হুমায়ূন আহমেদের অসামান্য এক উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। উপন্যাসে সমকালীন সাহিত্যের অনুষঙ্গ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ এসেছে। কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ তা ধারণ করেছেন হৃদয়ে। উপন্যাসে বহিঃবাস্তব চিন্তা ও সংগ্রামী জনতার অংশগ্রহণ প্রকাশেও তিনি যত্নশীল ছিলেন। বলাবাহুল্য তিনি ঐতিহ্যসচেতন, বাস্তববাদী শিল্পী ও অনন্য এক শব্দ কারিগর। উপন্যাসের পূর্ব কথায় লেখক লিখেছেন- মুক্তিযুদ্ধের আনন্দ, বেদনা, হতাশা, গ্লানি নিয়ে বেশ কিছু ছোটগল্প লিখেছি। কয়েকটা উপন্যাসও লিখেছি। একসময় মনে হলো, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে রাখার জন্য একটা উপন্যাস লেখা উচিত। মানুষকে যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। একজন লেখক সেই ঋণ শোধ করেন লেখার মাধ্যমে। লেখা শুরু করলাম। জোছনা ও জননীর গল্প ধারাবাহিকভাবে ভোরের কাগজে ছাপা হতে লাগল। আমি কখনোই কোনো ধারাবাহিক লেখা শেষ করতে পারি না। এটিও পারলাম না। ছয়-সাত কিস্তি লিখে লেখা বন্ধ করে দিলাম। দুবছর পর আবার শুরু করলাম। আবারো কয়েক কিস্তি লিখে লেখা বন্ধ। আর লেখা হয় না। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে- তখন নিজেকে এই বলে সান্ত¡না দেই যে, লিখব একদিন লিখব। ব্যস্ততা কমলেই লেখা শুরু করব। এখনো সময় আছে। অনেক সময়। একদিন হঠাৎ টের পেলাম অনেক সময় আমার হাতে নেই। সময় শেষ হয়ে গেছে। জোছনা ও জননীর গল্প আর লেখা হবে না। তখন আমি শুয়ে আছি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের একটা ট্রলিতে। দুজন নার্সট্রিলি ঠেলে আমাকে অপারেটিং টেবিলে নিয়ে যাচ্ছেন। ওপেন হার্ট সার্জারি হবে। আমাকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। চোখের পাতা ভারী হতে শুরু করেছে। হাসপাতালের আলোর তীব্রতা দ্রুত কমে যাচ্ছে। যখন অচেতন হতে শুরু করেছি, তখন মনে হলো জোছনা ও জননীর গল্প তো লেখা হলো না।
আমাকে যদি আর একবার পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়- আমি এই লেখাটি অবশ্যই শেষ করব। অচেতন হবার আগ মুহূর্তে হঠাৎ আনন্দে অভিভূত হলাম। কারণ তখনই প্রথম টের পেলাম আমি আসলেই একজন লেখক। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যাবার আগের মুহূর্তে অসমাপ্ত লেখার চিন্তাই ছিল আমার একমাত্র চিন্তা। দেশে ফিরে লেখায় হাত দিলাম। শরীর খুব দুর্বল। দিনে দুই তিন পাতার বেশি লিখতে পারি না। এইভাবেই লেখা শেষ করেছি। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি দেশমাতার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করেছি। এই আনন্দের কোনো সীমা নেই। বইটির ধরন সম্পর্কে হুমায়ুন আহমেদ নিজেই বলেছেন, জোছনা ও জননীর গল্প কোনো ইতিহাসের বই না, এটা একটা উপন্যাস। তবে তিনি ইতিহাসের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন। নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক মাওলানা ইরতাজ উদ্দিন কাশেমপুরী। তার ছোট ভাই শাহেদ। ভাইয়ের স্ত্রী আসমানী ও তাদের মেয়ে রুনিকে নিয়েই ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। আর এদের ঘিরে আছে আরো বেশকিছু চরিত্র। গ্রামে বাস করেন মাওলানা ইরতাজ উদ্দিন। একজন সহজ সরল মানুষ। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ছোট ভাই শাহেদকে খুঁজতে ঢাকায় আসেন। উপন্যাসের শুরু এভাবেই। ইরতাজ উদ্দিন স্কুলের শিক্ষক। মসজিদের ইমাম। পাকিস্তানের একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি নামাজের পর পাকিস্তানের জন্য দোয়া করেন। একসময় নিজের চোখে তাদের নৃশংসতা দেখেন। পাকিস্তানি বাহিনীর চরম নির্যাতনে ভীষণ কষ্ট পান। একদিন দেখেন পরেশ, মুকুল সাহাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের চারজনকে ধরে এনেছে। তাদের মুসলমান করা হবে। সবার সামনে উৎসব করে কলেমা পড়ানো হবে।
মুসলমান হওয়ার পর এদের নাম হবে- আব্দুর রহমান, আব্দুল কাদের, আব্দুল সালেহ, আব্দুল হক। অথচ ইরতাজ উদ্দিন জানেন প্রত্যেকে তার নিজের ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী। এখানে কোনো জবরদস্তি নেই। ২৫ মার্চের পর যাদের দাড়ি আছে কলমা জানে, এ রকম মুসলমানদের কিছু বলে না। চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়েরও অনেকে ভয়ে দাড়ি রাখে টুপি পরে। কানে আতর দেয়। কিন্তু মিলিটারিরা লুঙ্গি খুলে দেখে। আবার নারীদের ক্ষেত্রে কুমারী, বিবাহিত, অবিবাহিত, বিধবা এসব তাদের কাছে কোনো ব্যাপার না। সবাইকে নির্বিচারে নির্যাতন করে। দেশীয় দুশমনেরা তাদের ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে দেয়। মানুষ একটা পিঁপড়া দেখলেও তার গায়ে পাড়া দেয় না। আর এরা মানুষ মারছে পিঁপড়ার মতো। এসব কর্মকাণ্ড দেখে দেখে ইরতাজ উদ্দিন বিষণ্ণ হন এবং ঘোষণা করেন, জুমার নামাজ পড়াবেন না। পরাধীন দেশে জুমার নামাজ হয় না। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন বাসেতের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইরতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি একজন খাঁটি মুসলমান। একজন খাঁটি মুসলমানের উচিত জালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা।’ ক্যাপ্টেন বাসেত ইতরাজ উদ্দিনকে উলঙ্গ করে সারা গ্রাম ঘুরায়। শেষে তাকে সোহাগী নদীর পাড়ে হত্যা করে।
ইরতাজ উদ্দিন হাজার ইরতাজ উদ্দিনের প্রতীক। এরা প্রথমে পাকিস্তানকে সমর্থন করে। কিন্তু একসময় এ ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। বুঝতে পারে পাকিস্তানিরা অমানুষ। পশুর চেয়েও অধম।
ইরতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। সে যুদ্ধ করেনি। কিন্তু এক দুর্বিষহ মানসিক যুদ্ধে তার ৯ মাস কেটেছে। বিহারি অফিসে কাজ করে। দেশের অবস্থা এমন, যেকোনো সময় যুদ্ধ বেধে যাবে। শাহেদের স্ত্রী আসমানি। দুজনের মধ্যে প্রায়ই খুনসুটি হয়। আবার একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু একদিন অভিমানে বাসা ছেড়ে চলে যায় আসমানী। এক সন্ধ্যায় শাহেদ দেখে আসমানী বাসায় নেই। যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সব জায়গায় খুঁজতে থাকে। কোথাও পায় না। যুদ্ধের শুরুতেই আসমানী হারিয়ে যায়। ৯ মাস ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্যে আসমানীকে খুঁজতে থাকে শাহেদ। যুদ্ধের বছর এমন অগণিত শাহেদ প্রিয়জনকে খুঁজে ফেরে। শাহেদ হচ্ছে অসংখ্য প্রিয়জন হারানোর একজন, আবার শাহেদ হচ্ছে বিশেষ ভাগ্যবানদেরও একজন। যুদ্ধ শেষে সে আসমানীকে ভারতে খুঁজে পেয়েছিল। শাহেদের মাধ্যমে যুদ্ধের পুরা সময়টাকে ধরে রাখা হয়েছে।
কংকন ও রুনি এ উপন্যাসের শিশু চরিত্র। হঠাৎ পাকিস্তানিরা কংকনদের এলাকা আক্রমণ কারে। ঘর থেকে বের হলে মৃত্যু। ঘরে থাকলেও মৃত্যু। একসময় হাজারও মানুষের সঙ্গে মায়ের হাত ধরে বের হয় কংকন। পেছনে গুলি আর কামানের শব্দ। দিগ্?বিদিক মানুষের ছোটাছুটি। কখন যে মায়ের হাত থেকে সে ছুটে যায়, কেউ টের পায়নি। নিয়তির অমোঘ নিয়মে আগরতলা শরণার্থীশিবিরে কংকনকেও খুঁজে পায় মা। রুনি অনেক কষ্টে মা আসমানীর সঙ্গে শরণার্থী শিবিরে পৌঁছায়। শিবিরের অবস্থা ভয়াবহ অমানবিক। জীবনের কোনো ছিটেফোঁটা নেই। ছোট্ট রুনি অনেক খারাপ কথা শেখে। আসমানীকে এসব অনেক কষ্ট দেয়। রুনি একদিন কার হাতে যেন সন্দেশ দেখে। মার কাছে সন্দেশ খেতে চায়। এ জন্য মাকে বারবার বিরক্ত করে। আসমানি প্রচণ্ড জোরে তাকে চড় দেয়। রাতে রুনির ভয়ানক জ্বর আসে। মা মনের কষ্টে শব্দহীন সারা রাত কাঁদতে থাকে। রুনি ঘুম থেকে উঠে বলে, মা আমি আর কোনো দিন সন্দেশ খাব না। রুনির কথায় সমস্ত শরীর ভেঙে কান্না আসে আসমানীর। উপন্যাসে রুনি, আসমানী, কংকন, কংকনের মা এরা প্রতীকী হিসেবে এসেছে। এটি হলো এক কোটি শরণার্থী মানুষের জীবনের চিত্র।
এ উপন্যাসে কলিমুল্লাহ হচ্ছে রাজাকারদের প্রতিনিধি। দেশের মানুষদের ধরিয়ে দেয়। হিন্দুদের বাড়ি দখল করে। একেবারে যুদ্ধের শেষ সময় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা জোহর। যুদ্ধের ৯ মাস জোহরের সঙ্গে কলিমুল্লাহর একধরনের যোগাযোগ থাকে। কলিমুল্লাহর অন্যায়-অপকর্ম ভণ্ডামি দেখতে দেখতে জোহর বিরক্ত। কোন কোন বিষয়ে উপন্যাসের লেখক হুমায়ূন আহমেদ মন খারাপ করেছেন। দেশের নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করেছে। তাদের অনেকের বিস্ময়কর শক্তি, সাহস ও বীরত্বে অনেক জনপদের জীবন রক্ষা পেয়েছে। কখনো নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জন্য বেঁচে গেছেন। ‘জোছনা ও জননীর গল্পে’ রফিক, কায়েস এমন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যূনতম সম্মানটুকু তারা পায়নি ।
উপন্যাসটিতে আছে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা। রাজাকারদের বর্বরতা। জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, লুটপাট। একই সঙ্গে এ দেশের নিয়মিত ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্ময়কর বীরত্ব। আত্মত্যাগ। আবার আসলাম খার মতো মানুষ, যারা বিহারি, পাকিস্তানি হয়েও সহযোগিতা করেছে। সবার বীরত্ব ও আত্মত্যাগের জন্যই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। যুদ্ধ শেষে ফিরে আসতে পারেননি নাঈমুলের মতো হাজারও মুক্তিযোদ্ধা। মরিয়মের মতো নববধূরা তাদের প্রাণের মানুষ ফিরে পাননি আর কোনো দিন। নাঈমুল না ফেরা মুক্তিযোদ্ধা স্বামীদের প্রতীকী। মরিয়ম স্বামীহারা নারীদের প্রতীকী। যুদ্ধকালীন বাঙালির সাদামাটা জীবনপ্রবাহ ও বৈবাহিক জীবনযাপনের চিত্রও উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। শাহেদ ও আসমানী, কলিমউল্লাহ ও মাসুমা তারই চরিত্ররূপ। শাহেদের অগোছালো অফিস হলো সাদামাটা দৃশ্যের অবতারণা। শাহেদের স্ত্রী আসমানী রাগ করে বাসা ছেড়েছিল। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে বাসা ত্যাগ করে। সামান্য কিছুতে সে রেগে যায়।
বৈবাহিক জীবন ও শূন্যতা গ্রথিত হয়েছে। দেওয়ান চরিত্রে মাধ্যমে বাঙালির মধ্যে যারা সংগ্রামকে কটূক্তি করছে। তা দেখে তিনি যে চিত্রাভাষ্য দেখিয়েছেন। তাতে অনুষঙ্গ আরও স্পষ্ট হয়েছে। চারদিকে গুলি ও বারুদের শব্দ, রাস্তাঘাট জনশূন্য। চোখের সামনে ধ্বংস দেখে বারান্দায় এগিয়ে আসছে মানুষ। তারা সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আগুনে আলোকিত সারা শহর। জ্বলছে আগুন পুড়ছে শহর ও মানুষ। হঠাৎ তা বন্ধ হয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল ছেড়ে পলায়ন করে মানুষ।লেখকের পরিবারও দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বাবা ফয়জুর রহমান মা আয়শা বেগম তারা কলকাতায় যাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছে। যাবার রাস্তা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে। অনেকে যাত্রী হবে। জলদস্যুদের আক্রমণ ও মিলিটারিদের খবর ও টহল দিচ্ছে।
আয়শা বেগম এমতাবস্থায় পাড়ি দিতে অসম্মত। তার ছেলেকে নিয়ে তিনি চিন্তিত। মা ছেলেদের জন্য কাঁদছেন। তারা দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা রাইফেল নিয়ে দৌড়ায় তাই মিলিটারিরা তাদের হাতছাড়া করবে না। হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে। শেষ আশ্রয় হওয়া সত্ত্বেও আয়শা বেগম অনিশ্চিত ছিলেন। হিন্দুরা বেশি আতঙ্কিত ছিল। ধরা পড়লে তাদের রক্ষা ছিল না। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, স্ত্রী-সন্তান এবং পুত্র হারিয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্ত্রীর সাথে স্বামীর সাক্ষাৎ দেখান হয়েছে। মরিয়ম ও নাইমুল চরিত্রের মাধ্যমে। এভাবে কত পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে বা সংশয় নিয়ে বাড়ি ফিরছে। ধীরে ধীরে মুক্তির সুবাতাস পাচ্ছে। কিন্তু ফিরেনি স্বামী ও স্ত্রী পুত্র বা স্বজন। কেবল স্বপ্ন ও কল্পনা প্রসূত হয়েছে। তবুও ধমনী উজ্জীবিত হয়েছে কারণ মাটি হায়েনামুক্ত। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ ক্ষরণের পর দেখা গেল স্বাধীনতার সূর্য। পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পথ বেঁচে নেয়। সেখানে সাহসী ভূমিকা রেখেছে বাঙালি বীর সেনানী। জেনারেল নিয়াজী যে চিরকুট গ্রহণ করেছে। তাদের পরাস্ত করেছে কাদের সিদ্দিকীর মতো দেশপ্রেমিক। যার উপাধি বঙ্গবীর। সেসময় তার চুল লম্বা থাকায় তাকে চেগুয়েভারার মতো মনে হতো। জেনারেল নিয়াজী করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে তিনি মুখের উপর বললেন নারী ও শিশু হত্যাকারীদের সাথে তিনি করমর্দন করেন না।
স্বাধীনতার পর সব মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। প্রিয়জনের শূন্যতা ও স্বাধীনতার পূর্ণতা তারা উপভোগ করতে লাগল। সববয়সী মানুষ জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করছে। কিন্তু স্বামী হারানোর বেদনা মরিয়মের মধ্যে রয়ে গেল। নাইমুল আসার কথা থাকলে সে আসেনি। মুক্ত হয়েছে দেশ ও সমাজ। লেখক আন্তঃসম্পর্ক ও সময়কে ধারণ করে সাহিত্যের ভাষায় তা প্রকাশ করেছেন সাবলীলভাবে নিজের স্বতন্ত্রমণ্ডিত লেখনীর বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষের এক অমানবিক জীবনের উপাখ্যান জননী ও জোছনার গল্প উপন্যাস। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে একাকার হয়ে আছে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে।