ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্রিটিশ যুদ্ধ ট্যাঙ্ক চ্যালেঞ্জার টু

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কী ভূমিকা রাখবে

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কী ভূমিকা রাখবে

ইউক্রেনকে আরও বেশি এবং যত দ্রুত সম্ভব সামরিক সাহায্য দেওয়ার জন্য ব্রিটেন তার মিত্র দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, রসদ সরবরাহে সমস্যা এবং মনোবল দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে রাশিয়া বর্তমানে ‘অসুবিধাজনক অবস্থানে’ রয়েছে। এ কারণে রুশ সৈন্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটা ‘সুযোগ’ তৈরি হয়েছে।

ব্রিটেন যে ইউক্রেনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্ক পাঠাচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী সুনাকের বিবৃতিতে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছিল শনিবার। এছাড়া ব্রিটেন ইউক্রেনে আরও বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। এসব অস্ত্রও অনেকটা ট্যাঙ্কের মতো। এগুলো নিজে নিজেই অগ্রসর হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলছেন, তাদের চ্যালেঞ্জার টু ট্যাঙ্ক রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে আরও বেশি শক্তিশালী করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে শনিবার ফোনে কথা বলার সময় এই ট্যাঙ্কসহ আরও কিছু অতিরিক্ত অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানান সুনাক।

প্রধানমন্ত্রীর অফিস ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হচ্ছে, এই পরিকল্পনা থেকে ইউক্রেনকে আরও বেশি সামরিক সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে ব্রিটেনের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে।

পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, ব্রিটেন ইউক্রেনে ১৪টি চ্যালেঞ্জার টু ট্যাঙ্ক পাঠাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এছাড়া ব্রিটেনের তৈরি আরও ৩০টি বড় আকারের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র- এএস৯০ পাঠানো হবে।

এই পরিকল্পনার জন্য ব্রিটেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ‘ট্যাঙ্ক দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত আমাদের শুধুমাত্র রণক্ষেত্রেই শক্তিশালী করবে না, এটি অন্যান্য মিত্রদেরও সঠিক বার্তা পাঠাবে,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে, ফোনে এই দুই নেতা ইউক্রেনীয়দের সাম্প্রতিক কিছু বিজয় নিয়ে আলাপ করেছেন। তারা বলেছেন, ‘সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনের সাহায্যে এই মুহূর্তকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

রাশিয়ার পক্ষ থেকে শনিবার রাজধানী কিয়েভ, খারকিভ এবং ওডেসাসহ ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ব্রিটেনের এই পরিকল্পনার কথা জানা যায়। সেদিন পূর্বাঞ্চলীয় দিনিপ্রো শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে চালানো রুশ হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়।

চ্যালেঞ্জার টু ট্যাঙ্ক

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক এই চ্যালেঞ্জার টু। এতে ক্রু থাকে চারজন- কমান্ডার, গানার, লোডার এবং ড্রাইভার। ইউক্রেনের প্রধান ট্যাঙ্কগুলোতে যতো ক্রু থাকে এই সংখ্যা তার চেয়ে একজন বেশি। এটি শত্রুপক্ষের সরাসারি আঘাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। এসব ট্যাঙ্কের ওজন ৬৪ টন যা রুশ ট্যাঙ্কের চেয়েও ভারী। প্রধানমন্ত্রী সুনাক বলেছেন, তিনি আশা করছেন এই ট্যাঙ্কের সাহায্যে ইউক্রেনীয় বাহিনী ‘রুশ সৈন্যদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে’ পারবে।

চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্কগুলো ২০ বছরেরও বেশি পুরোনো। এগুলো তৈরি করা হয়েছে ১৯৯০-এর দশকে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন যেসব ট্যাঙ্ক ব্যবহার করছে সেগুলোর তুলনায় ব্রিটেনের তৈরি চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্ক সবচেয়ে আধুনিক।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ট্যাঙ্কের সাহায্যে ইউক্রেন আরও ভালো করে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারবে। একই সঙ্গে আরও নিখুঁত আক্রমণ চালাতে সক্ষম হবে।

এসব ট্যাঙ্ক কীভাবে চালাতে হবে এবং এগুলোর সাহায্যে শত্রুপক্ষের ওপর কীভাবে আক্রমণ পরিচালনা করতে হবে সে বিষয়ে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণও দেবে ব্রিটেন।

ব্রিটেন আশা করছে, ইউক্রেনকে এই ট্যাঙ্ক দেওয়ার ফলে যুদ্ধের গতিবিধি পাল্টে যাবে এবং একই সঙ্গে অন্য দেশগুলোও ইউক্রেনকে আরও আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুশ আক্রমণ প্রতিরোধে ইউক্রেনের আধুনিক অস্ত্রের প্রয়োজন। ব্রিটেনে ডিফেন্স সিলেক্ট কমিটির প্রধান টবিয়াস এলউড সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রতি আন্তর্জাতিক সাহায্য এখনও খুব কম।’

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া চায় যে এব্যাপারে আমরা দ্বিধান্বিত থাকি।’ ‘আমরা যদি সামনের দিকে এগিয়ে না যাই এবং ইউক্রেনকে সমর্থন না করি, রাশিয়া সেখান থেকে যাবে না,’ বলেন তিনি। তিনি পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে একটি অস্ত্র তৈরি কারখানা গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছেন, যেখান থেকে ইউক্রেন দীর্ঘ মেয়াদে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারবে।

পোল্যান্ডও ইউক্রেনে জার্মানির তৈরি ১৪টি লেপার্ড ট্যাঙ্ক পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তবে এসব ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য জার্মানির অনুমোদন প্রয়োজন।

কিয়েভ আশা করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের তৈরি কিছু আব্রামস ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠাবে। লেপার্ড ট্যাঙ্কে যে গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয় আব্রামস ট্যাঙ্কেও সেই একই গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ মাসের শুরুর দিকে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ইউক্রেনে সাঁজোয়া গাড়ি পাঠানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে ইউক্রেনের রণশক্তি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে।

ইউক্রেনে ব্রিটেনের চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্ক পাঠানোর পরিকল্পনার খবরে রাশিয়া সতর্ক করে দিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘আমরা আগেও যেমন বলেছি, অস্ত্র সরবরাহের ওপর রাশিয়ার হামলা হবে বৈধ টার্গেট।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত