ঢাকা বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অনন্য শিল্পযাত্রার কবি জীবনানন্দ

এসডি সুব্রত
অনন্য শিল্পযাত্রার কবি জীবনানন্দ

অ নন্য শিল্প যাত্রায় যিনি ছিলেন একা তিনি জীবনানন্দ। যার কবিতা পড়ে বোধের আঙ্গিনায় অনুপম অনুভূতি জাগে, খুলে যায় ভাবনার দরজা যার পংক্তি মালায় তিনি জীবনানন্দ দাশ। হেমন্ত ছিল তার প্রিয় ঋতু। আর এ হেমন্তেই পাড়ি জমিয়েছিলেন অচেনা জগতে। নক্ষত্র দোষে কক্ষচ্যুত গ্রহের মতো ছিল তার জীবন। জীবনানন্দ দাশ নিজেকে শুয়োরের ছিটানো নোংরা জলে ভিজে যাওয়া ভূত মানুষ হিসেবে ভেবেছেন। নিজের ডায়েরীতে কবি ট্রামকে বলেছেন দার্শনিকের যান। সে যানই অনন্ত এলোমেলো করে দিয়েছিল তার জীবন। জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এবং মৃত্যু ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ সাল। বাবা সত্যানন্দ দাস ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের চিন্তক ও লেখক। মা কুসুম কুমারী দাশ ছিলেন সে সময়ের অন্যতম কবি। জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবন্যপ্রভা। পুত্র সমরানন্দ ও কন্যা মঞ্জুশ্রী দেবী। জীবনানন্দ দাশের ৫৫ বছর ব্যপ্ত জীবনে ছাপার অক্ষরে লেখা প্রকাশের বয়স ছিল ৩৫ বছর এবং পান্ডুলিপির বয়স ৪৩ বছর।

তার পান্ডুলিপি তে লেখা প্রথম কবিতা ‘নদী’ যা লেখা হয়েছিল ২৭/০৫/১৯১১সালে। ছাপা অক্ষরে লেখা জীবনানন্দের প্রথম কবিতা ‘বর্ষা-আবাহন’ যা ১৯১৯ সালে ব্রাহ্মবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ চর্চার পত্রিকা ‘জীবনানন্দ’ এর দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত গৌতম মিত্রের ‘চল্লিশ লক্ষ শব্দে গড়া’ নিবন্ধের তথ্যমতে জীবনানন্দ দাশের বইয়ের সংখ্যা উপন্যাস-১৯টি, গল্প -১২৭টি, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ মিলিয়ে ৭৯টি?, চিঠি পত্র ও খসরা ১৫০টি, ৫৬টি খাতায় ৪০০২ পৃষ্ঠার ডায়েরি এবং প্রায় ৩০০০কবিতা। জীবনানন্দের বুকের ভেতর ছিল বরিশাল আর পায়ে ছিল কলকাতার উন্মুক্ত প্রান্তরের ছোঁয়া। জন্ম নিয়য়েছিলেন বাংলা কবিতার নির্জন আর নিভৃত স্থানে।

জন্মের পর ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া জীবনানন্দকে নিয়ে মা কুসুম কুমারী দাশ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে। তাই দেরিতেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯১৭ সালে আই এ, এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অনার্স সহ স্নাতক এবং পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর করেন ইংরেজি সাহিত্যে। চাকরি জীবনের সূত্রপাত হয় সিটি কলেজে। প্রকৃতি আর মানুষের সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক তা হয়েছিল বরিশালে ই। ১৯২৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয়। প্রচলিত আছে যে তখন তার কবিতায় অশ্লীলতা থাকার কারণেই তার সিটি কলেজের চাকরি চলে যায়। কিন্তু কারো মতে তার চাকরি যায় অন্য কারনে। কলেজের সরস্বতী পূজা নিয়ে দ্বিমত ছিল। ব্রাহ্ম কলেজে পূজা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের আপত্তি ছিল। জীবনানন্দ পূজার পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। ব্রাহ্ম হিসেবে চাকরি নিয়ে কলেজের পক্ষে মত না দেয়ায় কলেজ কততৃঐ অসন্তুষ্ট হয় তার প্রতি। এর পর থেকে কলেজের ছাত্র সংখ্যা কমে গেলে অনেক জুনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে জীবনানন্দের চাকরিও গিয়েছিল।

এমনটি জানা যায় জীবনানন্দ দাশ এর ভাতিজা অমিতানন্দের কাছ থেকে। সামগ্রিক কর্মজীবনে ৫টির অধিক কলেজে চাকরি করেছেন। কোথাও স্থির হতে পারেন নি। তার সমসাময়িক কবিদের সঙ্গে কবিতা পত্রিকায় স্থান পেতনা তার কবিতা। তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা। ১৯২৯ সালে বাগেরহাট কলেজের চাকরি ছেড়ে যান দিল্লিতে। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। বিয়ের কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দেন?

বরিশালে বিয়ে করতে এসে আর দিল্লি তে ফিরে যাননি। ১৯৩৫সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৫০ সালের দিকে কাজ করেছেন খড়গপুর কলেজে। সে সময় প্রকাশিত হয় ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী। সেই সময় জুটে স্বীকৃতি ও পুরস্কার। বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয় বই ‘রূপসী বাংলা’ প্রথম ছাপা হয় ১৯৫৭ সালে। রুপসী বাংলা তার জীবদ্দশায় আলোর মুখ দেখেনি। যা প্রকাশের কথা ছিল আরো আগেই। কিন্তু এর অস্তিত্ব তিনি কাউকে জানতে দেননি। গুপ্তধনের মতো ভালবেসে আগলে রেখেছিলেন। তার মৃত্যুর পর হঠাৎ করে বন্ধ দোয়ার খুলে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত