ছুটি!
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ছুটি! শব্দটা শুনলেই ভেতরে কেমন একটা মুক্তি মুক্তি ভাব আসে। হোক না সেটা অল্প কিছু মুহূর্তের, অল্প কিছু দিনের। আমাদের পলায়ন প্রিয় মন কি এত কিছু ভাবে?
আমাদের সবার ক্ষেত্রেই ছুটির প্রতি কম বেশি দুর্বলতা রয়েছে। আর ছুটির প্রতি আমাদের এই দুর্বলতার শুরু সেই ছোট্ট কাল থেকে। ছুটির প্রতি দুর্বলতা বয়সের সাথে সাথে যেটি হয় সেটি হচ্ছে অবস্থানের স্থানান্তর। আরো একটু নিরসভাবে বললে- সেটা হচ্ছে ‘খাঁচার পরিবর্তন’।
আমার ‘প্রথম মুক্তির’ বা তীব্র ছুটির ইচ্ছার জন্ম হয়ে ছিল আরবি শিক্ষার কালে। ‘মক্তব’ শেষের ছুটি। ‘মেসাবজির’ বেত খাওয়া থেকে ছুটির পাওয়াটাই ছিল সর্বাগ্রে। কান দুটো সব সময় মেসাবজির ‘যাও, আইজ ছুটি’ শোনার প্রতীক্ষায় থাকত। আরেকটা ব্যাপার ছিল, পড়া পারা না পারার ব্যাপার। যে আগে ‘সবক’ দিতে পারত তার আগে ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত আগে। আর যে পারত না তার ছুটি পাওয়া ছিল ‘সবক’ দিতে পারা সাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে কোরআন শরীফ পড়ুয়ারাদের কায়দা সিফারা পড়ুয়াদের সবক নেয়ার দায়িত্ব পরত।
এর পর যে মুক্তির ইচ্ছা প্রবল ছিল ‘ক্লাস মুক্তি’। বিশেষ কোনো বিষয় বা স্যারের ক্লাস থেকে মুক্তির। এমন দিন ছিল যখন কায়মনে প্রার্থনা করতাম বিশেষ কোনো ক্লাস যেন না হয়, ছুটির ঘণ্টা যেন পড়ে তার আগে।
সেইসব তো অনেক আগের কথা। আমরা অনেকেই ভুলে যাই, ভুলে গেছি সেই সব পুরোনো ছোট খাট আনন্দের অনুভূতি। তাই বলে কি আমাদের ছুটির আকাঙ্ক্ষা কমে?
বয়সের সাথে সাথে ছুটির আকাঙ্ক্ষা যেন তীব্রতর হয়। হয়তো প্রকাশ ভিন্ন। আমাদের কারো কারো মধ্যে প্রকাশ পায় দীর্ঘশ্বাসের ভেতর দিয়ে। জীবনের চাকা ঘুড়াতে গিয়ে যখন জীবন হাঁপিয়ে উঠে, চারপাশ থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য মন ছটফট করে। সেই ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে ছুটির তৃঞ্চা বাড়ে বৈ কমে না। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে আমাদের মনকে যেন ছুটির নেশায় পেয়ে বসে। সপ্তাহ শেষে নির্দিষ্ট দিনের ছুটির অপেক্ষায় মন প্রাণ গলা কাটা মুরগির মতো চটপট করে। কখনো কখনো কাজের প্রতি প্রচণ্ড বিতৃষ্ণায় মন বিষিয়ে উঠে। তখন লম্বা একটা ছুটির চুরি বুকে আঁছড় কাটে। আবার এমনও হয়, যে মায়া আর মহব্বত দিয়ে গড়া ঘর সংসার- কারো কারো পলাতক মন সেই ঘর সংসার থেকে ছুটি পেতে চায়। সাংসারিক চাহিদা, জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিলাতে গিয়ে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠেন। তখন বুকের ভেতর এক স্বার্থপর ছুটির আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়।
এই ছুটির পিছনেই যেন জীবন। আর একদিন সেই জীবনের কাছ থেকেই ছুটি নিতে প্রস্তুত হতে হয়। বার্ধক্য কিংবা অসুস্থতায়, জীবনের চাকা অনেকটা যখন শীতল হয়ে আসে, মানব মন প্রস্তুত হয় চির দিনের জন্য ছুটি নিতে। কিন্তু সেই পুরাতন বাধা। ছুটি চাইলেই কি ছুটি পাওয়া যায়? কেউ কি তার নিজের ছুটি নিজে দিতে পারে? তাই অপেক্ষা...।
বয়স ভেদে ছুটির আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা কম বেশি হতে পারে; কিন্তু মনের কোণে তার উপস্থিতি কেউই অস্বীকার করতে পারি না।
আমার মনে হয়, স্বপ্ন, আশা ইত্যাদিরর মত ছুটির আকাঙ্ক্ষাও মানব জীবনকে সচল রাখতে টনিক হিসেবে কাজ করে।
স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদি ছুটির আকাঙ্ক্ষা জীবনভরই থেকে যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সকল ছুটির আকাঙ্ক্ষা একটি ছুটিতে এসে থেমে যায়। জীবন থেকে ছুটির। কেবল অন্তিম ছুটির ঘণ্টাই পারে সকল ছুটির আকাঙ্ক্ষা থেকে ছুটি দিতে।