মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের পাঁয়তারা
অধ্যাপক শাব্বির আহমদ
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল তার অস্তিত্বের জন্য বরাবরই ইরানকে প্রধান হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। ইসরাইল বারবার বলে আসছে, সে ইরানকে কোনভাবে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হতে দেবে না। ইরান তো ইসরাইলের অস্তিত্বই স্বীকার করে না। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবের পর ফ্রান্স থেকে ফিরে এসেই ইরানের ইসরাইলি দূতাবাসকে প্যালেস্টাইন দূতাবাস ঘোষণা করেছিলেন। খোমেনির মতো ইরানি নেতারা মাঝেমধ্যে ইসরাইলের অস্তিত্ব মুছে ফেলার হুমকিও দিয়ে থাকেন। বিগত চার দশক ধরে এভাবে হুমকি পাল্টা হুমকি চলে আসছে চিরবৈরী এই দুই দেশের মধ্যে।
ইরান ও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে ঠান্ডা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। আর এ যুদ্ধের মধ্যে ইরানের সামরিক এবং পারমাণবিক স্থাপনায় গোপন হামলাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিলে ইরান তার ভূগর্ভস্থ নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করেছিল। ওই হামলায় ইরানি এ পারমাণবিক স্থাপনার সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত ২৯ জানুয়ারি রোববার রাতে অনেকগুলো অজ্ঞাতনামা ড্রোন ইরানের বিভিন্ন সামরিক শিল্প স্থাপনায় হামলার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্ব আবার চরমে পৌঁছে। ইরানের অভিযোগ, দেশের অভ্যন্তরে চর নিয়োগ দিয়ে তাদের সামরিক স্থাপনায় মনুষ্যবিহীন যান-ইউএভি ড্রোন থেকে বোমা হামলা চালিয়ে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে। এই ড্রোন হামলার দু’দিন আগে ২৭ জানুয়ারি তেহরানে আজারবাইজানের দূতাবাসে প্রবেশ করে গুলি চালায় এক অস্ত্রধারী। ওই ঘটনায় দূতাবাসের নিরাপত্তা প্রধান নিহত হন।
ঘটনার পর আজারবাইজান তার দূতাবাস খালি করে দিয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি জার্মানিও অনুরূপ পদক্ষেক গ্রহণ করেছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এভাবে দূতাবাস খালি করা হচ্ছে এক ধরনের যুদ্ধের ইঙ্গিত। উল্লেখ্য, ইসরাইল আজারবাইজানকে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে বলে ইরান বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। ইরান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আজারবাইজানের নাখিচেভান অঞ্চলটি নিজের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আজারবাইজান তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলে দেশটির সঙ্গে রয়েছে ইসরাইলের সামরিক চুক্তি। গত ২০২১ সালের নাগর্নো কারাবখ যুদ্ধে তুরস্কের পাশাপাশি ইসরাইলও আজারবাইজানের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
তেহরানের পারমাণবিক তৎপরতা ও ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ায় দীর্ঘ পাল্লার ‘আত্মঘাতী ড্রোনসহ’ অস্ত্র পাঠানো নিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা চলার পাশাপাশি দেশের ভেতরে কয়েক মাস ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে এ ড্রোন হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। গত মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন এবং সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থি সরকার। এমন সময় ইরানে হওয়া হামলার পেছনে সত্যি সত্যি ইসরাইলের হাত থাকলে তা হবে নেতানিয়াহুর নতুন মেয়াদে চালানো এ ধরনের প্রথম হামলা। ইরানকে কখনও পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে না দেয়ার নেতানিয়াহুর অঙ্গীকার অনেক পুরোনো এবং সেই অঙ্গীকার থেকে সরে না আসার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন গত ২৯ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণের পর নেসেটে (পার্লামেন্টে) দেয়া বক্তব্যে।
ইসরাইল ১৯৮১ সালের জুনে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কাছে ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার একটি স্থাপনায়ও বিমান হামলা চালায় দেশটি। অনেক বিশ্লেষক মনে করেছিলেন, ইসরাইল যেকোনো সময় ইরানেও অনুরূপ হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করে দিতে পারে। ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ‘আগামীকালের’ মধ্যেই হামলা চালানোর সক্ষমতা ইসরাইলের আছে বলে গত ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর দেশটির বিমানবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল টোমার বার ঘোষণা দেওয়ার পর শুরু হয়েছিল উত্তেজনার পারদ। জেরুজালেম পোস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমাকে ধরে নিতে হবে এটা আমার সময়ে ঘটবে এবং আমার কাঁধ ইতোমধ্যেই দায়িত্বের ওজন বুঝতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে আসছে যে, ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা ব্যর্থ হলে ওয়াশিংটন ‘প্ল্যান বি’ এর দিকে অগ্রসর হবে। তবে ‘প্ল্যান বি’ এর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও সেটা যে সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত সেটা কারও না বুঝার কথা নয়।
২০১৫ সালে শক্তিধর পাঁচটি দেশের সঙ্গে ইরানের আলোচনায় অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে যে কোনো সময়ে ইসরাইল ইরানে হামলা করে বসতে পারে- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় ইরানে হামলার ধরন কেমন হবে, কিংবা ইরানের সামরিক সক্ষমতাই বা কতটুকু- এ নিয়েও পর্যবেক্ষক মহলে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু না ঘটলেও ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ইরানের আভ্যন্তরে সফল অপারেশন চালিয়ে মোহসিন ফখরিযাদেসহ ইরানের নামজাদা বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয় এবং অজ্ঞাত স্থান থেকে বিভিন্ন পরমাণু স্থাপনায় হামলা পরিচালনা করা হয়। ইসরাইলের পক্ষ থেকে স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করা না হলেও ধারণা করা হয় যে, ইরানের অভ্যন্তরে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে সম্ভাব্য হামলা ইরাক বা সিরিয়ার মতো হবে না। কারণ, ওই দুটি দেশে হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল একটিমাত্র। এসব স্থাপনা ভূগর্ভস্থও ছিল না। ইরানে হামলার ক্ষেত্রে ইসরাইলকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে। যেমন দূরত্ব, একাধিক স্থাপনা, পাল্টা হামলার আশঙ্কা ইত্যাদি। ইসরাইল থেকে ইরানে হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু গুলোর গড় দূরত্ব দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার। লন্ডনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) প্রধান ডগলাস ব্যারি বলেন, ‘আকাশে জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে বিমানে জ্বালানি ভরার বিষয়টি হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, শুধু হামলা করাই শেষ কথা নয়। হামলা চালানোর পর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে ফিরেও আসতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি দরকার। ইসরাইল থেকে একবার জ্বালানি নিয়ে ইরানে হামলা চালিয়ে আবার ফিরে আসা ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের জন্য কঠিন হবে। তবে, ইসরাইল এ বিষয়ে তার সব প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেছে।
খবরে প্রকাশ, ইসরাইলের সম্ভাব্য হামলার তালিকায় প্রথমে রয়েছে তেহরানের দক্ষিণের নাতাঞ্জ এবং পবিত্র বলে পরিচিত কুম শহরের ‘ফোর্দো’ পরমাণু স্থাপনা। এ ছাড়া আরাক ও ইস্পাহান নগরের পারমাণবিক স্থাপনাও রয়েছে। ইসরাইলের জন্য নাতাঞ্জ ও ফোর্দোতে হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করা কঠিন হতে পারে। কারণ, নাতাঞ্জের স্থাপনা ভূগর্ভস্থ। আর ফোর্দোর স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে পর্বতময় এলাকায়। ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলার জন্য বিশেষ ধরনের অস্ত্রের প্রয়োজন। তাছাড়া ইসরায়েলি বিমানকে ইরানে প্রবেশ করতে হলে তাকে পাড়ি দিতে হবে সৌদি আরব অথবা সিরিয়া এবং ইরাকের আকাশ দিয়ে। তবে ইরানের প্রতিবেশী কোনো দেশ থেকে ইসরাইল এটি করতে পারলে তার জন্য অপারেশন পরিচালনা সহজ হবে। কিন্তু এর সম্ভাবনা কম। কারণ সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ইরানের আক্রমনের শিকার হবে। ফলে সহজে অন্য কোনো দেশ ইসরাইলকে এ সুযোগ নাও দিতে পারে। অধিকন্তু, ইরানের সাথে চরম শত্রুভাবাপন্ন সৌদি আরব ও আরব আমিরাত সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তৎপর।
অন্যদিকে হামলা হলে ইরানও বসে থাকবে না। ইরানের দিক থেকে পাল্টা হামলার আশঙ্কা ইসরাইলের হামলার পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলতে পারে। রুশ প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও যথেষ্ট দক্ষ। ইরানের বিমান বাহিনী অনেক পুরোন বিমানে সজ্জিত হলেও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অনেক শক্তিশালী। এক সময় ইরানের রাডার নেটওয়ার্ক সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের কোনো যুদ্ধবিমান শনাক্ত এবং অনুসরণে সক্ষম ছিলো না। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলসহ বিভিন্ন দেশের ড্রোন বিমান ইরানের অভ্যন্তরে অহরহ প্রবশে করত এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারত। ইরান এগুলো শনাক্ত করতে পারত না। আফগানিস্তান এবং ইরাক অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশে দীর্ঘ সময় অবস্থান করত বিনা বাধায়। ইরানের সেদিন এখন আর নেই। ইরানের কাছে বর্তমানে রয়েছে রাশিয়ার শক্তিশালী এস-৩০০ মিসাইল। আর ইরান নিজেও এ ধরনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম উদ্ভাবন করেছে।
ইরানের বর্তমান এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম ইসরাইলের এফ-১৬ অথবা এফ-১৫ বিমানের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এসব বিমান ইরানে প্রবেশ করলে তা ইরানের রাডারে ধরা পড়বে এবং ইরানের শক্তিশালী মিসাইল আঘাতের শিকার হবে। তাই ইরানে হামলা করতে হলে এখন ইসরাইলের সেটি করতে হবে শুধু এফ-৩৫ এর সাহায্যে। ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ইরানের শক্তির মূল স্তম্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড়, বিশেষ করে স্বল্প পাল্লা আর মাঝারি পাল্লার। ইরানের স্বল্প বা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আছে পুরো ইসরাইল। শাহাব, আশুরা, কাদের, সেজ্জিল- এসব ক্ষেপণাস্ত্র এক হাজার থেকে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানতে পারে। মিশকাত নামের ইরানি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের দৌড় দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।
তাছাড়া ইরান আক্রান্ত হলে তার নিজস্ব বাহিনীর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলোকেও ব্যবহার করবে। লেবাননের হেজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী এবং গাজা উপত্যকার হামাস। লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও গাজার মিলিশিয়াদের হাজার হাজার রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরান একপ্রকার ঘেরাও করে রেখেছে ইসরাইলকে। ইসরাইল পুরো সীমানা এন্টি প্লাস্টিক মিসাইল দিয়ে সুরক্ষিত এবং শত্রুর যেকোন মিসাইল/ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম দাবি করলেও একই সময়ে একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ পরিচালনা এবং প্রতিরোধ ব্হ্যু গড়ে তোলা আদৌ সম্ভব কি-না সেই সন্দেহ জোরালো করে তুলেছে গত বছর হামাসের শতভাগ রকেট হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার পর। ইরান আক্রান্ত হলে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো যে ইসরায়েলে একযোগে হামলা চালাবে- সেকথা নিশ্চিত।
লন্ডনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ডগলাস ব্যারির মতে, ইসরাইল ইরানে হামলা করলে যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। হয়তো এসব বিবেচনা থেকেই মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব জেনারেল স্টাফ চেয়ারম্যান মার্টিন ডেম্পসি বলেন, ইরানে ইসরাইলের হামলা সুবিবেচনার কাজ হবে না। এই হামলা বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইজহাক ব্রিক বলেছেন, ভবিষ্যতে যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয় তা হলে প্রতিদিন ইসরাইলে তিন হাজার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানবে। এ ধরনের যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য ইসরাইলের সামরিক বাহিনী প্রস্তুত নয় বলেও ওই জেনারেল মন্তব্য করেন।
জেনারেল ব্রিক বলেন, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্যপট তৈরি হবে সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে তৎপর ইরানপন্থি গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর হামলা। এর পাশাপাশি থাকবে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তৎপর হামাস। এসব গোষ্ঠী ইসরাইল অভিমুখে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাবে। এর আগেও জেনারেল ব্রিক বেশ কয়েকবার সতর্ক করে বলেছেন, বহু ফ্রন্টে একসঙ্গে লড়াই করার মতো অবস্থায় নেই ইসরাইলী বাহিনী। গত মার্চ মাসে জেনারেল ইজহাক ব্রিক সুস্পষ্ট করে বলেছিলেন, নতুন একটি যুদ্ধ আমাদের বহু বছর পিছিয়ে দেবে। আগের যুদ্ধগুলোতে আমরা যে ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, ভবিষ্যতের যুদ্ধে তুলনায় তা কিছুই নয়। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এরপরও কি ইসরাইল ইরানে হামলার সাহস পাবে? তবে এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই।
লেখক : কলামিস্ট ও
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক