যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার পথ
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত বিশ্ব ডেস্ক
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এ জন্য তিনি আলোচনার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপের কথা বলছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার দেশের ভূমিকা রাখার আগ্রহের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ বিষয়ে লুলা দা সিলভার অবস্থান বেশ অকপট। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার মনোভাব কাউকে খুশি করার জন্য নয়। কার্যকর কৌশলে যুদ্ধ বন্ধে তিনি ও তার দেশ ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। যদিও যুদ্ধের শুরু থেকে লুলা দা সিলভার অবস্থানে মোটেও খুশি নয় কিয়েভ।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হয়। এরপর লুলা দা সিলভা কয়েকবার বলেছেন, এই যুদ্ধের জন্য শুধু রাশিয়াকে দায়ী করলে হবে না। এর পেছনে ইউক্রেনেরও দায় রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিপরীতে ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দিয়েছে। এসবের কোনোটিই সমর্থন করেননি লুলা দা সিলভা।
গত শনিবার পর্তুগাল সফর করেছেন লুলা দা সিলভা। দেশটির রাজধানী লিসবনে পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পর লুলা দা সিলভা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার সরকার ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিষয়টি সমর্থন করে না। আমরা সংকট নিরসনে আলোচনার মাধ্যমে নেয়া যে কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে রয়েছি।
এ সময় লুলা দা সিলভা আরও বলেন, আমার লক্ষ্য, যুদ্ধ বন্ধে উভয় পক্ষকে (রাশিয়া ও ইউক্রেন) আলোচনার টেবিলে আনার জন্য একটি কার্যকর কৌশল খুঁজে বের করা। আমি একটি তৃতীয় বিকল্প খুঁজতে চাই, যা শান্তি ফিরিয়ে আনবে। সংবাদ সম্মেলনে পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো বলেন, প্রেসিডেন্ট লুলা বিশ্বাস করেন যে, একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির পথ খোঁজার জন্য আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিকল্প নেই।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যদেশ পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো আরও বলেন, এ বিষয়ে পর্তুগালের অবস্থান ভিন্ন। আমরা মনে করি, শান্তির কৌশল তখনই সম্ভাবনার পথ দেখবে, যখন ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে যথাযথ জবাব দেয়ার অধিকার নিশ্চিত হবে।
গত জানুয়ারিতে নতুন করে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ৭৭ বছর বয়সী বামপন্থী রাজনীতিক লুলা দা সিলভা। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। দায়িত্ব নেয়ার পরের মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আর চলতি মাসে তিনি চীন সফর করেন। বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিংয়ের সঙ্গে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে আসছেন লুলা দা সিলভা। এ যুদ্ধের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার আগ্রাসনকে দায়ী করে। এই নীতি মানতে রাজি নন লুলা দা সিলভা। গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর কিয়েভকে অর্থসহায়তা দেয়া বন্ধ করা উচিত। নইলে এটা যুদ্ধকে প্রলম্বিত করতে পারে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট তোতাপাখির মতো রাশিয়া ও চীনের শেখানো বুলি বলে চলেছেন। এদিকে পাঁচ দিনের সফরে গত শুক্রবার পর্তুগাল পৌঁছানোর পর লিসবনে জনরোষের মুখে পড়েন লুলা দা সিলভা। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার মন্তব্যের জেরে লিসবনে নিজেদের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন ইউক্রেনের নাগরিকরা। এ সময় বিক্ষোভে অংশ নেয়া ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধবিরোধী পতাকা নাড়তে দেখা যায়। যুদ্ধের নৃশংসতার ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ডও ছিল তাদের হাতে।