নুসরাত সুলতানার গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

খদ্দের

বারনারী রেহানার তেরো বছরের

বান্ধা খদ্দের কাশেম ভুঁইয়া।

রেহানা তারে শুধুই দেহ দেয়নি।

ভক্তি দিতেও কার্পণ্য করেনি মোটেই।

সেই রেহানার মেয়ে শীলা যখন যৌবনবতী

দেহে তার বয়ে চলে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার স্রোত।

কাশেম ভুঁইয়ার চোখও উদ্ভ্রান্ত হয়।

রেহানার কানে ফিসফিসিয়ে বলে

এইবার তর মাইয়াডার শুভ শুরু করি

অর বুক আর পাছা বড় জ্বালাতন করে রে...

রেহানা আগুন চোখ বিস্ফারিত করে বলে- তরে আমি দ্যাবদা মানছিলাম!

অর বাপ ক্যাডা তুই জানস?

শালা বেজম্মা খদ্দের না অয় বাপ, না অয় দ্যাবদা।

টেকার মন্ত্র

টিকে থাকার মন্ত্র বেশ ভালো জানে পিঁপড়ে।

পিঁপড়েরা মারামারি না করে-

ভাগাভাগি করে নিতে জানে।

মন্দির-মসজিদ, বেশ্যালয়, বাড়ি-

সর্বত্র কেবল নিবিড় এবং নিরীহ প্রয়োজনে

মেতে থাকে।

দাঙ্গা নেই, হল্লা নেই-

চুপচাপ বুঝে নাও নিজের অনিবার্য প্রয়োজন।

মানুষের এত এত-

বুদ্ধিজীবী, ধর্মগুরু, কবি লেখক-

কেউ তো বলেনি-

নিজেকে ভালোবেসে আত্মস্থ হও,

নতজানু হও কেবল-

নিজের অনিবার্য প্রয়োজনের কাছে।

জীবন

ব্যাঙটি লাফিয়ে জলে পড়ল

দেবদারু গাছটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

শতবর্ষী বৃদ্ধ রোদে এলিয়ে দিয়েছে শরীর

মোটা পেটের শিশুটি নাকে সর্দি নিয়ে

নগ্ন নিতম্বে হুটোপুটি খাচ্ছে নিজের প্রস্রাবে।

বিনোদ বাবু হাঁক দিচ্ছে-

মাইরী আজ এক কাপ চা জুটল না!

গফুর শেখের তৃতীয় বিয়ের যুবতী বউয়ের

ডাসা স্তনের বোটায় তখন কামড় বসিয়েছে

বাঁধা হালুটি আঃ রশীদ

দিশেহারা

যতবার তোমার চোখে চিকচিক করতে দেখেছি বিরহের জল

ততবারই আমার নারী জন্ম সার্থক হয়েছে।

যতবার গভীর আলিঙ্গনে বেঁধেছ ততবারই

আমি জন্ম নিয়েছি প্রজাপতি দেবী হয়ে।

যতবার পুড়ে গেছি কাছে পাবার আকুল বাসনায়

ঠিক ততবারই আমি পলিমাটির মতো উর্বর হয়ে উঠেছি।

যে অনির্বাণ চিতা জ্বালিয়ে রেখেছ হৃদয়ের মধ্যিখানে

তাতে প্রতিদিন ঘি ঢালে হীরকচূর্ণ বিরহ।

এ বড় পোড়ায় গোঁসাই...

অবশ্য এ আগুন কেবলই মিঠে লাগে।

পোড়ার অনিন্দ্য আমোদে আমি দিশেহারা...

বেচা-কেনা

জোছনার এত শক্তি নেই যে- আমাকে বিবাগী করে।

এতটা জোর নেই খুল্লাম খুল্লাম প্রেমের যে

আমার রাতকে জাগিয়ে রাখে।

আমি পাহাড়ের কাছে শিখেছি অবিচল হতে।

বৃক্ষ শিখিয়েছে পরার্থপরতা।

তাই তো আত্মায় বুনেছি মানবতা নামক ধানের বীজ।

মননে-মগজে বুনেছি মাতৃত্বের চারা গাছ।

আমাকে চটুল প্রেমের দামে কিনতে এসো না-

হে সংস্কৃতিহীন সভ্য প্রেমিক।