হান কাং : হ্যালো?
জেনি রাইডেন : হ্যালো, আপনি কি হান কাং?
হান কাং : হ্যাঁ।
জেনি রাইডেন : আমার নাম জেনি রাইডেন। নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে আমি আপনাকে ফোন করেছি।
হান কাং : হুম, আপনার সঙ্গে কথা বলতে বেশ ভালো লাগছে।
জেনি রাইডেন : আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমারও বেশ ভালো লাগছে। অনুগ্রহ করে সবকিছুর আগে আপনি আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
হান কাং : ধন্যবাদ। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
জেনি রাইডেন : এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী?
হান কাং : আমি বেশ অবাক হয়েছি। বেশ সম্মানিত বোধ করছি।
জেনি রাইডেন : আপনি পুরস্কারের খবরটি কীভাবে জানলেন?
হান কাং : কেউ একজন ফোন করে আমাকে খবরটি দিয়েছিলেন। খবরটি আমাকে অবশ্য বেশ অবাক করেছিল। আমার ছেলের সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করার পরপরই আমি খবরটি পাই। তখন কেবল সন্ধ্যা (রাত) আটটা বাজে। বুঝতেই পারছেন, আমার জন্য এটা একটি বেশ শান্তিময় সন্ধ্যা ছিল। আমি আসলেই বেশ অবাক হয়েছিলাম।
জেনি রাইডেন : আপনি বললেন আপনি আপনার ছেলের সঙ্গে আছেন। আপনার নোবেল পাওয়া নিয়ে তার প্রতিক্রিয়াটি কেমন ছিল?
হান কাং : আমার ছেলেও বেশ অবাক হয়েছিল। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কথা বলার বেশি একটা সময় পাইনি। (কারণ) আমরা দুজনেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আর (ওই মুহূর্তে) ওটাই ছিল সবকিছু।
জেনি রাইডেন : আপনার কাছে সাহিত্যে নোবেল পাওয়াটা কী অর্থ বহন করে?
হান কাং : আচ্ছা, আমি বেশ সম্মানিত বোধ করছি। আমি আপনার সমর্থন ও এই পুরস্কারের সমর্থনের আন্তরিক প্রশংসা করছি।
জেনি রাইডেন : দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাহিত্যে আপনিই প্রথম নোবেল পেলেন। এই অনুভূতিটি কেমন?
হান কাং : আপনি জানেন আমি বই পড়তে পড়তে বেড়ে উঠেছি। শৈশব থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস। কোরীয় ভাষা ও অনুবাদণ্ড উভয় ধরনের বই পড়তে পড়তেই আমি বড় হয়েছি। তাই আমি বলতে চাই, কোরিয়ার সাহিত্যকে সঙ্গী করেই আমি বেড়ে উঠেছি। কোরিয়ার সাহিত্যের সঙ্গে আমি বেশ ঘনিষ্ঠতা বোধ করি। তাই (আমার পুরস্কার পাওয়া) এটি কোরীয় সাহিত্যের পাঠক, আমার বন্ধু ও লেখকদের জন্য একটি চমৎকার খবর বলে আমার মনে হচ্ছে।
জেনি রাইডেন : আপনি একটি সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন। কোন কোন লেখকরা আপনার প্রেরণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস?
হান কাং : শৈশব থেকেই আমার কাছে লেখকদের ব্যাপারে একটি সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তারা জীবনের অর্থ অনুসন্ধান করেছেন। কখনো কখনো তারা হার মেনেছেন। কখনো কখনো তারা অবিচল থেকেছেন। তাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা ও শক্তি আমার প্রেরণা। তাই প্রেরণা হিসেবে কয়েকজনের নাম বলাটা আমার জন্য বেশ কঠিন। এটা আমার জন্য আসলেই দারুণ কঠিন।
জেনি রাইডেন : আমি কোথাও পড়েছিলাম সুইডেনের লেখক অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন আপনার অন্যতম প্রেরণার উৎস?
হান কাং : হ্যাঁ। শৈশবে আমার তার ‘লায়নহার্ট ব্রাদার্স’ পড়তে ভালো লেগেছিল। বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
কিন্তু এর অর্থ এই না যে, তিনিই একমাত্র লেখক যিনি আমাকে শৈশবে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। লায়নহার্ট ব্রাদার্স পড়ার সময় মানুষ, জীবন ও মৃত্যু নিয়ে বইটির সঙ্গে আমার বিভিন্ন প্রশ্নের মিল খুঁজে পেয়েছিলাম ।
জেনি রাইডেন : যে সব ব্যক্তি সবে আপনার কাজ সম্পর্কে জেনেছেন, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? তারা আপনার কোন বই দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়?
হান কাং : আমার বইয়ের কথা বলছেন? আমি মনে করি প্রত্যেক লেখক তার সর্বশেষ বইকে বেশি পছন্দ করেন। নতুন পাঠকেরা চাইলে আমার সর্বশেষ বই ‘উই ডু নট পার্ট’ দিয়ে শুরু করতে পারেন।
ইংরেজি অনুবাদে বইটার আরও দুটি শিরোনাম হতে পারে ‘আই ডু নট বিড ফেয়ারওয়েল’ বা ‘ইম্পসিবল গুডবাইস’। আমার মনে হয় এটা দিয়ে শুরু করাটা তাদের জন্য ভালো। (আমার এর আগের বই) হিউম্যান অ্যাক্টস সরাসরি উই ডু নট পার্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর পর তারা দ্য হোয়াইট বুক পড়তে পারেন। এটা আমার আত্মজীবনীমূলক বই। পাঠকেরা দ্য ভেজেটারিয়ান দিয়েও শুরু করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় উই ডু নট পার্ট দিয়ে শুরু করাটা ভালো।
জেনি রাইডেন : বিদেশি পাঠকদের কাছে সম্ভবত দ্য ভেজেটারিয়ান সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই উপন্যাস নিয়ে কিছু বলুন।
হান কাং : এটি আমি তিন বছর ধরে লিখেছিলাম। কিছু কারণে ওই তিন বছর আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমাকে প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং সেই নারী চরিত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা অন্যান্য চরিত্রগুলোর চিত্রকল্প খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। বর্ণনায় থাকা গাছপালা ও সূর্যকিরণের চিত্রকল্পের জন্যও আমাকে হাঁটুভাঙা পরিশ্রম করতে হয়েছিল।
জেরি রাইডেন : শেষ প্রশ্ন, নোবেল পুরস্কার পাওয়াটি আপনি কীভাবে উদ্?যাপন করবেন? কিছু ভেবেছেন কি?
হান কাং : আপনার সঙ্গে কথা শেষ করে আমি চা পান করার কথা ভাবছি। আমি মদ পান করি না। আমি আমার ছেলের সঙ্গে বসে চা খাব। আজ রাতে নীরবেই আমি নোবেল পাওয়াটা উদ্?যাপন করব।
জেনি রাইডেন : বেশ চমৎকার। আপনাকে আবারও অসংখ্য অভিনন্দন। অনেক ধন্যবাদ।
হান কাং : ধন্যবাদ।
জেনি রাইডেন : ঠিক আছে। ভালো থাকবেন।
হান কাং : আপনিও ভালো থাকবেন।
উল্লেখ্য, হান কাংয়ের ‘উই ডোন্ট নট পার্ট’ উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। উপন্যাসটির প্রকাশক পেঙ্গুইন বুকস।