ওয়াহিদ ওয়াসেক তরুণ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল নান্দনিক ছড়াকার। ছড়াশিল্পী হিসাবে তিনি বেশ পরিচিত। সময়ের সচল লেখক ওয়াহিদ ওয়াসেকের প্রথম ছড়াগ্রন্থ ইতি-বিথী। খুব চমৎকার নাম ও প্রচ্ছদ। এছাড়াও প্রতিটি ছড়ার সাথে একরঙিন ছবি আছে চকচকে, যা প্রসন্ন ভরিয়ে দেবে শিশুদের মন। একটু রিসার্চ করা যাক, ইতি-বিথী ছড়াগ্রন্থের প্রতিটি উপমা, শব্দকোষ, পঙক্তিগুলো সাজিয়েছেন ছড়াকার কলমের ডগায় শিশুদের যাপিত জীবন তথা রূপ বাস্তবতার ছান্দিক শিশুদের কিশোর মনের ভাবনাকে ধারণ করে। ছড়াগুলো চিত্রকল্প নির্মাণ। ছড়াকার ছড়া চিত্রধর্মী নিসর্গের উপস্থাপনায়, মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছেগুলো বর্ণনায় সুন্দর প্রকাশ পাঠকহৃদয় স্পর্শ করে। শিশুদের মনস্তত্ব বিবেচনায় রেখে এ ছড়াগ্রন্থ রচনা করা হয়েছে। ছড়া কিংবা কিশোর কবিতা, গল্প এবং শিশুসাহিত্য যদি মনকে নাড়া দিতে না পারে, যদি আনন্দের উপকরণ না হয়, তাহলে সে শিশুসাহিত্য সমৃদ্ধ সাহিত্য হিসাবে মূল্যায়িত হয় না। শিশুসাহিত্য এমন বিষয় বিবেচনায় রেখে লেখা হয়, যা শিশুরা পড়তে তাদের আগ্রহী করে তোলে। ওয়াহিদ ওয়াসেকের ছড়াগ্রন্থ তেমনি একটা গ্রন্থ। সব বয়সের পাঠকরা এবং শিশুরা আনন্দ পাঠে গ্রহন করবে তার নির্মল স্বাদ। প্রতিটি ছড়া বাস্তবতার দুর্দান্ত নান্দনিক উচ্চারণ সহসা জীবন্ত হয়ে ওঠে। ইতি-বিথী ছড়াগ্রন্থ মোট ১৪টি ছড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছড়াগুলো বেশ চমৎকার আর বৈচিত্র্যময়। ইতি-বিথী ছড়াগ্রন্থ থেকে একটু পাঠ নেয়া যাক... শিশুদের আনন্দরস ভাবনার জগৎ থেকে ছড়াকার লিখেছেন- চমৎকার মচমচে ছড়া, পড়তে লাগে মজা। তুই কি চিবোস চিপস, চানাচুর/ক্যান্ডি ও দুধ, কলা/তোর কি আছে একটা মামা চুল, দাঁড়ি, গোঁফঅলা? স্মৃতিময় ছেলেবেলাকে খুঁজে ফেরা, বাচ্চাদের পুতুল খেলা নিয়ে চমৎকার লিখেছেন...
এক ছিল উড়ষ/ ভেরি ভেরি স্মল/ লাল, নীল জামা পরে/ হাসে খলখল!/ ছোটদের কৌতূহল ভূত নিয়েও লিখেছেন। এরকম বিচিত্র বিষয়ও বাদ যায়নি! ছড়ার অনুষঙ্গ ছড়াকারের মানসপটে। ছড়াটি অনন্য! বুচ্ছে?/পৃথিবীতে ভূত আছে/ ছোট-বড় গুচ্ছ!/ মেছোভূত, গেছোভূত/ দেওভূত উচ্চ/ কানাভুলো, বেঘোভূত/ ভেবো না-কো তুচ্ছ!
মজার আরেকটা ছড়া পড়লাম। শিশুমনের অহেতুক আবেগের উন্মাদনা নিয়ে ছড়াকার অসাধারণ একটি ছড়া লিখেছেন। যা লেখকমনকে নাড়া দেয় অনবদ্য সৃষ্টিতে। কও তো দাদু আমার মতো/ বই কি পড়ে কাশফুলে?/ কিংবা ধরো, রঙিন খাতায়/ অঙ্ক কষে ঘাসফুলে? নীল আকাশ আর বৃষ্টি ফোঁটা/ আমার মতো বল খেলে?/ শালিক, চড়ুই, গাঙচিলেরা/ হয় কি মোটা ফল খেলে?/ আরও লিখেছেন সমকালীন বাস্তবতা নিয়ে অসাধারণ ছড়া।/ স্বর্ণালি দিনকালের যাপিত জীবনের প্রেক্ষাপটের স্থিরচিত্র দারুণভাবে এঁকেছেন।/ গ্রামটা এখন হচ্ছে শহর/ শহর এখন সিটি/ যায় কি দেখা চাঁদণ্ডতারারা/ জ্বলছে মিটিমিটি?/ কল্পময় চারিত্রিক ছড়ায় বিস্ময়ে কথোপকথন চমৎকার। দুঃখ আমার বলব কী আর/ এত্ত গরম ক্যান?/ কেলাশরুমে ঘুমোয়, ঝিমোয় তিনটে ডানার ফ্যান!/ সর্বশেষ তাঁর বইয়ের শিরোনামের ছড়া ইতি-বিথী। অসাধারণ ছড়া। ছড়াকার এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন ছড়া পড়তে পড়তে আমাদের জীবনের সোনালি শৈশবের স্মৃতি চোখের সম্মুখে ভেসে ওঠে। এখানে ছড়াকারের স্বার্থকতা। আমরা হলাম ছোট্ট দু’বোন/ইতি এবং বিথী/ কাপড় পরি এক কালারের/ চুলেই করি সিথী! তিনি একজন দক্ষ শিশুসাহিত্যিক। লেখাগুলোর আড়ালে এঁকেছেন কিশোর ছড়াগল্পের রুপস্বরুপ। তার ছড়া পড়তে আমাদের ভাবতে গেলে মনের মধ্যে একটা চলমান দৃশ্যের জন্ম হয়। শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। খোলা মাঠ, কৈশোর মনের চাওয়া-পাওয়া, খোলা আকাশ, কৈশোর জীবনে ফিরে যাওয়া, কখনো না পাওয়ার বঞ্চনার চিত্র, কিংবা সন্ধ্যার আবছা আলো, খুঁনসুটি, লুকোচুরি। এসব ছড়া পড়তে পড়তে পাঠকের সামনে খুলে যাবে নতুন কিছু সৃষ্টির জগত। তার ছড়া যতই পড়েছি মুগ্ধতা অনুভব করেছি। কতটুকু বা মূল্যায়ণ করতে পারি। তবুও তার বেশ কিছু লেখা পড়তে পড়তে পাঠক হয়েছি আমি। পাঠকরা বইটি সংগ্রহ করতে পারেন: ইতি-বিথী ছড়াগ্রন্থ এরই মধ্যে চমকসৃষ্টি করেছে পাঠকের হৃদয়ে। ছড়াকারের লেখালিখির জীবন আরও সমৃদ্ধ হোক। আমাদের সাহিত্য আরও উজ্জ্বল হোক। জীবনকে স্বপ্নময় করতে আরও অনেক বইয়ের সাথে ওয়াহিদ ওয়াসেকের এই বইটি হোক আমাদের সঙ্গী।
লেখক : শিশুসাহিত্যিক ও গল্পকার।