গল্প

প্রিয়ার বাগানে প্রজাপতি

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কিং সউদ

প্রিয়া দেখতে যেমনি ফুটফুটে সুন্দর, তেমনি বুদ্ধিমতী। প্রিয়াকে তার বাবা-মা, বড় ভাই, স্কুলের শিক্ষক আর বন্ধুরা সবাই ভালোবাসে। পড়াশোনায় ও সবার থেকে ভালো। প্রতিটি পরীক্ষাতেই প্রথম হয়।

সেবার ঈদের ছুটিতে মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে নানা বাড়িতে যায় প্রিয়া। ওদের নানা বাড়ি গ্রামে। গ্রামটির নাম লেবুবুনিয়া। সবুজ শ্যামল শস্যে ভরা নিরিবিলি এ গ্রামটি। শহরের মতো এত দালান, বাস, যানজট, শব্দ, আবর্জনা নেই। প্রিয়ার নানা বাড়ির গ্রামে নৌকায় চড়ে নদী পার হয়ে যেতে হয়। যে নদীটি পার হয়ে যেতে হয় তার নাম বলেশ্বর। নদীতে যখন ভাটা থাকে তখন মনে হয় ছোট। কিন্তু জোয়ার এলে নদীটি অনেক বড় হয়ে যায়। নদীর জলে নৌকা যখন দোলে প্রিয়ার তখন ভারি মজা লাগে। নৌকার সামনে বসে প্রিয়া নদীর চারদিক দেখে।

ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় চড়ে বড়শি দিয়ে জেলেরা মাছ ধরছে। নদীর জলের ওপর জালের বয়াগুলো ভেসে আছে। কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে। হাত দিয়ে কচুরিপানার পাতা ছিঁড়তে গেলে প্রিয়ার মা বলে, ওগুলো ছিঁড় না।

প্রিয়া বলে, ছিঁড়লে কি হবে? প্রিয়ার মা বলেন, ওগুলোরও প্রাণ আছে। ওরা ব্যথা পাবে। ওদের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। প্রিয়া আর কচুরিপানার পাতা না ছিঁড়ে নদীর পানিতে হাত দিয়ে জল ছিটাতে থাকে কচুরিপানার ওপর। ঝুপ-ঝুপ করে মাঝির বৈঠার শব্দে ওরা পৌঁছে যায় ওদের নানা বাড়ির ঘাটে। প্রিয়ার চেয়ে বয়সে একটু বড় এক খালা আছে। খালার নাম স্বর্ণা। গায়ের রং কালো, মাথায় বেশি করে তেল দিয়ে বেণী করে। খুব খিলখিল করে হাসতে পারে। আর সমস্ত গ্রামটি ওর মুখস্থ। সে এ গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করে।

স্বর্ণা খালামণির সঙ্গে প্রিয়ার খুব ভাব। গ্রামের মধ্যে খালামণির সঙ্গে প্রিয়া ঘুরে বেড়ায়। ওরা শাপলা ফুল ফুটে থাকা পুকুর দেখে, সবুজ লেবুর বাগান দেখে, দোয়েল পাখির শিস শোনে। দু’জনে হাত ধরাধরি করে সমস্ত গ্রাম ঘোরে। আহা কি সুন্দর গ্রাম! প্রিয়া যদি গ্রামে থেকে যেতে পারত কতই না ভালো হতো। বাড়িতে ফিরতে-ফিরতে ওদের সন্ধ্যা হয়। এসেই খেয়ে-দেয়ে পাশাপাশি শুয়ে গল্প করতে-করতে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে দু’জনে মিলে উঠনে হাঁটাহাঁটি করে।

প্রিয়ার নানা বাড়ির উঠনের পাশেই সুন্দর একটি ফুলের বাগান। বাগানে কতো রংবেরঙের যে ফুল ফোটে সবগুলো চেনে না, নামও জানে না প্রিয়া। স্বর্ণা খালামণির কাছে প্রিয়া ফুলগুলোর নাম জানতে চাইলে সে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে-দেখিয়ে বলে, ওটা হচ্ছে গোলাপ, ওটা হাসনাহেনা, ওটা বেলী, ওটা রক্তজবা, ওটা গাঁদা, ওটা জুঁই, ওটা নয়নতারা ফুল। এভাবে আরও কত কী সব নাম প্রিয়ার খালামণি বলতে থাকে এক নিঃশ্বাসে, আর খিলখিল করে হাসে। কি সুন্দর সেসব ফুল। বাগানের পাশে দাঁড়িয়ে ওরা বুক ভরে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুলের সুবাস নেয়।

প্রিয়ার সামনেই দেখতে পায় একটা নয়নতারার ফুলের ওপর একটি প্রজাপতি উড়ছে। প্রিয়া আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওর খালামণিকে বলে, আমাকে প্রজাপতিটি ধরে দাও না। খালামণি বলে, প্রজাপতিদের ধরতে হয় না, ধরলে ওদের ডানার রং নষ্ট হয়ে যায়।

প্রিয়ার ঈদের ছুটি শেষ। স্কুলও খোলার সময় হয়েছে। নানা বাড়ির গ্রাম ছেড়ে সেই বলেশ্বর নদী পাড়ি দিয়ে আবার ফিরতে হবে শহরে। কিন্তু কিছুতেই ওর গ্রাম ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

নানু ওকে সুন্দর একটি তালের পাখা বানিয়ে দিয়েছে। গ্রামের হাট থেকে ওর নানা এনে দিয়েছে হলুদ একটি ছোট শাড়ি। আর আসার সময় স্বর্ণা খালামণি প্রিয়াকে দিয়েছে একটি নয়নতারা গাছের ছোট চারা কাগজে পেঁচিয়ে।

শহরের বাসায় ফিরে প্রিয়া ওর বড় ভাইয়াকে ডেকে বলে, দেখো ভাইয়া, খালামণি আমাকে একটা ফুলের গাছ দিয়েছে। এখন আমি এটাকে কী করব? ওর বড় ভাইয়া ওকে একটি মাটিভর্তি টব এনো দিল। সেই টবে দুই ভাইবোন মিলে ফুলের গাছটি রোপণ করল। ফুলের গাছের টবটি প্রিয়ার পড়ার ঘরের সামনের বারান্দায় রাখল। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে গাছটিতে পানি দেয় প্রিয়া। কিছুদিন পর এক সকালে ঘুম থেকে জেগে গাছটিতে পানি দিতে গিয়ে প্রিয়া দেখল, গাছটিতে ফুল ফুটছে! প্রিয়া খুব আনন্দিত হয়ে ওর বাবা-মা, ভাইয়াকে ডাকল। সবাই এসে গাছের ফুলটি দেখে খুশি হলো। এর পর প্রিয়ার বাবা প্রিয়াকে আরও নানা প্রজাতির টবসহ গাছ এনে দিল।

বারান্দাটা ওর নানা বাড়ির উঠনের পাশের বাগানটির মতো হয়ে উঠল প্রায়। কত সুন্দর রংবেরঙের ফুল, কত মিষ্টি তাদের সুবাস। সেই সুবাস নিতে-নিতে ঘরে বসে পড়তে থাকে প্রিয়া। হঠাৎ একদিন পড়ার টেবিল থেকে জানালা দিয়ে দেখল, বারান্দায় গড়া ওর ফুল বাগানে নয়নতারা ফুলের ওপর একটি প্রজাপতি উড়ছে! প্রিয়ার তখন গ্রামের নানা বাড়ির ফুল বাগানের মতো মনে হলো।