ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যৌতুককে না বলি

মো. আসিফ
যৌতুককে না বলি

গণী মিয়ার দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে আয়েশা আর বড় মেয়ে হামিদা। বড় মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের বিয়ে নিয়ে গণী মিয়া খুবই দুশ্চিন্তায় থাকে। মধ্যবিত্ত পরিবার। বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করতে পারে না। আবার টাকা জোগাড় হলেও উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যায় না। অবশেষে একটি ভালো ঘর থেকে সমন্ধ আসলো। ছেলে ব্যবসায়ী। দেখতে শুনতেও খারাপ না। ছেলের বাবার নামণ্ডডাকও আছে ভালোই। দুই পক্ষ বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিল এমন সময় ছেলের বাবা বলে উঠলেন গণী মিয়া এবার আসল কথায় এসো। ছেলেকে মানুষ করতে আমার বহুত পয়সা খরচ হয়েছে। আর সমাজে এখন টাকা ছাড়া মেয়ের বিয়েও হয় না তুমি ভালো করেই জানো। তোমার মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হলে দুই লখ টাকা দিতে হবে এবং মেয়েকে সাজিয়ে দিতে হবে। একথা শুনে গণী মিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। গণী মিয়া বললেন, টাকা ছাড়া মেয়ের বিয়ে দিতে পারবো না সেটা আমিও জানি। কিন্তু টাকার পরিমাণটা যে বেশি হয়ে গেল। ছেলের বাবার এক কথা এর কমে যেখানে পারো মেয়ের বিয়ে দাও সমস্যা নেই। তবে মনে রেখ এমন পাত্র কিন্তু আর পাবে না। শুরু হয়ে গেল দরকষাকষি। মনে হলো যেন গরুর হাট। এক পক্ষ দাম চাচ্ছে আরেক পক্ষ দাম করছে। অবশেষে ঠিক হলো দেড় লাখ টাকা যৌতুক আর মেয়েকে সাজিয়ে দিতে হবে। বিয়ে ঠিক হতো না যদি না ছেলের বাবা একটু দয়া দেখাতেন। গণী মিয়ার জমিজমা সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাতেও এত টাকা নাই। এদিকে ছেলের বাবা শর্ত দিয়েছেন সবকিছু নগদে পরিশোধ করতে হবে। গণী মিয়া খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। বিয়ের জন্য সময় আছে মাত্র ১৫ দিন। এর মধ্যে সবকিছু ব্যবস্থা করতে হবে। গণী মিয়া অনেক আশা নিয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তির কাছে টাকা ধার চাইতে গেলেন। কিন্তু কেউ ধার দিতে রাজি হলেন না। সুধের ব্যবসায়ীদের কাছে গেলেন তারাও এত টাকা দিতে রাজি হলো না। একজন কিছু টাকা চড়া সুধে ধার দিলেন। বাধ্য হয়ে গেল ব্যাংকে। কারণ এখনো বেশিরভাগ টাকাই জোগাড় হয়নি। ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে তাকে জামানত হিসেবে কোনো দলিল রাখতে হবে। নিরুপায় হয়ে বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে লোন নিলেন। ছেলে পক্ষ থেকে বলে দিল বিয়েতে ৫০ জন বরযাত্রী আসবে। গণী মিয়া যৌতুকের টাকা রেখে বাকি টাকা দিয়ে বিয়ের বাজার করলেন। কিছু টাকা দিয়ে গহনা অর্ডার দিলেন। বিয়ের দিন চলে আসলো। বরযাত্রীতে ৫০ জনের জায়গায় ৮০ জন এসেছে। গণী মিয়ারতো মাথায় হাত। এখন কি করবে। গহনার জন্য কিছু টাকা রেখেছিল সেই টাকা দিয়ে নতুন করে বাজার করে বর যাত্রীদের ভালোভাবে খাওয়ালেন। কারণ ঠিক মতো খাবার দিতে না পারলে যে মানসম্মান থাকবে না। দেখা গেল ৮০ জন মানুষ যে পরিমাণ খাবার নষ্ট করলো সেই খাবার দিয়ে আরো ২০ জন মানুষকে খাওয়ানো যেত। তুলকালাম কাণ্ড ঘটলো বিয়ে পড়ানোর সময়। কারণ টাকা ছাড়া গণী মিয়া গহনা আনতে ব্যর্থ হয়েছে। আর শর্ত মতে কন্যাকে সাজিয়ে দিতে না পারলে বিয়ে হবে না। ছেলের বাবা এবং ছেলে বিয়ের ঘোর বিরোধিতা করতে লাগলো। গণী মিয়া তাদের হাতে-পায়ে ধরে বললেন কিছু দিনের মধ্যেই তাদের সব গহনা বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছিলো না। একটা সময় বিয়ে বাড়িতে মারামারির মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়ে গেল। ছেলে এবং ছেলের বাবাকে শান্ত করতে গিয়ে হঠাৎ করে গণী মিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। মাথায় পানি ঢেলে কাজ না হওয়ায় কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে ছেলের বাবা তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ শেষ করে বর-কন্যাকে নিয়ে চলে গেলেন। বিয়েটা হয়ে গেল কিন্তু গণী মিয়ার অবস্থা ভালো না। পরীক্ষা করে দেখা গেল সে স্টোক করেছেন। তিনি প্যারালাইস্ট হয়ে গেলেন। এখন এ লোনের টাকা কে পরিশোধ করবে কেইবা সংসার চালাবে। বাংলাদেশে এমন হাজারো গণী মিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে মেয়ের বিয়ে দিতে। আসুন আমরা সচেতন হই ‘যৌতুককে না বলি’ আর ‘বিয়ে বাড়িতে খাবার অপচয় না করি’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত