ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বপ্নের যাত্রা

সুলেখা আক্তার শান্তা
স্বপ্নের যাত্রা

রুবির দাদির অন্তিম সময়। একদিন পুত্রকে কাছে পেয়ে শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে। মরার আগে নাত জামাইয়ের মুখ দেখে যেতে চায়। রুবির বিয়ের বয়স হয়নি। তাতে কী, মাতৃ আজ্ঞা বলে কথা। রুবির পিতা উঠে পড়ে লেগে যায় পাত্রের খোঁজে। কয়েক গ্রাম পর উজানপুর। সেই গ্রামে মনমতো পাত্র পাওয়া যায়। পাত্র নাহিদ দেখতে শুনতে ভালো, পরিবার সম্ভ্রান্ত এবং অবস্থাপন্ন। রুবির পিতা বেশ ঘটা করে কন্যার বিয়ের আয়োজন করে। ভালোয় ভালোয় শুভ কাজ সম্পন্ন হলেও গোল বাধে বিদায় পর্বে। রুবি কিছুতেই শ্বশুরবাড়ি যাবে না। অনেক উপদেশ নির্দেশে কোনো কাজ হয় না। শেষ পর্যন্ত সকলেই রণে ভঙ্গ দেয়। সিদ্ধান্ত হয় রুবি এ বাড়িতে থাকবে। এখানে আপন রাজ্যে সে-ই রাজা। কিছু না বুঝলেও অপর রাজ্যে প্রজা হয়ে থাকার বিষয়টি বোঝে। মুক্ত স্বাধীন বাবার বাড়ি। যখন যা ইচ্ছে দাবি করে পাওয়া যায় কিন্তু স্বামীর বাড়িতে তেমন হবার নয়। রুবির দাদি নাতিনকে নানাভাবে বুঝায়। স্বামীর মনে আঘাত দিতে নাই। তাতে স্ত্রীর অমঙ্গল হয়। স্বামীর বাড়ি মেয়েদের আসল বাড়ি। কালে কালে সেই বাড়িকে বুদ্ধি দিয়ে নিজের বাড়ি করে নিতে হয়। নাহলে পস্তাতে হয় সারাজীবন। কে শুনে কার কথা।

রুবি নাহিদকে দেখলে পলায়। নাহিদ একদিন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়িতে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে রুবির কান্নাকাটি থামে না। স্বামীর বাড়ি পর্যন্ত তার কান্না চলে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন দেখে বুঝতে পারে রুবি আসতে চায় নাই নাহিদ তাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। রুবি কিছুতেই থাকতে চায় না স্বামীর বাড়ি। সে চলে যাবার সুযোগ খোঁজে। ভাবে, কাউকে না জানিয়ে চলে যাবে বাপের বাড়ি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সত্যি একদিন চলে যায় বাপের বাড়ি। বকা খাওয়ার ভয়ে চাচির ঘরে আশ্রয় নেয়। চাচিকে বলে, আমাকে লুকিয়ে রাখো। সে মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারে না। ঠিকই ধরা পড়ে যায়। মা বলে, এই হলো তোর কাজ! কাউকে না জানিয়ে তুই পালিয়ে এসেছিস? মান ইজ্জতের মাথা কাটা যাবার অবস্থা। আমি তোর ভাত বাড়বো না। দেখি কতদিন না খেয়ে থাকতে পারিস? রুবিও জিদ করে খায় না। হঠাৎ করে রুবি পেট ব্যাথায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। মা আলেয়া মনে করে না খেয়ে থাকায় হয়তো পেটে ব্যথা। সে মেয়েকে আদর করে খেতে দেয়। কিন্তু রুবি খায় না, ব্যথায় ছটফট করে। রুবিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায় রুবির পেটে ক্যান্সার হয়েছে। এ কথা শুনে আলেয়া ভেঙ্গে পড়ে। কী সর্বনাশা রোগে ধরল তার এইটুকু মেয়েকে। রুবি দিন দিন বিছনায় কাতর হয়ে পড়ে। এরমধ্যে এক দিনের অসুস্থতায় দাদির মৃত্যু হয়। দাদির মৃত্যুতে আরো ভেঙে পড়ে রুবি। তাকে নিয়ে আড়ালে আবডালে আলোচনায় রুবি বুঝতে পারে তার নিশ্চিত মৃত্যুর কথা। দাদির কথাগুলো রুবির মনে পড়ে। একদিন সে মাকে বলে, মা আমাকে আমার স্বামীর বাড়ি দিয়ে আসো। আলেয়া আশ্চর্য হয়। যে মেয়ে কখনো স্বামীর বাড়ি যেতে চাইতো না আজ নিজেই স্বামীর বাড়ি সে যেতে চাচ্ছে। রুবিকে দ্রুত স্বামীর বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। দিন দিন তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রুবি আর স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যেতে চায় না। ধীরে ধীরে তার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। সেবা যত্নের জন্য মা রুবিকে নিজের কাছে নিয়ে রাখতে চায়। রুবি হাতের ইশারায় নিষেধ করে। সে স্বামীর বাড়ি থেকে যাবে না। এক সময় রুবির মৃত্যু হয়। মা আলেয়ার হৃদয়বিদারক বিলাপে ভারী হয়ে ওঠে চারিদিক। নাহিদ ভেঙে পড়ে। যে রুবি স্বামীর বাড়ি থাকতে চাইতো না আজ সেখানে এসেই সে চিরদিনের জন্য শুয়ে আছে। পরপারে শান্তিতে থাক, ওর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সবাই। নিশ্চিত মৃত্যু শ্বশুরবাড়িতে এসে বরণ করার জন্য তাকে অনেকে করে ধন্য ধন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত