ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিবাগি পথিক কবি হেলাল হাফিজ

রায়হান উল্লাহ
বিবাগি পথিক কবি হেলাল হাফিজ

হেলাল হাফিজ ৭৬ বছর বয়সে গত ১৩ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি প্রকৃতই কবি। সৃষ্টিকর্তা তাকে কবি হওয়ার সব অনুষঙ্গ দিয়েছেন। চিরকুমার ছিলেন; ছিলেন প্রেমিক পুরুষও। প্রথম জীবনে প্রেমিকা হেলেনকে হারিয়েছেন। এতে তার কবি হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। জন্মেছেন পাকিস্তান আমলে। এতে বায়ান্ন, ঊনসত্তর ও একাত্তরের উত্তাল সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন। এটিও তাকে সংগ্রামী হতে সাহায্য করেছে। কবি হওয়ার মূল শর্তই আগে সংগ্রামী হওয়া। জন্মের পরই দেখেছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল; বাংলা সাহিত্যের তীর্থভূমি। এটিও তাকে কবি হতে সাহায্য করেছে। কিছু সময় ছিলেন অনিশ্চয়তার সাংবাদিকতা পেশায়। কবি হওয়ার পথেও তা সহায়ক হয়েছে। যদিও বলা হয়, কবিত্ব নষ্ট করে সাংবাদিকতা। এবং তা বহুলাংশে ঠিক।

হেলাল হাফিজ দেশ কিংবা দশের নজরে এনেছেন নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতা দিয়ে। ঊনসত্তরের উত্তাল সময়ে লেখা কবিতাটি দ্রোহ শেখায়। এর প্রতিটি পঙ্ক্তি শিহরণ জাগায়। ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।/মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।/সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,/ কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার/ কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার।...’

এই কবিতাটি লেখার পটভূমি ঊনসত্তর। হেলাল হাফিজের ভাষ্য ছিল, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে একদিন সন্ধ্যায় আমি পুরান ঢাকা থেকে ইকবাল হলে (এখন সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ফিরছিলাম। তখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় আমার রিকশাটি থামল। সেখানে তখন সমানে মিছিল চলছে। ইপিআর (এখন বিজিবি) ও পুলিশ মিছিলকারীদের পেটাচ্ছে, ধাওয়া দিচ্ছে। মিছিল থেকেও ছোড়া হচ্ছে ইটপাটকেল। এর মধ্যে বয়স্ক এক রিকশাচালক বয়স্ক বলে উঠলেন, ‘মার, মার শালাদের। প্রেমের জন্য কোনো কোনো সময় মার্ডারও করা যায়।’ রিকশাওয়ালারা মাঝেমধ্যে টুকটাক ইংরেজি শব্দও বলে। কথাটি আমার মগজে ও মনে গেঁথে গেল। আসলেই তো তাই! দেশপ্রেমের জন্যও তো মার্ডার করা যেতে পারে। ওই ঘটনা থেকেই কবিতাটির জন্ম।

এরই মধ্যে অগ্রজ ও সমকালীন কবি-লেখকদের সঙ্গে চেনা-জানা হয়ে গেছে হেলাল হাফিজের। আহমদ ছফা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতাটি দেখে কোনো মন্তব্য করলেন না। আরেক কবি হুমায়ুন কবিরকে সঙ্গে নিয়ে সোজা চলে গেলেন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার দপ্তরে। সফেদ চুলের এক কবির কাছে কবিতাটি দিয়ে চুপ করে থাকলেন। অগ্রজ সেই কবি কবিতায় চোখ বুলাতে লাগলেন। সফেদ চুলের সেই কবি, আহসান হাবীব, যিনি তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন, যিনি জীবৎকালেই হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি, তিনি মিষ্টি করে হেসে বললেন, ‘এই কবিতাটি ছাপা যাবে না। ছাপলে আমার চাকরিটা চলে যাবে। পত্রিকা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তবে একটি কথা বলি, হেলালের আর কোনো কবিতা না লিখলেও চলবে।’

‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ নামের সেই কবিতা ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে স্লোগানের মতো করে লেখা হলো। সেই থেকে স্বাধীনতাকামী প্রতিটি মানুষের আপন সত্তা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়।

একইসঙ্গে কবিও আমাদের একান্ত সখা। কবিতার সঙ্গে ঘরবসতি করেই এগিয়ে গেলেন কবি। মধ্যে অনেকটা সময় হারিয়েও গেলেন। অনেকেই তখন ভাবতেন হেলাল হাফিজ মারা গেছেন কিংবা বিদেশ বিভুইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন। তখন জুয়া খেলে কাটত তার সময়। নিজেই জানিয়েছেন জুয়ায় তার ভাগ্য বরাবরই ভালো। জিতে যেতেন অধিকাংশ সময়। এই করেই বোহেমিয়ান জীবনেই ছিলেন আমৃত্যু। তোপখানা রোডের হোটেল, জাতীয় প্রেসক্লাবে থেকে জীবন কাটছিল। মানুষ জমাতেন তিনি। নারীরাও ভিড় করতেন তার কাছে। কিন্তু নারীর জন্য হাহাকারই তাকে কবি বানিয়েছে। হেলেন থেকে শুরু। এর মাঝে দেশ থেকে বিতাড়িত-বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনও আছেন।

শেষ জীবনে হেলাল হাফিজের অনুধাবন হয়েছে একটি জীবনের বিনিময়ে কবি হয়েছেন তিনি। হয়তো মাঝে মাঝে কষ্টও হয়েছে। আরো অনেককিছু লেখার ছিল। আরো অনেক কথা বলার ছিল। বার্ধক্য এসে ধরা দেয়। কবি একাধিকবার অনিচ্ছায় হাসপাতালে ভর্তি হন। কিছু সময় থাকেন এক নারী ভক্তের বাসায়। কতদিনই আর থাকা যায়? শেষ সময়ে থাকতে শুরু করেন শাহবাগের একটি হোস্টেলে। সেখানেই বাথরুমে পড়ে মাথায় আঘাত পান। রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। মৃত অবস্থাতেই তাকে পাশের রুমের মানুষরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। একটি কাব্য ও কবিতার অধ্যায়ের সমাপ্তি।

আসলেই কি সমাপ্তি। না, এখন অন্যভাবে আলোচনা হবেন কবি হেলাল হাফিজ, হচ্ছেনও। মানুষটি একাকী বেদনাকে সঙ্গী করে বসবাস করেছেন। এখন আমরা মুখর তার সৃষ্টির প্রচারে। এই কবি। একটি জীবন খরচা করে লিখে গেছেন কবিতা।

হেলাল হাফিজ যে কবি; তা ঈশ্বরপ্রদত্ত। তার কবি হওয়ার সব ব্যবস্থা করেছেন খোদ স্রষ্টাই। মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে; যে জলে আগুন জ্বলে, কবিতা একাত্তর (যে জলে আগুন জ্বলের কিছু কবিতা এখানেও থেকেছে) এবং বেদনাকে বলেছি কেঁদো না। বেদনা তার সঙ্গী থেকেছে সব সময়; তাই তার কবি হওয়ার উপজীব্য। ব্যক্তিক মত একটি আত্মজীবনী লেখার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল তার। অবশ্য নানা সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তার জীবনের অনৈক কিছু উঠে এসেছে। সেই থেকে একটি জীবনীগ্রন্থ সাজাতে পারেন যেকোনো কাব্যপ্রেমী। খুব স্বল্পসংখ্যক কবিতা লিখে খ্যাতিমান হওয়ার নতিদীর্ঘ তালিকায় আছেন হেলাল হাফিজ।

তিনি বৈরাগি জীবনে ছিলেন। এটি তার কবি হওয়ার পেছনে খুব বেশি সাহায্য করেছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনিটি কারণে তিনি সংসার বিবাগী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ জীবনের পেছনে ফিরে তাকালে তিনটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। তিনটি ঘটনাই আমার জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে। আমি সফল নাকি ব্যর্থ, হিসাব কষতে বসলেও ওই তিনটি ঘটনা অবধারিতভাবে সামনে চলে আসে। আজ আমার যতটুকু সফলতা, সেই তিনটি ঘটনা তার পেছনে দায়ী। আবার আমার যতটা ব্যর্থতা, তার পেছনেও আছে ওই তিন ঘটনা। প্রথম ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের।

তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) থাকি। ওই দিন সন্ধ্যায় নিউমার্কেটের দিকে আড্ডা দিয়ে রাতে হলে ফিরেছি। ক্যানটিন বন্ধ। খেতে গেলাম মেডিক্যাল গেটের কাছে পপুলার নামের একটা রেস্টুরেন্টে। খাওয়া শেষে মনে হলো, ফজলুল হক হলে বন্ধু হাবিবুল্লাহ থাকে, ওর সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। গেলাম ফজলুল হক হলে। হাবিবুল্লাহর কক্ষে গিয়ে আমি আড্ডা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর, রাত তখন পৌনে ১০টা হবে, হঠাৎ গোলাগুলির বিকট আওয়াজ। আমরা হলের ছাদে উঠে দেখলাম, নীলক্ষেত, নিউমার্কেটের দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

২৭ মার্চ সকালে ইকবাল হলে গিয়ে দেখি, মাঠের মাঝখানে, এখানে-ওখানে শুধু লাশ আর লাশ। নিজের কক্ষে গিয়ে স্যুটকেস গুছিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম। এখান থেকে পালাতে হবে, না হলে বাঁচা সম্ভব নয়। হলের গেটে এসে দেখি নির্মলেন্দু গুণ দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল, আমি ভেবেছি তুমি মারা গেছো, তোমার লাশ নিতে এসেছি। বলেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আমিও সজোরে কাঁদতে লাগলাম। তারপর সেখান থেকে আমার বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উঠলাম। এই ঘটনা আমার হৃদয়ে ব্যাপকভাবে ছাপ ফেলল। আমার তখন কেবলই মনে হতো, ওই রাতে যদি আমি ফজলুল হক হলে না গিয়ে নিজের হলে ফিরতাম, তাহলে তো বাঁচতাম না। একটা বোনাস জীবন পেয়েছি- এই উপলব্ধি আমার ভেতর বিরাট বৈরাগ্য এনে দিল। এক ধরনের সন্ন্যাস জীবনযাপন শুরু করলাম আমি। এর পরের ঘটনা ১৯৭৩ সালের জুনের।

১৯ জুন আমার পিতার মৃত্যু হলো। তিন বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার পর আব্বাই ছিলেন আমার সবকিছু। তার মৃত্যু প্রবলভাবে ধাক্কা দিল আমাকে। মনে হলো, জগৎসংসার তুচ্ছ। সব অর্থহীন। আমার বৈরাগ্য আরো প্রগাঢ় হলো। আব্বার মৃত্যুর মাসখানেক পরই ঘটল তৃতীয় ঘটনা। ঘটনা ঘটাল হেলেন, আমার প্রেমিকা। হেলেন হঠাৎ ডেকে বলল, কবি, তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে। আমরা গিয়ে বসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে। সে বলল, আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। ছোটবেলা থেকে আমি খুব সহনশীল ছিলাম। প্রচণ্ড সহ্যশক্তি আমার। তাই ভেতরের ঝড় বুঝতে দিলাম না হেলেনকে। ওখান থেকে উঠে রিকশা নিয়ে সোজা হলে চলে গেলাম। ওটাই হেলেনের সঙ্গে আমার শেষ দেখা ও শেষ কথা। এই তিনটি ঘটনা আমাকে চিরস্থায়ীভাবে সংসারবিমুখ করে ফেলল। আমার আর ঘর হলো না, সংসার হলো না, অর্থকড়ি হলো না, প্রতিষ্ঠা হলো না। জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন কেবলই আমার মনে হয়, জীবনের সময়গুলো বৃথাই অপচয় করেছি। কত সুন্দর সুন্দর কবিতার পঙ্?ক্তি এসেছে মাথায়, আমি টেবিলে বসিনি, লিখিনি। জীবনটা অপচয়ই করেছি বলা যায়। এ জন্য আমি এখন ভীষণভাবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এই দীর্ঘ জীবনে যারা আমাকে ভালোবেসেছেন, তাদের সবার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। আর যারা আমাকে ভালোবাসেননি, তাদের প্রতি আরো বেশি কৃতজ্ঞতা। কারণ তাদের অবহেলা, অনাদর, প্রত্যাখ্যান আর ঘৃণাই আমাকে কবি বানিয়েছে।’

কবি হেলাল হাফিজের প্রতি আজন্ম মায়া। তিনি মানুষ ও কষ্ট জমিয়েছেন। আর সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্বয়ং স্রষ্টা। পুলিশ কর্মকর্তা মেয়ে হেলেনকে স্কুল শিক্ষকের ছেলে হেলাল হাফিজের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাননি। আবার হেলেনের ব্যবসায়ী বর বইমেলা থেকে হেলাল হাফিজের কাব্যগ্রন্থ কেন কিনে নেবেন? হেলেন বইটি পড়ে প্রতি পঙ্ক্তিতে দেখেন তার কথা। স্বামীকে ছেড়ে দেন হেলেন। চলে যান বাবার বাড়ি নেত্রকোণায়। শেষ জীবনে পাগল হয়ে যান। আর হেলেনের সঙ্গে বিচ্ছেদে কবি হয়ে উঠেন হেলাল হাফিজ।

কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক আর মা কোকিলা বেগম গৃহিণী। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন- যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।

সব নিয়েই এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় জীবন ছিল হেলাল হাফিজের। বলা চলে তার পুরো জীবন কবিতার ছন্দে দুলেছে। তিনি পরোদস্তুও ও আপাদমস্কক কবি। বিবাগী পথিক হেলাল হাফিজ এখন অনন্তলোকে। কবির খ্যাতি এখন ছড়িয়ে পড়বে দিগি¦দিক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত