ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অশান্তির ইঙ্গিত কসোভোতে

অধ্যাপক শাব্বির আহমদ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অশান্তির ইঙ্গিত কসোভোতে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আবার অশান্তির ইঙ্গিত লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলকান অঞ্চলের দেশ কসোভোতে। গত ডিসেম্বর ২০২২ সালে কসোভোর জাতিগত আলবেনিয়ান সরকার তার দেশের সার্বীয় অধিবাসীদের গাড়ির জন্য লাইসেন্স প্লেট ইস্যু এবং সার্বিয়া থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রবেশে বিশেষ অনুমতির ব্যবস্থা চালু করতে গেলে প্রতিবাদে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কসোভোর উত্তরাংশ মিত্রোভিকাতে বসবাসরত হাজার জাতিগত সার্বিয়ানরা। কসোভো সরকার এসব সার্ব বিক্ষোভকারীদের দমন করতে গেলে সার্বিয়া বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে কসোভো সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। আশঙ্কা করা হয়েছিল, জাতিগত সার্বদের সুরক্ষার নামে যেকোনো সময় সার্বিয়ান বাহিনী কসোভোতে অভিযান শুরু করতে পারে। কিন্তু উত্তেজনা কমাতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চুক্তি অনুযায়ী, সার্বিয়ার নাম্বার প্লেট থাকা গাড়িগুলোকে জরিমানা করা বন্ধ করবে কসোভো। আর কসোভোর কোন শহরের কোন গাড়ির জন্য নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করবে না সার্বিয়া। কিন্তু এতদসত্ত্বেও দুই দেশের নেতাদের মাঝে কমেনি বাকযুদ্ধ আর হুমকি-ধমকি।

উল্লেখ্য, ১০ হাজার ৯০৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের স্থলবেষ্টিত কসোভোর ২০ লাখ জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশ মুসলিম। কসোভোর বেশিরভাগ মানুষ যেহেতু আলবেনিয়ান গোত্রের, তাই দেশটির প্রধান ভাষাও আলবেনিয়ান। ফলে অনেকে কসোভোর সরকারকে আলবেনিয়ান হিসেবে অবহিত করে। কসোভোর দক্ষিণ-পশ্চিমে আলবেনিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে মেসিডোনিয়া, পশ্চিমে ক্রোয়েশিয়া ও উত্তরে সার্বিয়া অবস্থিত। কসোভোর সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাগত অবস্থা চমকপ্রদ। প্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয় কসোভোর সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশটির ইসলামী ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তুরস্ক প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে। তুরস্কের সঙ্গে দেশটির রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। কসোভোর উত্তরাংশ মিত্রোভিকাতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত সার্বিয়ান বাস করে। সার্বিয়া এসব জাতিগত সার্বদের কসোভোর আইন-কানুন না মানতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এরা বরাবরই সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে।

সার্বিয়া-কসোভোর আজকের সংকট সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একটু পেছনের ইতিহাসে। মার্শাল টিটুর দেশ ‘যুগোস্লাভিয়া’ ইউরোপ তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কালের পরিক্রমায় আজ যুগোস্লাভিয়া শুধু ইতিহাস। যুগোস্লাভিয়া ছিল ছয়টি ভিন্ন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফেডারেশন। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া ও মন্টিনিগ্রো মিলে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দানকারী কসোভো ছিল ঐতিহ্যগতভাবে আলবেনিয়ার একটি অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটিকে সার্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কসোভোকে সার্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের সময় সার্বিয়ানদের বিরুদ্ধে বিখ্যাত কসোভো যুদ্ধে সার্বরা চরমভাবে পরাজিত হয়েছিল। ফলে ১৪৫৫ সালে এই অঞ্চলটি ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়।

ওসমানীয় দখলদারিত্বের আগে এখানকার আলবেনীয় জনগোষ্ঠীর ওপর ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা এতটাই করারোপ করেছিল যে, মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। ওসমানীয়দের বিজয়ের পর আলবেনীয় জনগোষ্ঠী একসঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করে। বলাবাহুল্য, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ৫০০ বছর ওসমানীয় শাসনের অধীনে ছিল। এ সময় এ অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার ঘটে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কসোভো ও মেসিডোনিয়াতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ক্রোয়েশিয় স্লোভেনিয়ায়, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী। যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের রাজধানী বেলগ্রেডে বর্তমানে সার্বিয়ার রাজধানী। ইউরোপের অন্যতম প্রধান দুইটি নদী দানিয়ুব ও সাভার নদীর সঙ্গমস্থল বেলগ্রেড ছিল সে সময় পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে প্রধান সেতুবন্ধনকারী নগরী। এ কারণে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যসহ ইউরোপের সব সাম্রাজ্যের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল বেলগ্রেড।

মার্শাল টিটুর আগে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন ছিল বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি রাষ্ট্র। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সে সময় কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করতে পারতেন। তবে রাষ্ট্র ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত। সে সময় যুগোস্লাভিয়ার মানুষ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানিটি, অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটি ও ইসলাম- এ তিন প্রধান ধর্মে বিভক্ত ছিল। স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ছিল ক্যাথলিক খ্রিষ্টানিটি। অন্যদিকে সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া ও মন্টিনিগ্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ছিল অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটি। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভোর বেশিরভাগ মানুষের ধর্ম ছিল ইসলাম। সে সময় মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনী যুগোস্লাভিয়ার ওপর জার্মানি সামরিক দখল কায়েম করে। যুগোস্লাভিয়ার অনেক ভূখণ্ড দখল করে নেয় বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও ইতালি। মার্শাল টিটো সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনেন সহায়তায় ১৯৪৪ সালে বিদেশি আগ্রাসনকারীদের বিতাড়িত করে যুগোস্লাভিয়া জাতীয় মুক্তি মোর্চা প্রতিষ্ঠা করে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। যুদ্ধে মোট ১৫ হাজার জার্মান সেনা মারা যায়, ৯ হাজারকে আটক করা হয়। তখন থেকেই মার্শাল টিটু হয়ে ওঠেন যুগোস্লাভিয়ার অবিসংবাদিত নেতা ও বিশ্বের একজন প্রভাবশালী রাষ্ট্র নেতা।

নব্বই দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনও ভেঙে যায় এবং উপরোক্ত ৬টি রাষ্ট্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সাবেক যুগোস্লাভিয়া ভেঙে জন্ম নেওয়া সবক’টি রাষ্ট্রকে মেনে নিলেও ৫১ হাজার আয়তনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়া-হার্জেগোভিনাকে মেনে নিতে পারেনি মানবাধিকার ও সভ্যতার ধ্বজাধারী ইউরোপিয়ানরা। ওই সময় ইউরোপের অনেক বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রকাশ্যে বলতে শোনা গিয়েছিল, ইউরোপের বুকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হোক- তারা সেটি চান না। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোশেভিচের প্রত্যক্ষ মদদে বসনিয়ার কসাইখ্যাত সার্বনেতা রাদোভান কারাজজিচ ও সার্ব অধিনায়ক রাদকো ম্লাদিচের নেতৃত্বে ১৯৯১ থেকে শুরু হওয়া সাড়ে তিন বছরের গৃহযুদ্ধে সার্ব জাতীয়তাবাদীদের হাতে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার দুই লাখ মুসলমান জঘন্য হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। সেব্রেনিসায় ৮ হাজার মুসলমান হত্যাযজ্ঞ ছিল খুবই ভয়ংকর। মুসলমানদের ওপর এই ভয়ানক হত্যাযজ্ঞে গোটা বিশ্ব হতভম্ব হয়েছিল।

১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে যুক্তরাষ্ট্র এক প্রকার বাধ্য হয়েই ‘ডেটন চুক্তি’র মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে তিন ব্যক্তির (বসনিয়াক, সার্ব ও ক্রোয়েট) প্রেসিডেন্সি, আন্তর্জাতিক দূত এবং একটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পূনর্গঠন করে। বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডেটন শান্তি’ চুক্তির মাধ্যমে বসনিয়ায় রক্তগঙ্গা বন্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে দেশটির হাত পা একেবারে বেঁধে ফেলা হয়েছে। জটিল প্রশাসনিক কাঠামো আর তীব্র জাতিগত বিভেদের দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা থাকলেও বসনিয়া ও স্রেব্রেনিৎসায় মুসলিম গণহত্যার দায়ে বলকানের কসাই হিসেবে কুখ্যাত উগ্র সার্ব জাতীয়তাবাদী নেতা স্লোবোদান মিলোসেভিচ, রাদোভান কারাদজিচ এবং রাতকো ম্লাদিচকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্লোবোদান মিলোসেভিচ জেলেই মারা যান। অপর দু’জন যাবজ্জীবন কারাগারে বন্দি। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাপক অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও মূলত প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক প্রেসিডেন্ট আলিজা ইজেৎভেগোভিচের নেতৃত্বে বসনিয়ার মুসলমানরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এখনও বসনিয়া-হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্রে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী।

বসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়ার মতো মুসলিম প্রধান কসোভো স্বাধীনতার ইচ্ছা প্রকাশ করলে সার্বিয়া ‘জবাব’ দেয় কসোভোর আলবেনিয়ান জনগোষ্ঠীর ওপর নিষ্ঠুর হত্যা-দমন-পীড়ন চালিয়ে। এ সময়ও সার্বিয়ানদের পাশে দাঁড়ায় রাশিয়া। ১৯৯৯ সালে ন্যাটোর সামরিক হস্তক্ষেপে এই হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটলেও এতে তের হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। কসোভোতে এখনও ৩৭৭০ ন্যাটো সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। ২০০৮ সালে সার্বিয়ার কাছ থেকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে কসোভো। এভাবে বিশ্বমানচিত্র থেকে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যায় যুগোস্লাভিয়া নামক দেশটি। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৯৯টি দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশের মধ্যে ২২টি দেশ রয়েছে। কিন্তু রাশিয়া ও চীন-এখনও জাতিসংঘে কসোভোর সদস্য হওয়া আটকে রেখেছে। আর সার্বিয়া কখনোই কসোভোকে স্বীকৃতি দেবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার ভুসিস।

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুসিচও সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোশেভিচের মতো ‘সার্ব বিশ্বের’ স্বপ্ন দেখেন। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ভুসিচ কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানীকে ‘ছোট জেলেনস্কি’ আখ্যা দিয়েছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউরোপীয় দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তাতে যোগ দিতে রাজি হয়নি সার্বিয়া। কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানী সম্প্রতি বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন সার্বিয়াকে দিয়ে ইউক্রেনের ন্যায় কসোভোকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারেন। অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকও পুতিন ইউক্রেনে সফল হলে তার পরবর্তী শ্যেন দৃষ্টি বলকান অঞ্চলের কসোভোর দিকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে কসোভোর পাশে কেবল ন্যাটো নয়, উদীয়মান পরাশক্তি তুরস্কও ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে সিরিয়া, লিবিয়া, নাগর্নো কারাবখ, এমনকি ইউক্রেনেও রাশিয়ার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেও পুতিন যেখানে এরদোয়ানকে ক্ষ্যাপাতে চাননি, সেখানে কসোভোর মতো তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের বিরুদ্ধে পুতিন সার্বিয়াকে লেলিয়ে দেবেন কি-না প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। প্রসিডেন্ট এরদোয়ান এরই মধ্যে বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের ভরসা হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কসোভো তুরস্ক থেকে প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। তুরস্কের কসোভোতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। ২০২১ সালে বসনিয়ার সার্ব জাতীয়তাবাদীরা সার্বিয়ার সহযোগিতায় বসনিয়ায় মুসলমানদের সঙ্গে আবার বিবাদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে এরদোয়ান বসনিয়ান মুসলমানদের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণার পর সার্বরা থমকে দাঁড়ায়। এভাবে তিনি পুরো বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।

কসোভো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও দেশটির সমাজ অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ। তাই রাস্তায় বের হলে আপনি হিজাব ও শালীন পোশাক পরিহিতা কিছু নারী যেমন দেখবেন, তেমনি দেখবেন অসংখ্য নারীকে, যাদের পরনে ইউরোপের পোশাক। যেহেতু মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই কসোভোতে আছে অনেক চমৎকার মসজিদ, যা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। অটোমানদের অধীনে থাকা অবস্থায় তুর্কি জনগোষ্ঠীর বিশাল সংখ্যক লোক বলকান অঞ্চলে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। ওই সময় অনেক খ্রিষ্টান স্লাব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। উপদ্বীপের অধিবাসীদের মাঝে তুরস্ককরণ নীতির ফলে বলকান অঞ্চলে জাতিগত, সংস্কৃতিগত বৈপরিত্য থাকা রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করে। নব্য তুর্কিরা ভিন্ন সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ধর্মীয় অবকাঠামো গড়ে তোলে। এভাবে বলকানজুড়ে গড়ে উঠে বিশাল তুর্কি জনগোষ্ঠী। এসব তুর্কি জনগোষ্ঠীর প্রতি তুরস্ক বরাবরই সহানুভূতিশীল। এরদোগান সরকার ও তুরস্কের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বলকানের মুসলমানদের কল্যাণে বিভিন্নভাবে কাজ করে চলছে।

লেখক : কলামিস্ট ও

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত