অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রতিদান
ঢাকায় ফের খোলা হচ্ছে আর্জেন্টাইন দূতাবাস
অধ্যাপক শাব্বির আহমদ
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশি জনতার ভালোবাসায় আপ্লুত আর্জেন্টিনা। তাই ২০২৩ সালেই ঢাকায় দূতাবাস খোলার কথা ঘোষণা করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো চিঠিতে এই কথা জানিয়েছেন তিনি। ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি ও জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর জবাবে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের কথা জানান। দূতাবাস খোলার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণ ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হবে বলে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি অভিমত ব্যক্ত করেছেন
বাঙালির ফুটবলপ্রীতি বেশ পুরোনো। এক সময় শহরে-গ্রামে ফুটবল ছিল খুব জনপ্রিয় খেলা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ফুটবল খেলে বিশ্ব জনমত গঠনে সহায়তা করেছিল। একসময় দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়ায় ঢাকা লিগ খুবই মর্যাদাপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাহউদ্দিন দীর্ঘদিন হংকংয়ে পেশাদার ফুটবল খেলেছিলেন। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ১৯৭৪ সালে ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে নিয়ে প্রবন্ধ স্কুল সিলেবাসেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আশির দশকের পর উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফুটবল খেলা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার কারণে স্তিমিত হয়ে পড়ে। যদিও ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল আসরকে সামনে রেখা দেখা যায় ফুটবল উন্মাদনা। সর্বকালের সেরা ফুটবলার ‘পেলে’ আর ‘জিকো’র নাম মাঠ ছাড়িয়ে একসময় বাঙালির মুখে মুখে ফিরত। ভালোবেসে অনেকে নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন জিকো। কিংবদন্তি এই দুই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের প্রতি মুগ্ধতা আর ভালোবাসার কারণে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকে ছিল। কিন্তু, ১৯৮৬-তে সে ভালোবাসা নতুন ঠিকানা পেল। ওই বছর বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ম্যারাডোনা যেন মুহূর্তে পরিণত হন বাংলাদেশি মানুষের নতুন ফুটবল ঈশ্বরে। সে ভালোবাসা এখনও অটুট। ম্যারাডোনার প্রতি ভালোবাসা আর আর্জেন্টিনাকে সমর্থন যেন সমার্থক হয়ে ওঠে। বর্তমানে যেমন লিওনেল মেসির কারণে আর্জেন্টাইন দলের প্রতি একইরকম সমর্থন আছে বাংলাদেশি ভক্তদের।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের উন্মাদনার অনেক ইতিহাস আছে বাংলাদেশে। উভয় দলের সমর্থনে প্রতি বিশ্বকাপ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় মিছিল হয়, হাজার হাজার পতাকা বিক্রি হয় দেশজুড়ে। উত্তেজনাময় ম্যাচে অনেক সমর্থকের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে দেখা গেছে। ১৯৮৬ সালের পর আর কখনও শিরোপা জেতেনি আর্জেন্টিনা, কোনোবার গ্রুপ পর্ব থেকে বাদও পড়েছে। তাতে বাংলাদেশে বহু মানুষ বিষাদগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিটি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতি সমর্থন অব্যাহত আছে। আর্জেন্টিনার জয়ে মিছিল-সমাবেশ, পতাকা ওড়ানো ইত্যাদি আর্জেন্টিনাবাসীর গোচরে ছিল না বললেই চলে। তবে সম্প্রতি ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশে আর্জেন্টাইন ফুটবলের জনপ্রিয়তা বিশ্ববাসী বিশেষত, আর্জেন্টিনাবাসীর নজরে এসেছে। এতে করে মুগ্ধ হয়েছে আর্জেন্টিনাবাসী। ১৭ হাজার মাইল দূরের একটি দেশের বাংলাদেশি সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন, মেসির গোলে আর্জেন্টাইনদের মতোই বাঁধভাঙা উল্লাস, আর আর্জেন্টিনার পতাকা টাঙিয়ে মিছিল করে ব্যাপক আয়োজনের খবর সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে ঠিকই পৌঁছে গেছে দেশটিতে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের প্রথম দিন পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলে আর্জেন্টিনার জয়ের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেসির গোল উদযাপনের ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
কাতারে বিশ্বকাপের এক প্রাক-ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে ‘সমর্থনের জন্য’ বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায় আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কাকোনি। মেসির স্ত্রী, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা তাদের পেইজগুলোতে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশকে। আর্জেন্টিনার প্রতিটি টিভি চ্যানেলে, প্রিন্ট মিডিয়ায় একের পর এক বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক খবর প্রচারিত হয়। ফলে আর্জেন্টিনার ঘরে ঘরে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের অন্তহীন ভালোবাসার কৃতজ্ঞতা হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য একটি আর্জেন্টিনা ফ্যান গ্রুপ তৈরি করা হয় ফেসবুকে। ওই ফেসবুকে গ্রুপ থেকে গত ৭ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের পর লেখা হয়, শক্তিশালী ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ‘আমাদের জয়’। তারা বাংলাদেশের জয় নয়, লিখেছে আমাদের জয়।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো কাফিয়েরো ৮ ডিসেম্বর নিজস্ব টুইটে গত আগস্টের ১০ তারিখে পরমাণু অস্ত্রের অপসারণ সংক্রান্ত জাতিসংঘের চুক্তি পর্যালোচনা বিষয়ক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল থেকে বন্ধ আর্জেন্টিনার দূতাবাস ফের চালু করার কথা ভাবছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বাংলাদেশের কনস্যুলেট অফিস থাকলেও ঢাকায় আর্জেন্টিনার কোনো দূতাবাস নেই। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ থেকে দূতাবাস গুটিয়ে নেয়। এতদিন পর্যন্ত ঢাকাস্থ ব্রাজিল দূতাবাস থেকেই আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে আসা হচ্ছিল। আর্জেন্টিনা ঢাকায় দূতাবাস স্থাপন করলে সেটি হবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় কোনো লাতিন আমেরিকান দেশের দূতাবাস। নতুন করে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশিদের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি সামনে আসার পর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে থাকা বাংলাদেশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছেন।
এবার আসা যাক আর্জেন্টিনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রসঙ্গে। আর্জেন্টিনা শব্দটি শুনতে প্রথমেই মনে ভেসে ওঠে ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি ম্যারাডোনা অথবা আজকের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির মুখ, সঙ্গে নীল আর সাদার মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক পতাকার রং। আমরা হয়তো এটুকুই জানি। অথচ এই আর্জেন্টিনা ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক দেশ।
২৭,৮০,৪০০ কিলোমিটার আয়তনের দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জনসংখ্যা পৌনে পাঁচ কোটি। দেশটিন উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর। আর্জেন্টিনায় আদি প্রস্তর যুগে মানব বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস ১৬শ শতকে স্পেনীয় উপনিবেশীকরণের মাধ্যমে সূচিত হয়। ১৮১০ সালে আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বহুদিন ধরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ থাকলেও ২০০১ সাল থেকে মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহযোগিতায় মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ফকল্যান্ড দ্বীপুঞ্জ নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে দেশটির বিরোধ দীর্ঘদিনের। আর্জেন্টিনা তার নিকটবর্তী এই দ্বীপপুঞ্জটি ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৮২ সালে দখল করে নিলে ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধ লেগে যায়। যুদ্ধে ব্রিটেন ফকল্যান্ড পুনর্দখল করে। বর্তমানে এখানে ব্রিটেনের নৌঘাঁটি রয়েছে। অবশ্য আর্জেন্টিনা কখনও এই দ্বীপপুঞ্জের দাবি ত্যাগ করেনি।
মুসলমানরা আর্জেন্টিনার বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। দি ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের ২০১৯ সালের জরিপ মতে, দেশটিতে চার থেকে পাঁচ লাখ মুসলিম বসবাস করেন। অবশ্য পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ মতে, ২০১৯ সালে দেশটিতে ১০ লাখের মতো মুসলিম বাস করে। এদিকে দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব রিলিজিয়ন ডাটা আর্কাইভ জানায়, দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.৯ ভাগ নিজেদের ধর্ম ইসলাম বলে স্বীকার করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্পেন থেকে মুর ও মরিস্কো মুসলিমরা স্পেনের নাবিকদের সঙ্গে আর্জেন্টিনায় এসেছিল। তাদের অধিকাংশই আর্জেন্টিনায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। এদের অনেকে নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে বাধ্যতামূলক খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। আবার অনেকে নিজেদের মুসলিম পরিচয় গোপন করে খ্রিষ্টান বলে পরিচয় দেয়। উনিশ শতাব্দীতে আর্জেন্টিনায় আরব বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের আগমন ঘটে। এদের অধিকাংশই ছিল সিরীয় ও লেবানিজ বংশোদ্ভূত। অভিবাসীদের অধিকাংশ খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম ছিল। বর্তমানে আর্জেন্টিনায় আরব বংশোদ্ভূত প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বাস করে। আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনিমে মনেপ্রাণে মুসলিম ছিলেন বলে মনে করা হয়। মেনাম ১৯৩০ সালে সিরিয়ান শরণার্থী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অন্যতম শর্তপূরণ সাপেক্ষে তিনি খ্রিষ্টান ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেন।
প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনাম ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করলে তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী বুয়েন্স আয়ার্সে একটি মুসলিম কবরস্থানে ১৯৯৫ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত সন্তানের পাশে দাফন করা হয়। ওই সময়ের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, তার জন্য মুসলিমরা পবিত্র কোরআন পাঠ করেছেন এবং বিশেষ দোয়ার অনুষ্ঠান করেন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়া ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অনেক মুসলিমও সেখানে বাস করেন। মেনামের আমলে দেশটিতে মসজিদ ও ইসলামিক স্কুল নির্মাণে নানাভাবে সহায়তা দেয়া হয়। দেশটির অধিকাংশ মুসলিম রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বাস করেন। ১৯৯৬ সালে সৌদি বাদশাহর সহায়তায় কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নামে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ স্থাপিত হয়। ১৯৯২ সালে প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনাম সৌদি আরব সফরের পর ওই মসজিদের জন্য ৩৪ হাজার স্কয়ার মিটার জায়গার ব্যবস্থা করেন। অত্যাধুনিক মসজিদ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। মসজিদের আওতায় লাইব্রেরি, দুটি স্কুল ও বিশাল গার্ডেন রয়েছে। ইসলামি শিক্ষার প্রসার, আলোচনা সভার আয়োজন, ইসলামি শরিয়াসম্মত বিয়ের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যাবলি সেন্টারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ১৫০টির বেশি ইসলামিক সেন্টার আছে। এর তত্ত্বাবধানে অসংখ্য মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ পরিচালিত হয়। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, আর্জেন্টিনার মুসলমান বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ধর্মকর্ম পালন করে থাকেন।
কূটনীতিক সম্পর্ক না থাকলেও আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিক লেনদেন মোটামুটি সচল রয়েছে। আর্জেন্টিনা ২০২১ সালে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলারের সয়াবিন, গম, ভুট্টাজাতীয় পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ২০২০ সালে আর্জেন্টিনায় রপ্তানি করেছে ১৭.৫ মিলিয়ন ডলারের নিটওয়্যার, নন-নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল ফুটওয়্যার জাতীয় পণ্য। কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে দুই দেশের মধ্যে হতে পারে গভীর বন্ধুত্ব; অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলায় পারস্পরিক সহযোগিতা। আর্জেন্টিনায় উৎপাদন হয় প্রচুর সয়াবিন, যার চাহিদা বাংলাদেশে ব্যাপক। বাংলাদেশ সয়াবিন আমদানির পাশাপাশি আর্জেন্টিনায় রপ্তানি করতে পারে গার্মেন্টস পণ্য। ২০১১ সালের মতো মেসিসহ পুরো আর্জেন্টিনা টিমকে বাংলাদেশে এনে দেশের ফুটবলে জাগরণ তৈরি করা যায়। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজনসহ আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত বয়সভিত্তিক ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবলকে বিশ্বমানে উন্নীত করা যায়। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ব্রাজিল সমর্থকও রয়েছে। ব্রাজিল আয়তনে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম এবং অষ্টম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। পৃথিবীর বৃহৎ চিরহরিৎ বনভূমি অ্যামাজনের বেশিরভাগ অংশই ব্রাজিলে। কফি উৎপাদনে বিখ্যাত এ দেশ উন্নত ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ফুটবল সমর্থনকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ব্রাজিলের সঙ্গেও অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলায় কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
লেখক : কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক