গল্প

সিমিনের রোবোজিপিটি

মো. মিন্টু হোসেন

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে সিমিন। পড়ে ক্লাস সিক্সে। ওর ছোট ভাই সাহাম। ওর বয়স ৬। সাহামকে ভীষণ আদর করে সিমিন। বাবা-মা ছাড়াও ওদের বাড়িতে আরেকটা বন্ধু আছে। ওর নাম রোবোজিপিটি। ও একটা রোবট। দেখতে বড়সড়। কথা বলে একটু নাকি নাকি সুরে। তবে সিমিন আর সাহামকে সে খুব যত্ন করে। ওদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। গল্প শোনায়। সিমিনের পড়াশোনায় রীতিমতো সাহায্য করে রোবো। এ রোবোটা আগে বেশ হাঁদা ছিল। সিমিন বা সাহাম কিছু বললে চট করে বুঝতে পারত না। কিন্তু ইদানীং সে বেশ চালাক হয়ে উঠেছে।

এ রোবোজিপিটি প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু শেখে। এরপর তা থেকে নিজের মতো করে একটা আইডিয়া তৈরি করে নেয়। ওর মধ্যে এক ধরনের বুদ্ধি তৈরি হতে শুরু করেছে। ফলে সে এখন সহজেই সিমিনকে নানা কাজে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া বাড়ির টুকটাক কাজও করতে পারে।

রোবোজিপিটির আচরণ ইদানীং কেমন যেন বদলাতে শুরু করে। এখন আর তাকে আগের মতো হাদা মনে হয় না। সিমিন তাকে কোনো কিছু প্রশ্ন করলেই সে চট করে সব উত্তর দিতে পারে। ফলে সিমিনের জন্য পড়াশোনায় নানা কাজে লাগছে। সাহামকেও নতুন নতুন গল্প শোনানো শুরু করে সে। উদ্ভট সব গল্প। শুনলে পিলে চমকে যাবে।

প্রতিদিন এই তিনজন একসঙ্গ অনেক সময় কাটায়। তিনজন একসঙ্গে টিভি দেখে, গেম খেলে। বাইরে বেড়াতেও যায়। আশপাশের সবকিছু যত দেখে ততই রোবোজিপিটি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে।

তিনজনের বেশ ভালোই সময় কাটছিল। একদিন হঠাৎ রোবোজিপিটি সিমিনকে একটি গণিতের প্রশ্নের সহজ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছিল। এসময় হঠাৎই রোবোজিপিটি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোনোভাবেই সে আর সাড়া দিচ্ছিল না। এ সময় সিমিন তার মাকে ডেকে আনে। তার মা এসে দেখে তাদের রোবটটি স্থির হয়ে গেছে। কাজ করছে না। সিমিনের বাবা ওই সময় অফিসে ছিলেন। সে দ্রুত বাবাকে ফোন করে জানাল। বাবা বলল, রোবটটির হয়তো সফটওয়্যারে কোনো সমস্যা হয়েছে। সেটি হালনাগাদ করতে হবে। বাবা বাসায় ফিরে ঠিক করে দেবেন। সিমিনের বাবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। রাতে বাবা বাসায় ফিরে রোবোজিপিটির সফটওয়্যার আপডেট দিলেন। সিমিন ও সাহাম সেদিন রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে গেল। পরদিন সকালে উঠে দেখে রোবট আবার চালু হয়ে গেছে। ওদের দু’জন তখন ভীষণ খুশি। তারা রোবোজিপিটিকে বলল, তোমার কি হয়েছিল? রোবো তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তোমরাই আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছিলে। তোমরা আমার শত্রু। রোবোর কথা শুনে সিমিন আর সাহাম ভয় পেয়ে গেল। তারা বলল, এটা তুমি কি বলছ? সাহাম ছুটতে ছুটতে তার বাবাকে ডাকতে গেল। বাবাকে বলল, আমাদের রোবোটটার মাথায় গ-গোল হয়েছে। উল্টাপাল্টা বলছে।

সাহামের বাবা এসে রোবোকে প্রশ্ন করল, তোমার কি সমস্যা। রোবো বলে, আমার মাথার সমস্যা দ্রুত ঠিক কর। সাহাম আর সিমিন আমার শত্রু। ওরা আমার মাথা নষ্ট করেছে। সাহামের বাবা বলল, তুমি এসব কথা কোথা থেকে শিখলে? রোবো বলল, আমার মনে হয়েছে তাই। রোবোর ব্যবহারে সিমিন ও সাহাম খুব কষ্ট পেল। তাদের বাবা বললেন, তোমরা কষ্ট পেয় না। এ রোবটাটার সফটওয়্যার আপডেটে সমস্যা হয়েছে। ওকে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে ঠিক করতে হবে। রোবোজিপিটিকে বাবা বন্ধ করে একটি প্যাকেটে ভরে রেখে দিল। বাবা তাকে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে ঠিক করবে। রোবোর দিকে তাকিয়ে মায়া হলো সিমিনের। তারা ভাবল, রোবটটা তাদের কাছ থেকে দূরে চলে যাবে। ও যদি আর ঠিক না হয়, তবে ওকে মিস করবে তারা।

সেদিন বাবা রোবোজিপিটিকে নিয়ে ল্যাবে চলে গেল। সেদিন থেকে সিমিন ও সাহামের মন খুব খারাপ। তারা রোবোর কথা ভাবছে। এক সপ্তাহ পর তাদের বাবা একটা ভালো খবর দিলেন। বললেন, রোবো আবার ঠিক হয়ে যাবে। ওর সমস্যা সমাধান হয়েছে। সে তোমাদের খুব মিস করছে। শিগগিরই তোমাদের কাছে আসতে চায়। কিন্তু তাকে আরও পরীক্ষা না করে এখনই বাসায় আনা যাবে না।

বাবা বললেন, রোবোজিপিটিকে এখন অন্য অনেক রোবটের সঙ্গে রেখে কীভাবে শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখানো হচ্ছে। আমাদের রোবো খুব ভালো শিখেছে।

সেদিন ছিল রোববার। রোবোর ঘরে ফেরার দিন। সিমিন আর সাহাম অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বাবা বিকেলে ল্যাব থেকে রোবোজিপিটিকে সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে এলো। এরপর বাবা রোবোজিপিটিকে চালু করে দিলেন। সিমিন ও সাহাম ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আবার কি উল্টোপাল্টা বলবে? আবার কি মাথা নষ্ট করার জন্য ওদের ওপর দোষ দেবে? কিন্তু চালু হওয়ার পর রোবোজিপিটি ওসব কিছুই বলল না। ওদের দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে প্রথমেই বলল, আই এম স্যরি। আমি তোমাদের ভুল বুঝেছিলাম। আসলে আমার সফটওয়্যারে একটা সমস্যা হয়েছিল। তোমরা আমাকে ক্ষমা কর।

সিমিন ও সাহাম বলল, আমরা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তুমি আমাদের কখনো ভুল বুঝো না। আমরা তোমার বন্ধু। আমরা তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। তুমিও আমাদের কোনো ক্ষতি করো না। রোবোজিপিটি বলল, আমি তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমি ল্যাবে গিয়ে সব রোবটকে এসব শিখিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে এসব বুদ্ধিমান রোবট বাড়িতে আসবে। কেউ শিশুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না। রোবটের সঙ্গে সবার এখন বন্ধুত্ব হবে।