জাপানের হিরোশিমায় শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭-এর সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়াকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। সম্মেলনে আলোচনায় এসেছে পশ্চিমাদের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কথাও। জি-৭-এর সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি ও জাপান। চীন ইস্যু নিয়ে সম্মেলনে সোচ্চার ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি বেইজিংকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, দেশটি দিন দিন কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে। এ ছাড়া দুটি বিবৃতিতে চীনের সমালোচনা করেছে জি-৭ দেশগুলো। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও তাইওয়ান ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে তারা। তবে দেশগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি ছিল ‘অর্থনৈতিক হয়রানি’ নিয়ে। যদিও কে অর্থনৈতিক হয়রানি করছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এটা স্পষ্ট যে, চীনকে উদ্দেশ্য করে বার্তাটি দেয়া হয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে চীন যেসব দেশের ওপর নাখোশ হয়েছে, সেসব দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। এই বার্তা জি-৭-এর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। চীনের ওপর এই জোটের দেশগুলোর অর্থনীতি বড় আকারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বেইজিংয়ের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। মানবাধিকার সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে দেশগুলোর মতবিরোধও রয়েছে। এখন জি-৭-এর শঙ্কা, তাদের জিম্মি করা হচ্ছে।
এই শঙ্কার কারণ, বিগত কয়েক বছরে চীন যেসব দেশের ওপর নাখোশ হয়েছে, সেসব দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। বলা চলে, জি-৭ তথা পশ্চিমা মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ওপরও। এ ছাড়া বাল্টিক দেশ লিথুয়ানিয়ায় তাইওয়ানের দূতাবাস স্থাপনের অনুমতি দেয়ার পর চটে যায় চীন। দেশটি থেকে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। চীনের এ পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। তাই এটা মোটেও অবাক করার মতো নয়, ‘অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে হতিয়ার করার’ প্রবণতায় যে উত্থান দেখা যাচ্ছে, তার নিন্দা জানাবে জি-৭।
জি-৭ বলছে, তাদের জোট এবং বিশ্বে তাদের মিত্রদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি ও অবস্থানকে দুর্বল করতেই ‘অর্থনৈতিক হয়রানি’ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জি-৭ ‘ঝুঁকি কমানোর’ একটি নীতি অনুসরণ করতে চাইছে। এর আওতায় জোট ও তাদের মিত্রদেশগুলো কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাবে, বাণিজ্যিক উৎসগুলোর বিস্তার ঘটাবে এবং নিজেদের বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সুরক্ষিত করবে। ‘অর্থনৈতিক হয়রানি’ সামলাতে এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে একটি ‘মঞ্চ’ গড়ে তোলার কথাও বলেছেন জি-৭ নেতারা। এই মঞ্চ কীভাবে কাজ করবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই মঞ্চের ছায়াতলে থেকে দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়িয়ে একে অপরকে সহায়তা করবে। পাশাপাশি চীনের চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায়ও একসঙ্গে থাকবে।
বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদারের পরিকল্পনাও করছে জি-৭। পরিকল্পনায় রয়েছে হ্যাকিং ও প্রযুক্তিগত তথ্য চুরি ঠেকাতে ডিজিটাল অবকাঠামো শক্তিশালী করার বিষয়টিও।
সবচেয়ে বড় কাজ যেটি তারা করতে চাইছে, তা হলো সামরিক ও গোয়েন্দা খাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো যেন শত্রুপক্ষের হাতে না পড়ে, তা একসঙ্গে নিশ্চিত করা। এ কাজ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র আগেই করেছে। চীনে চিপ ও এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। এ তালিকায় যোগ দিয়েছে জাপান ও নেদারল্যান্ডসও। এবার জি-৭ এটা পরিষ্কার করতে চাইছে যে, চীনের আপত্তি সত্ত্বেও এ নিষেধাজ্ঞা ধারাবাহিকভাবে আরও জোরদার করা হবে।