আরব লীগে বাশার আল আসাদ
সিরিয়ায় ফিরে আসুক শান্তির সুবাতাস
অধ্যাপক শাব্বির আহমদ
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আরব লীগ আরব দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সংস্থা। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্থাও এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিজেদের নিরাপত্তা ও আর্থিক উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় আরব লীগ। মাত্র ছয়টি আরব রাষ্ট্র (সৌদি আরব, মিশর, লেবানন, ইরাক, সিরিয়া, জর্দান) নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে আরব লীগের সদস্য ২২। ৪৩ কোটি আরব জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন, এক কোটি ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটার আরব ভূখণ্ডের স্বাধীনতাণ্ডসার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ২২ মার্চ ১৯৪৫ সালে এ সংস্থার যাত্রা শুরু।
১৯ মে ২০২৩ সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আরব লীগের ৩২তম শীর্ষ সম্মেলন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের উপস্থিতি এবারের আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। ১২ বছর পর তিনি এ সম্মেলনে অংশ নিলেন এবং বক্তব্য রাখলেন। ২০১১ সালের প্রথম দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নির্মম দমনপীড়ন ও পরবর্তী সময়ে সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগের মতো মারাত্মক অভিযোগ আনা হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় আসাদ ও সিরিয়াকে আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আরব লীগের নেতারা বছরের পর বছর আসাদকে এড়িয়ে চলেছেন। অবশেষে আসাদকে নিজেদের মাঝে ফিরিয়ে নিলেন। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ আরব লীগের জেদ্দা সম্মেলনে যেভাবে প্রবেশ করেছেন, তা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর তার সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। তাকে সাদরে বরণ করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। অথচ এক দশক আগেও আসাদবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করেছে সৌদি আরব। কিন্তু এখন সৌদি যুবরাজ মধ্যপ্রাচ্য পুনর্গঠন করতে চান। এর জন্য সিরিয়াকে তার পাশে দরকার। প্রিন্স সালমান ২০৩০ সালকে টার্গেট করে সৌদি আরবে একটি আমূল পরিবর্তনের রূপরেখা তৈরি করেছেন। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা একটি নিয়ামক। যে কারণে সৌদি সরকার ইরানের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে। মূলত আরব বিশ্বের ঐক্যমঞ্চে বাশার আল আসাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের হস্তক্ষেপে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বাস করে, আসাদ সরকার আসলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বাস্তবতা এবং সিরিয়া এমন একটা দেশ, যেখানে তাদের প্রভাব থাকা দরকার। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মতে, আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আসাদের উপস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। সম্মেলনে আরও একটি আকর্ষণীয় দিক ছিল, রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার একদল মুসলিম প্রতিনিধি দল নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলোনস্কির অংশগ্রহণ ও বক্তব্য প্রদান। আরব লীগের অতীতের সম্মেলনে ইরানের বিরুদ্ধে নানান রকম অভিযোগ উত্থাপন করা হতো; এবারের আরব লীগের বৈঠকে ইরানবিরোধী বক্তব্য দেয়া থেকে সবাই বিরত ছিল; বরং সব দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। মোটকথা, এবারের আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনে এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় জোর দেয়া হয়েছে। উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এবারের আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলন ছিল অতীতের যে কোনো সম্মেলন থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
আরব লীগের জেদ্দা সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বক্তব্যও ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আসাদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ‘আরববাদ সিরিয়ার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।’ আসাদ তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন, ‘একটি নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, যেখানে বিদেশি হস্তক্ষেপ আর গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তিনি কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ মিত্র তেহরানের বিষয়ে কিছু না বললেও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এরদোয়ান সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন জোগাচ্ছেন এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেনা পাঠিয়ে অন্যায়ভাবে দখলদারিত্ব কায়েম করেছেন।’ আসাদ তার ভাষায় ‘সম্প্রসারণবাদী অটোমান মনোভাবের বিপদ’-এর কথা উল্লেখ করে আরবদের সতর্ক করেন।
সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আরব লীগে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সিরিয়ার সংকটগুলো শেষ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলকে সংঘাতের ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেয়া অনুমোদন করবে না সৌদি আরব। বিবাদের বেদনাদায়ক বছরগুলোর পৃষ্ঠা উল্টানো হয়ে গেছে। আমাদের অঞ্চলের দেশগুলো বছরের পর বছর দ্বন্দ্ব সংঘাতের শিকার ছিল। যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়।’ যুবরাজ এ সময় ফিলিস্তিন ইস্যুকে আরব ও মুসলিম বিশ্বের প্রধান এবং কেন্দ্রীয় সমস্যা উল্লেখ করে ফিলিস্তিন ইস্যু সৌদি আরবের পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচ্য বলে মন্তব্য করেন। জেদ্দা সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের উপস্থিতি, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান কর্তৃক উষ্ণ সংবর্ধনা, আসাদের আরব ঐক্যের ডাকের পাশাপাশি উস্কানিমূলক বক্তব্য বিশ্বব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, তুরস্কের নামোল্লেখ করে দেয়া বক্তব্য। বাশার আল আসাদের আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সিরিয়া ও আসাদ সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাশার আল আসাদ সিরিয়াকে একটা জল্লাদখানায় পরিণত করেছে। যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, সিরিয়ার সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আসাদের যে কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কঠোর বিরোধিতা করা হবে। কাতারের মতো অনেক আরব লীগের সদস্যও শীর্ষ সম্মেলনে আসাদের অংশগ্রহণকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণে দেখছে। কাতার এখনও আসাদ বিরোধীদের অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আরব লীগে বাশার আল আসাদের ফিরে আসার রাজনৈতিক হিসেব যাই হোক না কেন, অনেক বিক্ষুব্ধ সিরিয়ানের জন্য তাকে মনে নেয়া কঠিন হবে। বিশেষ করে, তুরস্কে শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত ৩৬ লাখ, লেবাননের শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত ১০ লাখ সিরিয়ান। জেদ্দা সম্মেলনের পর সিরিয়ার নৃশংস গৃহযুদ্ধের জন্য সামান্য বা কোনো ধরনের জবাবদিহির আশা তারা করলেও এখন সেটা দুরাশা বলে মনে হচ্ছে।
জেদ্দা সম্মেলন থেকে যে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, তা হলো- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে সৌদি আরবের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ। সৌদি আরব একদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলোনস্কিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খুশি করেছে। তবে জেদ্দা সম্মেলন নিয়ে ওয়াশিংটন যে বেজায় নাখোশ, সেটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। মোহাম্মদ বিন সালমানের বক্তব্যের একাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির বিপরীতে একটি সুস্পষ্ট বার্তা।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আরব লীগের জেদ্দা সম্মেলন থেকে সিরিয়ায় দীর্ঘ সংঘাত শেষে শান্তির কথা বলা হলেও আমেরিকা ও তুরস্কের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি। সিরিয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ ভূমি নিয়ন্ত্রণ করছে তুরস্ক এবং আমেরিকা ও তাদের সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীরা। আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে ২০১১ সালের শেষের দিকে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যে গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা ছিল মূলত সংখ্যালঘু শিয়া আলাভী প্রভাবিত আসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের দীর্ঘ শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ। উল্লেখ্য, সিরিয়ার সর্বশেষ উপনিবেশ ফ্রান্স সিরিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সংখ্যালঘু শিয়া মতাবলম্বী আলাভী সম্প্রদায়ের আসাদ পরিবারের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে যায়। সুন্নিরা সিরিয়ার বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হয়েও যুগ যুগ ধরে আলাভীদের দ্বারা নিষ্পেষিত হয়ে আসছে। শুরুতেই সিরিয়ার গণআন্দোলনকে সমর্থন দেয় তুরস্ক, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও কাতার। গণআন্দোলনের কিছু দিনের মাথায় আসাদের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু না, তা আর হয়ে ওঠেনি। হঠাৎ যুদ্ধের মোড় পাল্টে গেল। এমন সময়ে ‘আইএস’ উত্থান বিপ্লবের মোড় পুরোপুরিভাবে ঘুরিয়ে দেয়। পশ্চিমাদের তখন আসাদকে নয়, ‘আইএস’কে ধ্বংস করাই বাহ্যিক লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। আইএস দমনে আমেরিকা সিরিয়ায় সৈন্য পাঠাল এবং ঘাঁটি স্থাপন করল। তুর্কি সীমান্তবর্তী এলাকায় স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের লোভ দেখিয়ে কুর্দি মিলিশিয়াদের আইএসের বিপক্ষে দাঁড় করে দিয়ে দামেস্কে আসাদের অবস্থানকে সুকৌশলে মজবুত করে দেয়া হয়। এ সময় সৌদি-আমিরাত সিরিয়া থেকে রহস্যজনকভাবে সটকে পড়ে। সুন্নি রাষ্ট্রগুলোর দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ইরান পূর্ণ শক্তি নিয়ে আসাদ সরকারকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আসাদের সমর্থনে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছিল বিপ্লবের কফিনে সর্বশেষ পেরেক টোকার মতো। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একাই সুন্নিদের জন্য ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। রাশিয়া ও ইরানের প্রত্যক্ষ মদদে আসাদ বাহিনী ও শিয়া মিলিশিয়ারা সুন্নি অধ্যুষিত এলাকায় পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করলে তুরস্ক অভিমুখে সিরীয় শরণার্থীর ঢল নামে। সর্বশেষ হিসাব মতে, তুরস্কে আশ্রিত সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। শরণার্থীদের সিরিয়ায় ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো উদ্যোগ না দেখে এরদোয়ানের তুরস্ক ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর তিনটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে কুর্দিদের নিজ সীমান্ত থেকে বিতাড়ন, সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের অভ্যন্তরে ৩২ কিলোমিটার, প্রস্থে ৪৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি ‘বাপার জোন’ গঠন করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এরদোয়ান শঙ্কায় ছিলেন, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় নিজ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার কুর্দি বাসিন্দাদের মাঝে স্বাধীনতার স্পৃহা পুনরায় জাগ্রত করতে পারে। অন্যদিকে সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা ও সিরিয়া-জর্দান সীমান্তে রয়েছে আমেরিকার পৃথক সেনা ঘাঁটি। সুতরাং তুরস্ক ও আমেরিকাকে বাদ দিয়ে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে অত সহজে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়; বিশেষ করে, তুরস্ককে বাদ দিয়ে। তুরস্কের কৌশলগত আঞ্চলিক স্বার্থ সিরীয় সংকটের গভীরে প্রোথিত। আসাদ সরকার সংকটের টেকসই রাজনৈতিক সমাধান না খুঁজে ভিন্ন পথে অগ্রসর হলে যে কোনো সময় আবার পূর্ণমাত্রায় গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে।
আরব লীগে সিরিয়ার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া এবং আসাদের রিয়াদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকে অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। তাদের মতে, আরব লীগ আন্তরিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে মৃত্যু উপত্যকা সিরিয়ায় টেকসই রাজনৈতিক সমাধান আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আসাদ সরকারের পতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেও আমেরিকা কেন ইউটার্ন দিল, তিন মাসে শেষ হতে যাওয়া একটি ইস্যুকে কেন ১২ বছর পেছনে ঠেলে দেয়া হলো, কেন তিন ভাগের এক ভাগ সিরিয়াবাসীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হলো, ছয় লাখ সিরিয়াবাসীকে কেন বলি হতে হলো- এসব প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেলেও বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশা, শিগগির গৃহযুদ্ধ শেষে কোনো একদিন আবারও আগের মতোই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর হয়ে উঠবে ৬ হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার দেশ মুলকে শাম তথা আজকের সিরিয়া।
লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক
রাজনীতি বিশ্লেষক