বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে নাইজেরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নাইজেরিয়ায় সামরিক শাসন অবসানের পর সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার পরও লাখ লাখ মানুষ ভোট দেয়ার জন্য লম্বা লাইনে অপেক্ষা করেছে বলে বিবিসি জানায়। নিরাপত্তা আশঙ্কা এবং ব্যবস্থাপনার সমস্যাকে এই বিলম্বের জন্য দায়ী করা হয়েছে। জানা গেছে, অপরাধী চক্রগুলো কিছু ভোটদান কেন্দ্রের ওপর হামলা চালিয়ে ভোট দেবার মেশিন নিয়ে পালিয়ে গেছে।

নাইজেরিয়ার এই নির্বাচন আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সববৃহৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে ভোট দেয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৭০ লাখ। দেশটিতে ১৯৮৯ সালে সামরিক শাসনের অবসান ঘটার পর থেকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রাধান্য পেয়ে আসছে মূলত দুটি দল- ক্ষমতাসীন এপিসি এবং পিডিপি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারির উত্তরসূরি হিসেবে তৃতীয় আরেকটি দলের প্রার্থীর দিক থেকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এ প্রার্থী হলেন লেবার পার্টির পিটার ওবি, যাকে সমর্থন করছে বহু তরুণ ভোটার।

এবারের নির্বাচনে মুখের ছবি দিয়ে পরিচয় নির্ধারণ এবং আঙুলের ছাপ নেয়ার জন্য নতুন যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন প্রধান মু. ইয়াকুবু জানিয়েছেন উত্তর পূর্বে বোর্নো রাজ্যের গোওযা এলাকায় একটি পাহাড়ের মাথা থেকে ইসলামি জঙ্গিরা নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জখম হয়েছেন।

নির্বাচনের ঠিক আগে নতুন নক্সার মুদ্রা চালু করার এক প্রচেষ্টার কারণে নগদ অর্থের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে ব্যাংক এবং ক্যাশ মেশিনগুলোয় ব্যাপক মানুষ তাদের অর্থ তুলে নেয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেয়ার জন্য, সেইসঙ্গে ভোট কেনা বন্ধ করার জন্য নতুন নোট বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। নির্বাচনের আগের দিন সংসদের হাউস অব রিপ্রেজেনটিটিভের একজন সদস্য প্রায় পাঁচ লাখ ডলার অর্থসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ বলছে ওই অর্থ কাদের দেয়া হবে তার একটি তালিকাও ওই সংসদ সদস্যের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পদে যিনি নির্বাচিত হবেন তার জন্য মূল চ্যালেঞ্জগুলো হবে নতুন মুদ্রা চালু করা, ধসে পড়া অর্থনীতি সামাল দেয়া, তরুণদের মধ্যে চড়া বেকারত্বর মোকাবিলা এবং নিরাপত্তার ব্যাপক অভাব কঠোর হাতে দমন করা। নিরাপত্তার অভাবে গত বছর ১০ হাজার মানুষ নাইজেরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছে।

এবারের নির্বাচনে নাইজেরিয়ার তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ চোখে পড়েছে। দেশটিতে ভোটদানের যোগ্যতাসম্পন্ন জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ, যাদের বয়স ৩৫-এর নিচে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে- ২০১৯ এ যে মাত্র ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল এবার ভোট পড়বে তার থেকে অনেক বেশি।

ধারণা করা হচ্ছে, ৬১ বছর বয়স্ক মি. ওবি দেশটির রাজনীতিতে দুটি প্রধান দলের যে প্রাধান্য গত প্রায় ২৪ বছর ধরে রয়েছে তা ভাঙতে সক্ষম হবেন। তিনি গত মে মাসে নাইজেরিয়ার লেবার পার্টিতে যোগ দেয়ার পর রাজনীতির পুরোনো ধারায় পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে।

যদিও মি. ওবি আগে পিডিপি দলের সদস্য ছিলেন কিন্তু রাজনীতিতে তিনি তুলনামূলকভাবে নতুন মুখ এবং দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে।

তিনি বিত্তশালী ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণ-পূর্বের আনাম্ব্রা রাজ্যে ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি গর্ভনরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সমর্থকরা তাকে একমাত্র সৎ প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছেন।

অন্যদিকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা দল পিডিপি দল থেকে প্রার্থিতা করছেন ৭৬ বছর বয়স্ক মি. আবুবকর। দেশটির মুসলিম প্রধান উত্তরাঞ্চল থেকে তিনি সবচেয়ে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী। আগেও তিনি পাঁচবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ আছে, যা তিনি অস্বীকার করেন।

দেশটির গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ এই নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন এপিসি দলের ওপর গণভোট হিসাবে দেখছে। কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নিরাপত্তার ক্রমাবনতি নিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এই দলের প্রার্থী হয়েছেন ৭০ বছর বয়স্ক মি. টিনুবু, যিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে লেগোসের গর্ভনর পদে থাকাকালীন সেই শহরকে দেশটির বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছেন। দক্ষিণ পশ্চিমে তাকে রাজনীতির একজন ‘গডফাদার’ হিসেবে দেখা হয়, তবে মি. আবুবকরের মতো তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে, যেসব অভিযোগ তিনিও অস্বীকার করেন। নাইজেরিয়ার ৩৬টি রাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের ২৫ শতাংশ যে প্রার্থী পাবেন এবং যিনি এককভাবে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তিনি বিজয়ী ঘোষিত হবেন। তবে কোন প্রার্থী নির্ধারিত সংখ্যক ভোট না পেলে ২১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটি হবে।

* বিবিসি অবলম্বনে