গত কয়েক মাসের মধ্যে একাধিক বদল হয়েছে ভারতের রাজধানীতে। এবার বদলে গেল দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থিত আইকনিক মোগল গার্ডেন্সের নাম। দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত সেই নাম বদলে ‘অমৃত উদ্যান’ করে দিয়েছে ভারত সরকার। গত শনিবারই হয়েছে ঘোষণা। এমনকি, অমৃত উদ্যান লেখা সাইনবোর্ড নিয়ে আসা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনের ঠিক বাইরে।
এহেন ঘটনা ঘিরে আরও একবার বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ছে ভারতের বিজেপি সরকার। বিরোধী দল কংগ্রেস সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা সিপিআইকে। বিজেপি দেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে বলে কটাক্ষ করেছে দেশের বাম নেতাদের একাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে রোববার একটি ট্যুইট করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি জহর সরকার। লেখেন, ‘মোগলাই পরোটার নাম কবে স্বর্গলোক বা ইন্দ্রলোক পরোটা হবে, সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি।’
বিরোধীদের একটানা সমালোচনার মুখে পড়েও অবশ্য মোগল গার্ডেনসের নতুন নাম নিয়ে প্রচার চালানোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ দাসত্ব থেকে মুক্তির বার্তা বহন করছে। একই সঙ্গে নাম পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
নয়াদিল্লিতে মীনাক্ষী লেখি বলেন, ‘মোগল গার্ডেনসের নাম পরিবর্তন করে অমৃত উদ্যান করা হয়েছে। এটা দেশবাসীর কাছে খুবই ভালো খবর। এটা আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের সময়। ফলে এই সময় এমন নামকরণ ইতিবাচক বার্তা বহন করে। যেসব শৃঙ্খল আমাদের দাসত্ব মনে করিয়ে দেয়, সেই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা উচিত।’
এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রেস সচিব অজয় সিং বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবনের সব বাগানের নাম হবে অমৃত উদ্যান। আগে বর্ণনামূলক নামকরণ ছিল। এখন পরিবর্তন করে উদ্যানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে।’ ৩১ জানুয়ারি সাধারণ মানুষের জন্য অমৃত উদ্যানের গেট খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোগল গার্ডেনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ওদের (মোগল) নামে থাকা সব জায়গা চিহ্নিত করে, তাদের নাম বদল করতে হবে। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা এরকম সব জায়গার নাম বদল করে দেব।’
এদিকে বিজেপিকে পাল্টা সমালোচনা করে তৃণমূল এমপি ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, ‘কে জানে, কবে এরা ইডেন গার্ডেন্সের নাম বদলে মোদি গার্ডেন করতে বলে। ওদের উচিত বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের দিকে নজর দেয়া। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করা। এসবিআই, এলআইসির মতো সংস্থাগুলোকে বাঁচানো।’
মোদি সরকারের জমানায় নাম বদল অবশ্য নতুন কিছু নয়। বছর কয়েক আগেই মোগলসরাই স্টেশনের নাম বদলে করা হয়েছিল দিন দয়াল উপাধ্যায় জংশন। মোগলসরাই জংশনের মতোই ইলাহাবাদ, ফৈজাবাদ স্টেশনগুলোর নামও বদলে যথাক্রমে প্রয়াগরাজ এবং অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট রাখা হয়। রাজপথ হয়ে গিয়েছে ‘কর্তব্য পথ’। এবার বদলে গেল রাষ্ট্রপতি ভবনের বিখ্যাত মোগল গার্ডেন্সের নামও।
