গল্প
কারমান লাইন
মিন্টু হোসেন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অদ্ভুত জন্মদিন কাটল সাহামের। ওর বয়স সবে ১০ হলো। জন্মদিনে বাবা তার জন্য বড় একটা বাক্সে করে উপহার এনেছে। কিন্তু এখনও সে বাক্সটা খুলে দেখতে পারেনি। ওর ভেতরটা উত্তেজনায় ছটফট করছে। কিন্তু এখনই তো বাক্সটা খোলা যাচ্ছে না। ওটাকে অন্তত দুটো দিন ইনফেকশনমুক্ত করতে বাসার আলাদা কক্ষে রাখতে হবে। এর পর ওই বাক্স খুলে দেখতে পাবে ভেতরে কি আছে।
সাহামদের বাসাটা অনেকটাই কাচের জারের মতো একটা বিশেষ প্রটেকশন ব্যবস্থায় তৈরি। যাতে বাইরের কোনো জীবাণু বাসায় আক্রমণ করতে না পারে। বাসায় ঢুকতেই বিশেষ ফিল্টারিং সিস্টেমে জীবাণু ফিল্টার হয়ে যায়। এর পরও বাইরে থেকে কোনো কিছু আনার পর বিশেষ একটা চেম্বারের মতো ঘরে সেটা কিছুদিন রেখে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হয়।
শুধু সাহামদের নয়, পৃথিবীর সবার বাড়িতেই এ সিস্টেম তৈরি করতে হয়েছে। সাহামের যেদিন জন্ম হয় সেই ২১১০ সালের ১০ জুলাই এর অনেক আগে থেকেই পৃথিবীবাসী অদ্ভুত এক জীবাণুর সঙ্গে লড়ছে। জীবাণু পৃথিবীকে গ্রাস করলেও মানুষ নতুন উদ্ভাবন দিয়ে টিকে গেছে। সাহাম তার অ্যাডভান্সড হলোগ্রাম বুকে অতীত ইতিহাস আগেই জেনে নিয়েছে। দেখেছে ১০০ বছর আগেও মানুষকে মাস্ক পরে চলতে হতো। ওদের এখন অবশ্য মাস্ক লাগে না। বিশেষ এক হেলমেট পরে বাইরে গেলেই চলে। ওই হেলমেটেই পরস্পরের সঙ্গে মাথার মধ্যে বিশেষ সংকেত চলে যায়। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। আর জীবাণুও শরীরে আক্রমণ করতে পারে না।
গত কিছুদিন ধরে সাহামের উড়ন্ত সাইকেলটা নষ্ট। ওর সঙ্গে লাগানো জেট ইনজিনের একটা অংশ ইনফেকটেড হওয়ায় ফেলে দিতে হয়েছে। ওটাকে সারাতে যে রোবটটাকে বলা হয়েছে সে বেটা অলস। তিনদিন ধরে কি জানি করছে বাইরের দিকটার ওয়ার্কশপটিতে। সেখানে সাহামের বাবার বিশেষ এরোপ্রজেক্টের একটা অংশ।
সাহামের বাবা তার ছেলের সাইকেলটার অবস্থা দেখেছেন। এর মধ্যেই পড়ে গেছে তার জন্মদিন। তার বাবা যখন বড় বাক্সটা উপহার হিসেবে দিয়েছে সাহাম ভেবেছে এটা নিশ্চয়ই নতুন সাইকেল। আরও অ্যাডভান্সড। কিন্তু বাক্স খোলার অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও দু’দিন। দুটো দিন নানা জল্পনা-কল্পনায় কাটল ওর। বাবাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা বললেন সারপ্রাইজ। সাহাম তার প্রেডিকশন রোবটটাকে বলতে বলল কী আছে বাক্সে। ওটার স্ক্রিনে হাবিজাবি কি সব দেখায়।
অবশেষে খোলা হলো বাক্সটা। অদ্ভুত। সাহামের চোখ ছানাবড়া। জন্মদিনে বাবা তার জন্য কিনে দিয়েছে ‘এআর ৯৯৮’। বিশেষ রোবটিক বাইক। এটা ছোটেও যেমন, ওড়েও তেমন, আর ভেসেও থাকে। সুপার স্পিড।
বাবা বাক্সটা খোলার পর বললেন, সাহাম এখন বড় হয়ে গেছে, ওর জন্য এখন ছুটে বেড়াতে এটাই দরকার। খুশিতে সাহাম পাগলপ্রায়। তার আর ওই বাইকটাতে ওঠার তর সইছিল না। বাইকটা সম্পর্কে আগেই জানে সে। সাহাম গিয়ে উঠল এর ওপর। বসার পর বাইকটার চারপাশ থেলে পাতলা একটা বাবলের মতো স্বচ্ছ পরদা তাকে ঘিরে ফেলল। সবুজ আর লাল বাটন দুটো। ছোট্ট ড্যাশবোর্ড। সবুজ বাটনটি চাপল সাহাম। ধীরে ধীরে বাইকটি ঘর থেকে বের হয়ে কিছুটা ওপরে উঠে বের হলো বাড়ির বাইরে। এর পর উঠল সোজা। নিমিষেই এর গতি বাড়তে থাকল। সাহামকে নিয়ে গাড়িটা ছুটল। সাহাম কিছুক্ষণ পর দেখল পৃথিবীর সব কিছু ছোট হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাইরে তাকিয়ে পৃথিবীর দিগন্তরেখা দেখতে পেল সে। আরেকটু পরই হঠাৎ মনে হলো ওর কোনো ওজন নেই। তার মানে কি গাড়িটা তাকে মহাশূন্যে নিয়ে এসেছে? সেকি নভোচারী হয়ে গেছে?
ড্যাশবোডটার দিকে তাকাল সাহাম। সেখান থেকে বলা হচ্ছে আমরা কারমান লাইন ছাড়িয় যাচ্ছি। পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এখন। আমরা কি ফিরে যাব নাকি মঙ্গলগ্রহ বা চাদের স্টেশনে নভোচারীদের হ্যালো করে আসব? কিছুটা ভয় পেয়ে গেল সাহাম। বাবাকে তো জানানো হয়নি বিষয়টা। বাইকের কমিউনিকেশন সিস্টেমে চোখ রাখতেই দেখল তার বাবা লাইভে। সরাসরি দেখছে তাকে। বাবা বলল সাহাম জন্মদিনে নিজের বাইকে মহাকাশ ঘুরে আসো- এটাই আমাদের পক্ষ থেকে উপহার। বাইকটা হঠাৎ আরেকটু গতি বাড়াল। যাবে চাঁদের স্টেশনে। সেখানে আগে থেকেই আছেন বিজ্ঞানী কে কায়সার। সাহামকে তিনি চাঁদের স্টেশনে স্বাগত জানিয়ে আগেই মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছেন।