হোসাইন মোস্তফা এর ছড়াগ্রন্থ চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া ‘খুব চমৎকার একটি নাম। সাধারণত বাঁশের তৈরি পাত্র বিশেষ বা ঝুড়িকেই চাঙারি বলা হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে চাঙারি বলতে বাঁশের চাঁচলা দিয়ে তৈরি শক্তপোক্ত বেড় দেওয়া ঝুড়িকে বুঝানো হয়। পাঠকের জন্য চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া ‘একটু রিসার্চ করে দেখি চাঙারি মতো কবির ছড়া প্রতিটি উপমা শব্দকোষ পঙক্তিগুলো সাজিয়েছেন কবির কলমের ডগায় সমাজমনস্ক আমাদের যাপিত জীবন তথা রূপ বাস্তবতার ছান্দিক ও সাহসী উচ্চারণ তার তৃতীয় ছড়াগ্রন্থ ‘চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া’ পাকাপোক্ত শক্তিশালী ছড়াগ্রন্থে কবির বিকল্প শিল্পের বিকাশ ঘটে এক ঝুড়ি ছড়াগুচ্ছ নিয়ে। ছন্দপতন ভেঙেচুরে অন্ত্যমিলে নতুনরূপে অনবদ্য সৃষ্টি পাঠকের হাতে তুলে দিলেন চকচকে রঙিন প্রচ্ছদের ছড়াগ্রন্থ ‘চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া’ একটু রিসার্চ করা যাক- চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়ার তেমন কয়েকটি পঙক্তি। ছড়া দিয়ে কবির শুরু বর্তমানে ও তিনি ছোটোদের উপযোগী সাহিত্য সৃষ্টিতে এক নিবেদিত প্রাণ।
ছড়া কিংবা কিশোর কবিতা শিশুসাহিত্যে যদি মনকে নাড়া দিতে না পারে যদি আনন্দের উপকরণ না হয়, তাহলে সে শিশুসাহিত্য সমৃদ্ধ সাহিত্য হিসাবে মূল্যায়িত হয় না হোসেন মোস্তফার ছড়াগ্রন্থ তেমনি সব বয়সের পাঠকরা-এর ভোক্তা, গ্রহণ করেন তার নির্মল স্বাদ।
তিনি ভাবনায় : আবেগে স্বদেশের চিত্র আঁকেন। প্রতিটি ছড়া সমাজের বাস্তবতার দুর্দান্ত সাহসী উচ্চারণ সহসা জীবন্ত হয়ে ওঠে ‘চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া’ কবি হোসাইন মোস্তফার-এর তৃতীয় ছড়াগ্রন্থ মোট বিশটি ছড়া নিয়ে সাজানো গ্রন্থ বেশ চমৎকার বৈচিত্র্যময়।
ছড়া, কবিতায় তিনি একজন দক্ষ শিশুসাহিত্যিক। নিভৃতে কাব্যচর্চা শুরু হলে ও তাঁর ছড়া, ভাষার স্বচ্ছলতা জলের মতো সহজ সরল। পাঠকের মনে চাপ সৃষ্টি হয় না পাঠক বুঝতে পারে। লেখাগুলোর আড়ালে, এঁকেছেন কিশোর ছড়াগল্পের চিত্র। তাঁর ছড়া কবিতা পড়তে আমাদের ভাবতে গেলে মনের মধ্যে একটা চলমান দৃশ্যের জন্ম হয়, শৈশবের মনে পড়ে যায় খোলা মাট, কৈশোর মনের চাওয়া, পাওয়া, পাখির ডানায় চড়ে খোলা আকাশ, সাহসী যুদ্ধা সবুজ কিশোরের বিদ্রাহ, কৈশোর জীবনে ফিরে যাওয়া, সমকালীন সমাজ সংকট অবহেলিত মানুষের বেদনা বঞ্চনার চিত্র, কিংবা সন্ধ্যার আবছা আলো, কবিতা পড়তে পড়তে কারো ও সামনে খুলে যাবে নতুন কিছু সৃষ্টির জগত।
তাঁর কবিতা, ছড়া, যতই পড়েছি স্বল্প জ্ঞানে তাঁকে কতটুকু বা মূল্যায়ণ করতে পারি। তবুও তাঁর বেশ কিছু লেখা পড়তে পড়তে পাঠক আমি। নব্বই দশকের শেষ ভাগে জাতীয় দৈনিকের ছোটদের বিভাগ এবং নানা লিটল ম্যাগ-এ নিয়মিত তিনি দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন।। তাঁর ছড়াগ্রন্থ- চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া তে ভাঙারি ভাই, চাকর, হারিয়ে যাওয়া দুল, কত্ত জাতি বাস করে, আবু সালেহ, আমার ছড়াই ভালো, রিকশাওয়ালা, উইপোকার ভাবনা, ধরতে ঘুড়ি, ঢাকার যারা আদিবাসী, অহিও নকুল, ফাঁকা বুলি, তোমরা এসব কোথায় দ্যাখো, গরিব থাকাই ভালো, চুল পাকে, আবুল দাদা, বাবুই পাখির বাসা, ছড়া ধরার ছড়া, আমাদের ভাগ্যে, নাম তার কী যে, রোগে ভোগে রাতদিন, সেই মেহমানদারী, দেখতে লাগে বাঘ, উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে, হঠাৎ জ্বর, গ্রাম, ম্যাঁওটা, ভূতের মিটিং, জন্মেছে বাপ-দাদায়, ভবিষ্যৎ বাণী, অচেনা ফুল, নামে হলো সাফ, নাজেহাল, সময়ের দাম দেয়না যারা, ইঁদুরের দাবি, বনসাই, ব্যাকি স্টোর, কলিমুদ্দির বাপে, মায়ের শিশু, আবার গেলে ময়মনসিংহ। চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়াগ্রন্থ থেকে কিছু চমৎকার পঙক্তি পড়া যাক... চাকর-ম্যাডাম বলে পা টিপে দে/সাহেব বলে চা কর/এত্তো টুকুন পিচ্চি ছেলে/এই বাড়িতে চাকর।
শিশুরা ফুটন্ত ফুল। আগামীর পথে হাঁটে শৈশব স্মৃতিরা রঙিন। ফুলেরা যদি না ফোটে, রাত্রি গড়িয়ে ভোরের সূর্য যদি না কখনো ওঠে! পৃথিবীর সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তাই কবি বলেছেন, ধ্বংসের হাত থেকে শিশুদের বিপদমুক্ত আলোর পথে করতে হবে মানবতার ভালোবাসায়। সভ্য যুগেও কিছু মানুষ দাস প্রথারই আকর। শিশুকে ভালোবাসুন, তাদের মূল্যায়ণ করুন তারা আগামীদিনের সূর্য। পঙক্তি গুলোতে কী দারুণভাবে কবি তুলে ধরেছেন অসাধারণ পাঠে তৃপ্ততা বিষয়বস্তু অত্যন্ত সুনিবিড় ভাবে ভাবে এঁকেছেন।
আমার ছড়াই ভালো- দিক না খোঁচা বলুক পঁচা/আমার ছড়া ভালো/বাপ কি কভু দেয় ফেলে তার/মেয়ে হলে কালো?
ছড়ার পঙক্তিগুলো লেখকমনকে নাড়া দেয় যেমন- একটা ছড়া লিখি যখন নিজকে ভাবি হিরো, ডাকসাইটে বোদ্ধা পাঠক দিক না দশে জিরো। জীবননান্দ ভাষায় যদি বলি কেউ কেউ কবি সবাই কবি নয় ,সব কবিতা কবিতা হয় না। তাতে কি জ্ঞােেনর প্রসার হবে?
তার বাইরে শেখার অনেক বাকি তেমনি যার লেখা তার হোক না ভালো মন্দ তার ইচ্ছার অবস্থান জানার আকুতি অবুজ মনের ইচ্ছা গুলো নিজের মতো করে লিখতে চাই, ঘুড়ির মতো উড়তে চাই সে বন্দি থাকতে চাই না। কেমন করে সাগর ফুঁসে ওঠে এ দৃশ্যটা সাগর পাড়ে গেলে দেখবে জলের ছোটাছুটি ঢেঊয়ের নাচন কেমন করে খেলে। দৃশ্যময় সহজ সরল ছন্দে, মনের মতো করে রচনা করেছেন এখানে কবির স্বার্থকতা। হোসেন মোস্তফার জন্মণ্ড২৮ জুন ১৯৭৮, শেরআলী গাজীর পুণ্যময় পাদদেশ প্রকৃতির লীলাভূমি শেরপুর জেলা সদর নবীনগর মহল্লায়। ব্যক্তিজীবনে সদালাপী, ভদ্র ও সজ্জল ব্যক্তি, তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় গ্রামে কাটে। সম্মাননা স্মারক- জসিম উদদীন স্মৃতি সম্মাননা-২০১৯ এই পুরস্কার কবিকে আরো আলোকিত সমৃদ্ধি করবে সাহিত্যজগত আরো ও দৃঢ় হোক, কবির কলম চলতে থাকুক, সমকালীন এবং তীর্যক প্রতিবাদী ছড়ায় তাঁর হাত চৌকস এবং শাণিত।
লেখালেখির জীবন আরও সমৃদ্ধ হোক, আমাদের সাহিত্য আরও উজ্জ্বল হোক, বহুল পঠন-পাঠন কামনা করছি।