ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রেম প্রকৃতি ও স্বাধীনতার কবি মহাদেব সাহা

এস ডি সুব্রত
প্রেম প্রকৃতি ও স্বাধীনতার কবি মহাদেব সাহা

‘ভুলে যাও, ভুলে যাওয়ার চেয়ে ভালো কিছু নেই

মানুষ অকারণেই মনে রাখতে বলে,

মনে রাখা শুধু কষ্ট পাওয়া, কেন কষ্ট পাবে?

ভুলে যাও, ভুলে যাওয়াই প্রকৃত সুখ, প্রকৃত বৈরাগ্য

ভুলে যেতে না পারলে কেউ বাঁচতে পারে না,’

(ভুলে যাওয়ার চেয়ে ভাল কিছু নেই- মহাদেব সাহা)

প্রকৃতির সব রূপ এবং অনুচ্চারিত মনের বাঙ্ময়তা মূর্ত হয়ে উঠতে দেখা যায় কবি মহাদেব সাহার কবিতায়। প্রকৃতির ছন্দ, নদীর বয়ে চলা, মানুষের আবেগ-নিস্তব্ধ, প্রায় অনুচ্চারিত অথচ ঋজু ঋদ্ধ ভাষায় তিনি ছড়িয়ে দেন কবিতায়। তার কবিতার পঙ্িক্তমালা পাঠককে আলোড়িত করে, জাগিয়ে তোলে, হৃদয়ে ছড়ায় ভালোবাসা, বিরহ যন্ত্রণা, দেয় আনন্দ বেদনার এক অবিমশ্র অনুভূতি। বাংলা কবিতার ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি। প্রেম, প্রকৃতি ও স্বাধীনতার কবি মহাদেব সাহা।

কবিতা, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গানসহ সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে বিচরণ মহাদেব সাহার। মানবতাবাদী কবি, প্রকৃতি ও প্রেমের কবি মহাদেব সাহা ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গদাধর সাহা এবং মাতা বিরাজমোহিনী সাহা। কবি মহাদেব সাহার স্ত্রী নীলা সাহা। দুইপুত্র তীর্থ সাহা ও সৌধ সাহা।

মহাদেব সাহা বগুড়ার ধুনট হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৬৭ সালে বাংলা সাহিত্যে অনার্স পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। কবি হওয়ার অদম্য বাসনা থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে ‘এই গৃহ এই সন্ন্যাস’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ব্যাপক পরিচিতি পান। মহাদেব সাহার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতমণ্ড এই গৃহ এই সন্ন্যাস, মানব এসেছি কাজে, চাই বিষ অমরতা, কী সুন্দর অন্ধ, তোমার পায়ের শব্দ, ধুলোমাটির মানুষ, ফুল কই শুধু অস্ত্রের উল্লাস, লাজুক লিরিক, আমি ছিন্নভিন্ন, মানুষ বড় ক্রন্দন জানে না, নির্বাচিত কবিতা, কোথা সে প্রেম, কোথা সে বিদ্রোহ, কোথায় যাই কার কাছে যাই ইত্যাদি। প্রবন্ধের মধ্যে, আনন্দের মৃত্যু নেই, কবিতার দেশ ও অন্যান্য ভাবনা, মহাদেব সাহার নির্বাচিত কলাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শিশুসাহিত্যের মধ্যে আছে টাপুর টুপুর মেঘের দুপুর, ছবি আঁকা পাখির পাখা,আকাশে ওড়া মাটির ঘোড়া, সরষে ফুলের নদী, আকাশে সোনার থালা, মহাদেব সাহার কিশোর কবিতা, ইত্যাদী। মহাদেব সাহার অনেক কবিতা ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, রুশ, হিন্দি, অসমীয়সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। মহাদেব সাহা তার কাব্য প্রতিভার জন্য অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মননার মধ্যে ১৯৯৫ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার, ২০০২ সালে খালেকদাদ চৌধূরী স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার অন্যতম। কবি মহাদেব সাহা প্রসঙ্গে প্রথাবিরোধী সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘আমার বেঁচে থাকা কয়েক দশক ধরে যেসব কারণে সুখের মনে হয়েছে, তার মধ্যে মহাদেব আছেন, তার কবিতা আছে। মহাদেব আপাদমস্তক কবি, তাকে দেখলেই তা বোঝা যায়। আমাকে দেখলে তা বোঝা যায় না; তার কবিতা তারই মতো কবিত্বময়।’

‘শকুনির কপট পাশায় সব অস্থির সব হারিয়ে এবার আমি রিক্ত যুধিষ্টির;’ (শকুনির পাশা-মহাদেব সাহা)

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত