ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পিতৃপুরুষের চিহ্ন

অলোক আচার্য
পিতৃপুরুষের চিহ্ন

হাতলটা ভেঙে গেছে অনেক আগেই। পেছনে শক্ত কাঠ দিয়ে চেয়ারটাকে কোনোভাবে বসার উপযোগী রাখা হয়েছে। যদিও সেখানে রাশেদ ছাড়া আর কেউ বসে-টসে না! ভেতরে ঘূণপোকা খাওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। বারান্দার এক কোণে পিতৃপুরুষের শেষ চিহ্ন হিসেবে আজও চেয়ারটা স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটাও থাকতো না যদি রাশেদ তার বাবার চিহ্নটুকু এভাবে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা না করতো। বউয়ের সাথে চেয়ার নিয়ে কম বাগবিতণ্ডা হয়নি। রাশেদ বিনয়ের সুরে বলেছে, থাক না চেয়ারটা ওখানে। ওদিকে তো কেউ খুব একটা যায়-টায় না। আমি অফিস শেষে বসি। রাশেদের বাবা ওই চেয়ারটাতে বসে পত্রিকা পড়তো। রাশেদও তাই করে। রাশেদের বউ ফিরোজা রাগে গজগজ করেছে। কিন্তু হাত দেয়নি। রাশেদের রাগ ফিরোজা ভয় পায়। এমনিতে ও শান্ত স্বভাবের। রেগে গেলে একদম অন্য মানুষ। ফলে শেষ পর্যন্ত চেয়ারটা টিকে গেছে এই সৌখিন আসবাবপত্রের ভিড়ে। গ্রামের বাড়ি, জায়গা-জমি সবকিছু বিক্রি করে শহরে পাঁচতলা ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই বসবাস করে রাশেদ। যতদিন বাবা ছিল বছরে একবার যাওয়া হতো। বাবা মারা যাওয়ার পর সব যখন বিক্রি করে চলে আসে সাথে করে বাবার শেষ চিহ্ন হিসেবে নিয়ে আসে এই আধভাঙা কাঠের চেয়ারটা। ফিরোজা প্রথমটায় ঘোর আপত্তি তুলেছিল ও জিনিস এ বাড়িতে রাখতে। বাড়িতে এত দামি দামি সব আসবাবপত্র আছে। তাছাড়া অভিজাত শ্রেণির প্রতিবেশীরা কি বলবেন সেই ভেবেই দুশ্চিন্তায় অস্থির হয় ফিরোজা। রাশেদের কারণে রাখতে হয়েছে। শেষমেশ চেয়ারটার জায়গা হয় এমন স্থানে যেখানে সচরাচর কেউ যায় না। একদিন সন্ধ্যায় রাশেদ বাড়ি ফিরে হাত মুখ ধুয়ে চেয়ারটার কাছে যায়। কিন্ত সেখানে চেয়ারটা ছিল না। রাশেদের অস্থিরতা বাড়তে থাকে। সারাবাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন চেয়ারটার কোনো হদিস পায় না তখন তার স্ত্রীর স্মরণাপন্ন হতে হয়।

তার স্ত্রীর কাছে জানতে পারে চেয়ারটার অস্তিত্ব আর নেই। তার বাবার মতোই মিশে গেছে। আশ্চর্য তার বাবার মৃত্যুর খবরটাও সে জেনেছে অনেক পরে। রাশেদের ছেলে আজ পাড়ার সকলের সাথে বাড়ির ছাদে পিকনিক করেছিল। পিকনিকে রান্নার জন্য কাঠের যোগান দিতে চেয়ারটা ভেঙে নিয়ে গেছে! এত পুরানো চেয়ার দিয়ে আর কি হবে! ফিরোজাও বাধা দেয়নি। রাশেদ দৌড়ে ছাদে যায়। তখনো কাঠের ছাইয়ে আগুন ছিল। রাশেদ সেই আগুন উপেক্ষা করেই ছাইগুলো আঁকড়ে ধরে। রাশেদের হাত পুড়ে যায়। দূরে দাঁড়িয়ে ফিরোজা স্বামীর এই ধরনের বোকামি দেখতে থাকে। একসময় দেখে তার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ওদিকে রাশেদও কাঁদছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত