ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে পিঠে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
২ মার্চ শহরে গাড়ি দিয়ে ধাওয়া করে ১৫ বছর বয়সি এক কিশোরকে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরও ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা পশ্চিম তীরের হুয়ারা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। গত সপ্তাহে হুয়ারাসহ আরও কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায় ইসরাইলি সেটেলাররা।
প্রতিবেদন মতে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের আজাউন শহরের মেয়র আহমেদ এনায়া জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি ইসরাইলি সামরিক গাড়ি শহরে প্রবেশ করে। এ সময় গাড়িটি লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়ে কিশোররা। জবাবে তাদের ওপর সরাসরি গুলি চালায় সেনারা।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নিহত কিশোরের নাম মুহাম্মদ নিদাল সেলিম। দখলদার ইসরাইলি সেনারা তার পিঠে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরও অন্তত দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, সেনারা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর গুলি করেছে যারা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছিল।
পশ্চিম তীরে সহিংসতা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। গত এক বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়েছে। শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই সেই অভিযান ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহতে রয়েছে। গত মাসের শেষের দিকে পশ্চিম তীরের নাবলুসে একটি শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা।
ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও হামলার ঘটনা কমাতে (২৬ ফেব্রুয়ারি) জর্ডানের আকাবা বন্দর এলাকায় এক বিরল বৈঠকে বসে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা। জর্ডানের মধ্যস্ততায় ওই বৈঠকে সহিংসতা হ্রাসে উভয়পক্ষই সম্মত হয় ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে।
সেদিন রাতেই পশ্চিম তীরের হুয়ারা শহরের কাছেই কয়েকটি গ্রামে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় ইসরাইলি সেটেলাররা। সেখানকার বাড়িঘর ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই বৈঠকের পর পশ্চিম তীরে দুই ইসরাইলিকে হত্যা করা হয়। এক ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী গাড়িতে গুলি করে তাদের হত্যা করে। এই ঘটনায় আবারও সহিংসতা শুরু হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারির) রাতে পশ্চিম তীরের নাবলুসের কয়েকটা গ্রামে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় ইসরাইলি সেটেলাররা। সেনা প্রহরায় ফিলিস্তিনি গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালানো হয়। ঘরবাড়ি ও গ্যারেজে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে অন্তত ৩০০টি হামলা চালানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গ্রামবাসিন্দাদের ওপর গুলি ছোঁড়া হয়। ছুরি ও রড দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আহত হয় ৩৯০ জন। এছাড়া কয়েক ডজন বাড়ি ও গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের তাণ্ডবকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকরা ‘অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ইসরাইলের অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, হুয়ারাকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে ফেলা উচিত। পরে এই মন্তব্যের কারণে তাকে ‘তিরস্কার’ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও হত্যাযজ্ঞ থামেনি। (২৭ ফেব্রুয়ারি) বন্দুকধারীরা এক ইসরাইলি-আমেরিকানকে গুলি করে হত্যা করে।
এরপর (১ মার্চ) জেরিকোর কাছে আকাবাত জাবর শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। চলতি বছর ওই শরণার্থী শিবিরে এটা ছিল ইসরাইলি বাহিনীর দ্বিতীয় অভিযান। এসব অভিযানে শিবিরে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছে।
সূত্র : আল জজিরা