ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংঘাতপূর্ণ কসোভোয় তুর্কি সেনা প্রেরণ

সার্বিয়ার সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা
সংঘাতপূর্ণ কসোভোয় তুর্কি সেনা প্রেরণ

আবারও উত্তপ্ত বলকান অঞ্চলের দেশ কসোভো। সার্বিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে দেশটিতে অবস্থানরত ন্যাটো বাহিনী রয়েছে সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায়। ন্যাটো জোটের আহ্বানে দেশটিতে গত ৩ মে ২০২৩ সেনা কমান্ডো পাঠিয়েছে তুরস্ক। কসোভোর ৯০ শতাংশ অধিবাসী আলবেনিয়ান হলেও সার্বিয়ার সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী সার্ব বংশোদ্ভূত। এরা কসোভোর কোনো আইন ও নিয়ন্ত্রণ মানতে চায় না। এরা সার্বিয়ার সঙ্গে একীভূত হতে সদা সচেষ্ট। ২০১৩ সাল থেকে ওই অঞ্চলে নিজেদের জন্য আলাদা পৌরসভা গঠনের দাবি করে আসছে সার্বীয়রা। পদ্ধতিগত প্রশ্ন তুলে ওই অঞ্চলে ২০২৩-এর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন জাতিগত সার্বীয়রা বয়কট করলেও যথানিয়মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই নির্বাচনে চারটি পৌরসভাতেই আলবেনিয়ান মেয়র নির্বাচিত হন। গত ৩১ মে ২০২৩ নির্বাচিত মেয়ররা পৌরসভায় ঢুকতে গেলে সার্বরা বাধা দেয়। সার্বদের বক্তব্য, এই নির্বাচন তারা মানছেন না। এ নিয়েই তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। উত্তর কসোভোর বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখায় সার্বীয়রা। পৌরসভার ভবনগুলোর সামনে সেনা মোতায়েন হলেও সার্বীয়রা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারী সার্বীয়রা কসোভোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত ন্যাটোর বাহিনী সদস্য ‘কেফোর’ সঙ্গেও সংঘাতে লিপ্ত হয়। তাতে বেশ কিছু কেফোরের জওয়ান গুরুতর আহত হন। বিক্ষোভকারীরা বরাবরই প্রতিবেশী সার্বিয়া থেকে মদদ পেয়ে থাকে। এরই মধ্যে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিক কসোভোতে জাতিগত সার্বরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ এনে তাদের রক্ষায় তার সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ যুদ্ধ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যে কোনো সময় সার্বিয়ার সেনারা কসোভোয় আগ্রাসন চালাতে পারে, এ রকম আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে বলকান অঞ্চলে।

২ জুন ২০২৩ মলডোভায় অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান পলিটিক্যাল কমিউনিটির সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রো কসোভোর চলমান সমস্যার দ্রুত সমাধানকল্পে প্রয়োজনে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করলে কসোভোর প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, নতুন করে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। যে মেয়ররা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের কাজ করতে দিতে হবে। তার বক্তব্য, এত বড় বড় পৌর ভবনগুলো তৈরি হয়েছে কাজের জন্য। সেই ভবনগুলোকে ঘিরে রাখার কোনো অর্থ নেই। ২০২২-এর ডিসেম্বরে কসোভোর জাতিগত সার্বীয়দের গাড়ির জন্য লাইসেন্স প্লেট ইস্যু এবং সার্বিয়া থেকে আসা ব্যক্তিদের অবাধে প্রবেশ বন্ধের উদ্যোগ নিলে প্রতিবাদে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় কসোভোর উত্তরাংশ মিত্রোভিকাতে বসবাসরত হাজার জাতিগত সার্বিয়ানরা। কসোভো সরকার এসব সার্ব বিক্ষোভকারীদের দমন করতে গেলে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে কসোভো সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিল সার্বিয়া। ন্যাটো জোটের, বিশেষ করে এরদোয়ানের হুমকির কারণে সার্বিয়া বেশিদূর অগ্রসর হয়নি।

সার্বিয়া-কসোভোর আজকের সংকট সম্পর্কে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে পেছনের ইতিহাসে। মার্শাল টিটুর দেশ ‘যুগোস্লাভিয়া’ ইউরোপ তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কালের পরিক্রমায় আজ যুগোস্লাভিয়া শুধু ইতিহাস। যুগোসøøাভিয়া ছিল ছয়টি ভিন্ন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফেডারেশন। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া ও মন্টিনিগ্রো মিলে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দানকারী কসোভো ছিল ঐতিহ্যগতভাবে আলবেনিয়ার একটি অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটিকে সার্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কসোভোকে সার্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের সময় সার্বিয়ানদের বিরুদ্ধে বিখ্যাত কসোভো যুদ্ধে সার্বরা চরমভাবে পরাজিত হয়েছিল। ফলে ১৪৫৫ সালে এ অঞ্চলটি ওসমানীয় সাম্র্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। ওসমানীয় দখলদারিত্বের আগে এখানকার আলবেনীয় জনগোষ্ঠীর ওপর ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা এতটাই করারোপ করেছিল যে, মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। ওসমানীয়দের বিজয়ের পর আলবেনীয় জনগোষ্ঠী একসঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ৫০০ বছর ওসমানীয় শাসনের অধীনে ছিল। এ সময় এ অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার ঘটে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কসোভো ও মেসিডোনিয়াতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ক্রোয়েশিয় স্লোভেনিয়ায়, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী। যুগোসøøাভিয়া ফেডারেশনের রাজধানী বেলগ্রেড বর্তমানে সার্বিয়ার রাজধানী। ইউরোপের অন্যতম প্রধান দুটি নদী দানিয়ুব ও সাভার নদীর সঙ্গমস্থল বেলগ্রেড ছিল সে সময় পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে প্রধান সেতুবন্ধনকারী নগরী। এ কারণে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্্রাজ্যসহ ইউরোপের সব সাম্রাজ্যের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল বেলগ্রেড।

মার্শাল টিটুর আগে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন ছিল বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি রাষ্ট্র। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সে সময় কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করতে পারতেন। তবে রাষ্ট্র ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত। সে সময় যুগোস্লাভিয়ার মানুষ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানিটি, অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটি ও ইসলাম- এ তিন প্রধান ধর্মে বিভক্ত ছিল। সেøøাভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ছিল ক্যাথলিক খ্রিষ্টানিটি। অন্যদিকে সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া ও মন্টিনিগ্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ছিল অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটি। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভোর বেশিরভাগ মানুষের ধর্ম ছিল ইসলাম। সে সময় মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

নব্বই দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনও ভেঙে যায় এবং উপরিউক্ত ৬টি রাষ্ট্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সাবেক যুগোস্লাভিয়া ভেঙে জন্ম নেয়া সব ক’টি রাষ্ট্রকে মেনে নিলেও ৫১ হাজার আয়তনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়া-হার্জেগোভিনাকে মেনে নিতে পারেনি মানবাধিকার ও সভ্যতার ধ্বজাধারী ইউরোপিয়ানরা। ওই সময় ইউরোপের অনেক বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রকাশ্য বলতে শোনা গিয়েছিল, ইউরোপের বুকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হোক, তারা সেটি চান না। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের প্রত্যক্ষ মদদে বসনিয়ার কসাইখ্যাত সার্বনেতা রাদোভান কারাজদিচ ও সার্ব অধিনায়ক রাদকো ম্লাদিচের নেতৃত্বে ১৯৯১ থেকে শুরু হওয়া সাড়ে তিন বছরের গৃহযুদ্ধে সার্ব জাতীয়তাবাদীদের হাতে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার দুই লাখ মুসলমান জঘন্য হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। সেব্রেনিসায় ৮ হাজার মুসলমান হত্যাযজ্ঞ ছিল খুবই ভয়ংকর। মুসলমানদের ওপর এ ভয়ানক হত্যাযজ্ঞে গোটা বিশ্ব হতভম্ব হয়েছিল।

১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে যুক্তরাষ্ট্র একপ্রকার বাধ্য হয়েই ‘ডেটন চুক্তি’র মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে তিন ব্যক্তির (বসনিয়াক, সার্ব ও ক্রোয়েট) প্রেসিডেন্সি, আন্তর্জাতিক দূত এবং একটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পুনর্গঠন করে। বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডেটন শান্তি’ চুক্তির মাধ্যমে বসনিয়ায় রক্তগঙ্গা বন্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে দেশটির হাত-পা একেবারে বেঁধে ফেলা হয়েছে। জটিল প্রশাসনিক কাঠামো আর তীব্র জাতিগত বিভেদের দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা থাকলেও বসনিয়া ও স্রেব্রেনিৎসায় মুসলিম গণহত্যার দায়ে বলকানের কসাই হিসেবে কুখ্যাত উগ্র সার্ব জাতীয়তাবাদী নেতা স্লোবোদান মিলোসেভিচ, রাদোভান কারাদজিচ এবং রাতকো ম্লাদিচকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্লোবোদান মিলোসেভিচ জেলেই মারা যান। অপর দু’জন যাবজ্জীবন কারাগারে বন্দি। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাপক অত্যাচার-নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও মূলত প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক প্রেসিডেন্ট আলিজা ইজেৎভেগোভিচের নেতৃত্বে বসনিয়ার মুসলমানরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এখনও বসনিয়া-হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্রে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী।

বসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়ার মতো মুসলিম প্রধান কসোভো স্বাধীনতার ইচ্ছে প্রকাশ করলে সার্বিয়া ‘জবাব’ দেয় কসোভোর আলবেনিয়ান জনগোষ্ঠীর ওপর নিষ্ঠুর হত্যা-দমন-পীড়ন চালিয়ে। এ সময়ও সার্বিয়ানদের পাশে দাঁড়ায় রাশিয়া। ১৯৯৯ সালে ন্যাটোর সামরিক হস্তক্ষেপে এ হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটলেও এতে তের হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। কসোভোতে এখনও ৩৭৭০ ন্যাটো সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। ২০০৮ সালে সার্বিয়ার কাছ থেকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে কসোভো। এভাবে বিশ্ব মানচিত্র থেকে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যায় যুগোস্লাভিয়া নামক দেশটি। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৯৯টি দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশের মধ্যে ২২টি দেশ রয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এখনও জাতিসংঘে কসোভোর সদস্য হওয়া আটকে রেখেছে। আর সার্বিয়া কখনোই কসোভোকে স্বীকৃতি দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার ভুসিচ। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুসিচও সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোশেভিচের মতো ‘সার্ব বিশ্বের’ স্বপ্ন দেখেন। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ভুসিচ কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানিকে ‘ছোট জেলেনস্কি’ আখ্যা দিয়েছেন। অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকও পুতিন ইউক্রেনে সফল হলে তার পরবর্তী শ্যেন দৃষ্টি বলকান অঞ্চলের কসোভোর দিকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কসোভোর পাশে শুধু ন্যাটো নয়, উদীয়মান পরাশক্তি তুরস্কও ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সিরিয়া, লিবিয়া, নাগর্নো কারাবখ, এমনকি ইউক্রেনেও রাশিয়ার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেও পুতিন যেখানে এরদোয়ানকে ক্ষ্যাপাতে চাননি, সেখানে কসোভোর মতো তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের বিরুদ্ধে পুতিন সার্বিয়াকে লেলিয়ে দেবেন কি-না, প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এরই মধ্যে বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের ভরসা হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কসোভো তুরস্ক থেকে প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। তুরস্কের কসোভোতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।

কসোভো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও দেশটির সমাজ অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ। তাই রাস্তায় বেরুলে হিজাব ও শালীন পোশাক পরিহিতা কিছু নারী যেমন দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় অসংখ্য নারীকে; যাদের পরনে ইউরোপের পোশাক। যেহেতু মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই কসোভোতে আছে অনেক চমৎকার মসজিদ, যা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। অটোমানদের অধীনে থাকা অবস্থায় তুর্কি জনগোষ্ঠীর বিশাল সংখ্যক লোক বলকান অঞ্চলে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। ওই সময় অনেক খ্রিষ্টান স্লাব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। উপদ্বীপের অধিবাসীদের মাঝে তুরস্ককরণ নীতির ফলে বলকান অঞ্চলে জাতিগত, সাংস্কৃতিকগত বৈপরীত্য থাকা রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করে। নব্য তুর্কিরা ভিন্ন সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ধর্মীয় অবকাঠামো গড়ে তোলে। এভাবে বলকানজুড়ে গড়ে ওঠে বিশাল তুর্কি জনগোষ্ঠী। এসব তুর্কি জনগোষ্ঠীর প্রতি তুরস্ক বরাবরই সহানুভূতিশীল। এরদোয়ান সরকার ও তুরস্কের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বলকানের অন্যান্য দেশের মতো কসোভোর মুসলমানদের কল্যাণেও বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত