নির্বাক ভালোবাসা

সুলেখা আক্তার শান্তা

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কলেজে একটা অনুষ্ঠান ছিল কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়েছে। মানুষের সমাগম ধীরে ধীরে কমছে। রোহান এই কলেজে ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। সোজা সরল প্রকৃতির যুবক। সে হন্তদন্ত হয়ে কলেজে ঢোকে। ব্যাগ রেখে কেয়াকে খুঁজতে যায়। কেয়াকে আগে দেখতে হবে তারপরে মনে শান্তি। কলেজে কেয়াকে না দেখতে পেলে সবার কাছে জিজ্ঞেস করে অস্থির করে তোলে। কেয়া বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি আমাকে খুঁজছো কেন? রোহান চুপ। কেয়ার সামনে কোনো কথা বলে না।

কী কথা বলছো না কেন?

তোমাকে না দেখলে ভালো লাগে না।

তোমার ভালো লাগে না বলে তুমি কলেজে জনে জনে জিজ্ঞেস করবে আমার কথা? এটা কেমন ব্যাপার!

কলেজে এসে আগে তোমাকে দেখতে চাই।

আমাকে দেখতে হবে না। যদি না দেখো কোথাও বুঝে নিবে আছি কিংবা কাজে ব্যস্ত আছি। খোঁজাখুঁজি করবে না। মনে থাকে যেন।

কেয়ার এসব কথা রোহানের মনে থাকে না, সে প্রতিদিন একই কাণ্ড করে বসে। কেয়াকে না দেখলেই খোঁজাখুঁজি শুরু করে। রোহানের এমন কাণ্ডে কেয়া ক্ষেপে যায়।

আমার কথা কি তোমার কানে ঢোকে না। তোমার কাজ তুমি করে যাচ্ছ। কেয়া কথা বললে রোহানের মুখে কথা নাই। কলেজে কারো সাথে কিছু হলে আগে এসে কেয়াকে বলতে হবে। না বলতে পারলে তার অস্থির লাগে।

রোহান তার বন্ধুদের বলে বেড়ায় কেয়াকে সে ভালোবাসে কেয়াও তাকে ভালোবাসে। একথা কেউ কেউ কেয়াকে জানায়। কেয়া বলে, রোহান আমাকে ভালোবাসার কথা বলে নাই আর বললেও ওকে আমি ভালোবাসি না। কলেজ ফ্রেন্ড মুন্নি কেয়াকে বলে, তুমি ভালো না বাসলে কি হবে রোহান তো তোমাকে ভালোবাসে। ও ভালোবাসুক, এটা একতরফা ভালোবাসা। মুন্নির কাছে এমন কথা শোনায় রোহান কাঁদতে শুরু করে। মুন্নি বিব্রত হয়ে বলে, কেয়া রাজি না হলে তুমি ওকে বুঝিয়ে রাজি করাও। সে জন্য তুমি কাঁদবে কেন? কাঁদলে কি সমস্যা সমাধান হবে?

রোহান উৎসাহী হয়ে বলে, আমি তো ওকে প্রচণ্ড ভালোবাসি কিন্তু ওর সামনে গেলে কথা খুঁজে পাই না। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায়।

মুন্নি বলে, ভালোবাসা হচ্ছে সাহসের ব্যাপার। তুমি ভালোবাসলে ওকে বলো তোমার ভালোবাসার কথা। তোমার ভালোবাসা দেখে ও একদিন ঠিকই তোমাকে ভালোবাসবে।

রোহানের আজ ভীষণ মন খারাপ। সে কারো সঙ্গে কথা বলে না। কেয়ার সামনে গিয়ে হঠাৎ বলে, তুমি কী আমাকে ভালোবাসবে আর ভালো না বাসলে আমি জীবন দিয়ে দেব। কেয়া এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। সে রোহানকে বোঝাতে চেষ্টা করে। রোহান অবুঝ।

তুমি আমাকে বোঝাচ্ছো কিন্তু কোন বুঝ আমার কাজে লাগছে না। আমার একই কথা তোমাকে আমি ভালোবাসি, তোমাকে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই।

কেয়া ক্ষেপে যায়, আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর কোনোদিন ভালোবাসবোও না।

রোহান সাহস সঞ্চয় করে কেয়ার মুখোমুখি দাঁড়ায়। আমার চোখের দিকে তাকাও এই চোখের ভাষা বুঝে নাও।

আমি এত ভাষা বুঝতে চাই না। তোমার ভাষা তুমি বোঝো। যে বুঝতে চায় না তাকে বুঝাতে চাও কেন তুমি?

কেয়া যতই তুমি আমাকে দূরে ঠেলো ততই তোমার জন্য আমার হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। তুমি আমাকে ভালোবাসো না এটা আমার মন বুঝতে চায় না।

তোমার মন কী চায় না চায় সেটা আমার বোঝার দরকার নাই। তুমি এক থাকতে পারো আমার ফ্রেন্ড হয়ে এর বাইরে কিছু না।

আমি তোমার অযোগ্য, দেখতে সুন্দর না।

তুমি দেখতে সুন্দর সবই তোমার ঠিক আছে কিন্তু আমার মন তোমাকে ভালোবাসে না।

তোমার মন আমাকে ভালোবাসে না, এ কথা বারবার কেন শোনাচ্ছো! কেয়া একবার তুমি আমাকে ভালোবেসে দেখো, তুমি কোনো দিক দিয়ে ঠকবে না।

ঠকা জেতার দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসে নেই আমি, ওজন করব জিতলাম কী হারলাম!

কেয়া আমি তোমার ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকলাম। তোমার ভালোবাসার অপেক্ষায় জনম জনম থাকব। দেখব আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে জয় করা যায় কি না।

রোহান অপেক্ষায় থাকে কেয়ার ভালোবাসা পাবার। কেয়া কিছুদিন কলেজে আসে না। কেয়ার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে কেয়ার বিয়ে। কেয়ার সামনে হাজির হয় সে। কেয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না।

কেয়া বলে, আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। আমি কেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না?

তুমি এই বিয়ে বন্ধ করো।

না, এই বিয়ে বন্ধ হবে না। এখানে আমার পরিবারের মান-সম্মান জড়িত। বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে ভেঙে দেওয়া কি মুখের কথা! আমার বাবা-মা মানুষের কাছে মুখ দেখাবে কী করে? সবাই অপমানিত হোক তুমি কি তাই চাও?

কেয়া এখানে মান সম্মান যাওয়ার কিছু নাই। আমি তো তোমাকে বিয়ে করব। রোহান কোনো যুক্তি দিয়ে কেয়াকে বুঝাতে পারে না। কেয়ার বিয়ে হয়ে যায়।

হঠাৎ এক ঘটনা ঘটে। রোহান চিৎকার করে কিছু বলতে চায়। সে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করে তার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। সে বারবার চেষ্টা করেও বিফল হয়। অনেক চিকিৎসা চলে, কিছুতেই কিছু হয় না। চিকিৎসকদের অভিমত আকস্মিক আঘাতের কারণে এমন ঘটতে পারে। বন্ধ হয়ে যায় রোহানের মুখের ভাষা, চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় তার কণ্ঠস্বর। নির্বাক রোহান ভাবে, তুমি তো সেই বিয়ে করলে। আমাকে বিয়ে করলে কি ক্ষতি হতো তোমার! আমি তোমাকে ভালোবাসি। পেলাম না তোমাকে, পেলাম না তোমার ভালোবাসা। একাকী রয়ে যাবে আমার জীবন। তুমি পরিপূর্ণ থাকো তোমার জীবন নিয়ে। আমি তোমাকে না পাওয়ার বেদনা নিয়ে দুঃখের স্রোতে ভেসে থাকি পৃথিবীর মহাসমুদ্রে।