বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চায়। আবিদ হোসেন ও ঝর্ণা বেগম মেয়েকে ক্ষমা করে দেন।
আমানের সাথে বিয়ের সময় আমান ও তার পরিবারের কাছে ফারিয়ার প্রথম বিয়ের ঘটনা গোপন রাখা হয়। সুন্দরী ফারিয়াকে পেয়ে আমান ও তার পরিবার সন্তুষ্ট। বিয়ের কয়েকদিন পর আমান ফারিয়াকে নিয়ে শহরে চলে আসে, যেখানে আমানের কর্মস্থল। সুখেই দিন কাটতে থাকে। কিন্তু আজ যেন সেই সুখের ঘরে ঝড়ের পূর্বাভাস। আমানের ফোনকলে মিজানের নাম শুনে ভেতরটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ পড়ে। কে এসেছে! মিজান নয় তো! বুক ধুকধুক কাঁপতে থাকে ফারিয়ার। দুয়ারে আবারো টোকা পড়ে। ওটা যেন কারো হাতের টোকা নয়, ফারিয়ার বুকে আঘাত করা কোনো অদৃশ্য তরবারি।
অনর্গল টোকা পড়তে থাকে দুয়ারে। ‘একটু দরজাটা খুলবেন?’ এটা কার কণ্ঠ! সেটা বোঝার চেষ্টা করে ফারিয়া। মিজানের গলার মতো মনে হয় না। তবে কে!
হঠাৎ আমানের ফোন আসে। কাঁপা হাতে রিসিভ করে ফারিয়া। ওপার থেকে আমানের মিষ্টি অভিযোগ, ‘দরজা খুলছো না কেন বউ? মিজান নাকি অনেকক্ষণ থেকে দরজা পেটাচ্ছে, কল করে বলল আমাকে।’ ফারিয়া ভীতু গলায় বলল, ‘ কোন মিজান?’ আমান উৎকণ্ঠে বলল, ‘হা হা হা। তুমি ভয়ে দরজা খুলছো না? মিজান হচ্ছে আমার পরিচিত একজন মেকানিক। ও একটি হিটার নিয়ে এসেছে। বাথরুমে সেটিং করে দেবে। দরজা খুলে দাও। আমি পাঠিয়েছি।’ ফারিয়া আগ্রহী কণ্ঠে জানতে চায়, ‘হিটার? গরম পানির হিটার? আগে বলোনি কেন?’ ওপার থেকে মিষ্টি হেসে আমানের জবাব, ‘হি হি হি। ওটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ ছিল। শীতে গোসল কিংবা ওজুতে তোমার যে কষ্ট হয় এবং তুমি যে তা প্রকাশ করো না, আমি সব বুঝি। তাই তোমার জন্য এই শীতে হিটার কিনলাম। দরজা খুলে দাও। মিজান দাঁড়িয়ে আছে।’
সব ভয়ভীতি আর সন্দেহ দূর করে ফারিয়া দরজা খুলে দেখে বাইরে বিশাল এক হিটার নিয়ে মিজান নামের এক যুবক বয়সের মেকানিক দাঁড়িয়ে আছে, যাকে আমান পাঠিয়েছে। হিটারের দিকে তাকিয়ে চোখে পানি চলে এলো ফারিয়ার। আমান তাকে এত ভালোবাসে কেন! অথচ এমন পবিত্র মানুষের কাছে ফারিয়া তার জীবনের গোপন কলঙ্কের ইতিহাস আড়াল করে রেখেছে।