ইমরান খানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত ৯ মে পাকিস্তানে নজিরবিহীন তাণ্ডব এবং সেনা স্থাপনার মতো স্পর্শকাতর জায়গায় হামলার খেসারত দিচ্ছেন তেহরিকের কর্মী-সমর্থকরা। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ২৬ মে বলেছেন, ৯ মের ঘটনায় ৪৯৯টি এফআইআর হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চারটি কার্যকর করে সন্দেহভাজন ৩৩ জনকে এরই মধ্যে সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বহু নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে এবং হচ্ছে। এদিকে সেনাবাহিনীর চাপে পিটিআই থেকে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের পদত্যাগ এখনও থেমে নেই। এসব নেতা পদত্যাগের আগে-পরে সামরিক বাহিনীর প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলেছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের পুরোনো সেই মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা দেখতে পারে পিটিআই। পার্টির অবশিষ্ট নেতৃত্ব হয়তো সামরিক শক্তির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি হয়ে যেতে পারে। বিগত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, সেনা নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স ‘আইএসআই’ এখন পুরো পাকিস্তানের রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) সরকার মূলত সেনাবাহিনীর পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে দেশটির ক্ষমতা ৩৪ বছরই কুক্ষিগত করে রাখে সেনাবাহিনী। যখন তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল না, তখনও তাদের প্রাধান্য ছিল সবকিছুতে। কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের সঙ্গে আপস না করে টিকে থাকতে পারেনি। তাদের কারণে এ পর্যন্ত দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ২০১৮ সালে তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিজয়ের পেছনে সেনাবাহিনী পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নেড়েছিল বলে ধারণা করা হয়। আবার বনিবনা না হওয়ায় ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইমরান খানের অপসারণের পেছনেও কলকাঠি নেড়েছে সেনাবাহিনী। যখনই পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক সরকার সেনাবাহিনীর বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে, তখন তাদের বিদায় নিতে হয়েছে বন্দুকের নলের মুখে। তবে পাকিস্তানের দুর্বল গণতন্ত্রের কথা বাদ দিলে কোনো রাজনৈতিক দলেরই এমন কোনো অর্জন নেই, যা পিটিআইকে ম্লান বা অগ্রাহ্য করার মতো অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। ইমরান পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে চেয়েছেন। সত্তরের দশকে জুলফিকার আলী ভুট্টো একই কাজ করেছিলেন, ইসলামাবাদে আমেরিকার এক বার্তা জনতার সমাবেশে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। ক্ষমতায় এসে ইমরান খানের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন, মার্কিননীতিতে পরিবর্তন, রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব সুদূরপ্রসারীর কথা ওপেন সিক্রেট। ১৯৫০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ মিত্র। সেনা নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তায় একসময়ে দু’হাতে টাকা দিয়েছে আমেরিকা। পাকিস্তান সেনারা প্রতিদানও দিয়েছে প্রচুর। ইমরান আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানে মার্কিন সেনা ঘাঁটি করতে দিতে রাজি হননি, আফগানিস্তানে ন্যাটোর সাপ্লাই লাইন ব্লক করে দিয়েছিলেন, তালেবানরা ক্ষমতা গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে ইমরান বলেছিলেন, তালেবানরা দাসত্বের শিকল ভেঙে দিয়েছে। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর জন্য ইমরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তখনকার পাকিস্তানি সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার মধ্যকার যোগসাজশের অভিযোগ তোলেন। এ সময় ইমরান কোনো প্রকার রাখঢাক না রেখে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আমি পুরোপুরি অসহায় ছিলাম। আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, তবে আসল ক্ষমতা ছিল কামার জাভেদ বাজওয়ার হাতে।
২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর লাহোরের লিবার্টি চক থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের অভিমুখে লংমার্চ চলাকালীন গুলি করে হত্যা প্রচেষ্টার জন্য সেনা নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স ‘আইএসআই’কে দায়ী করলে প্রকাশ্য রূপ নেয় ইমরান-সেনা বিরোধ। চলতি বছরের গত ৬ মে লাহোরে একটি সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় কিছুটা দুঃসাহসী কাজ করে বসেন ইমরান। ভাষণে তিনি ‘আইএসআই’র কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসিরের বিরুদ্ধে তাকে দু’বার হত্যার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন বক্তৃতায় জেনারেলকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ তুলেছিলেন; কিন্তু এবারই প্রথম প্রকাশ্যে নাম উল্লেখ করেন তিনি। এর পরই তার বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতি দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। বিবৃতিতে মিথ্যা এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অধিকারও সংরক্ষণ করে বলে উল্লেখ করা হয়। সেনাবাহিনীর বিবৃতির পর ইমরান খান গত ৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তার তিন দিন পর গত ৯ মে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে গেলে রেঞ্জার্স বাহিনীর হাতে কমান্ডো স্টাইলে ইমরান খান গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর সরাসরি যোগসাজশের অভিযোগে খুঁজে পায় সমর্থকরা। সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় পিটিআই সমর্থকরা। জনতার তীব্র রোষের শিকার হয় পাকিস্তান আর্মি। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেনা সদরদপ্তর, লাহোরে সেনাবাহিনীর কর্পস কমান্ডারের বাসভবনসহ দেশব্যাপী ক্যান্টনমেন্টগুলো এবং রেডিও পাকিস্তান ভবনের মতো স্পর্শকাতর স্থানেও নজিরবিহীন হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এদিকে গ্রেপ্তারের দু’দিনের মাথায় ১১ মে ইমরান খানের গ্রেপ্তার এবং আট দিনের রিমান্ডকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কিছুক্ষণ পর ‘বিগত ৭৫ বছরে শত্রুরা যা করতে পারেনি, আন্দোলন-বিক্ষোভের নামে একটি দলের বিক্ষোভকারীরা সেটিই করেছে’ জানিয়ে কড়া বিবৃতি প্রদান করে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। একই সঙ্গে ৯ মে তারিখকে পাকিস্তানের ইতিহাসে ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা। ১১ মে আইএসপিআরর ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের সাহায্যকারী, পরিকল্পনাকারী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছ। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত ১৭ মে সহিংসতায় জড়িতদের সেনা আইনের অধীনে বিচারে সামরিক সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেয় পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি)।
এর পরপরই শুরু হয় পিটিআই নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলটির অনেক নেতা বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেসব চেষ্টা ঠেকানো হয়েছে। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিরিন মাজারি পিটিআই থেকে পদত্যাগ করেন। তার স্বাস্থ্যগত কারণ এবং নিজের মা ও সন্তানদের দেখাশোনার জন্য রাজনীতিতে থাকছেন না উল্লেখ করে বিবৃতি দেন। ইমরান খানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর তারিনও পিটিআই থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর বলেন, তারা রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে পাকিস্তানকে বের করে আনতে চান। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন চান। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের একজন যোগ্য নেতা প্রয়োজন। তাই সমমনা রাজনীতিকরা একটি একক প্ল্যাটফর্মের অধীনে একত্রিত হতে চান। কারও বুঝতে বাকি নেই, এসবই সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ পরিকল্পনার ছক বাস্তবায়ন। ইমরান একে ‘জোরপূর্বক তালাক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আইএসআই গত ৭ জুন পাকিস্তানের সব মিডিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে ইমরান খানের সংবাদ পরিবেশ সীমিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ভারতীয় সাংবাদিক সুশান্ত সারিনের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রায় সব টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে সারিন বলেছেন, ইমরান খান তার স্বপ্ন। কারণ তিনি পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন। এসব কারণে অনেকেই ইমরানকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছেন। ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, ভারতীয় মিডিয়া ইমরান খানের প্রশংসা করছে। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের আনুকূল্য পাচ্ছেন। এভাবে দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার ‘ভারত কার্ড’ খেলা শুরু হয়েছে। এর আগে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, বেনজির ভুট্টোকে জেনারেল জিয়াউল হক ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন এবং জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সমর্থকরা নওয়াজ শরিফকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন। নওয়াজের বিরুদ্ধেও ‘ভারত কার্ড’ ভয়ংকরভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তাকে ‘মোদি কা ইয়ার’ বলেছিলেন ইমরান খান। এখন একই কার্ড খেলছে শাহবাজ শরিফরা।
জিও নিউজে প্রকাশিত পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মীর লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সম্প্রতি আমার দেখা হয়েছে। আলভি সব সময় ইমরানকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে এবার তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার, তিনি সতর্ক। ইমরান খানের অন্য সমর্থকদের মতোই আলভিকে বিষণ্ন দেখা গেছে। তিনি নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নন এবং মার্শাল ল’ জারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। তাকে ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ৯ মের সহিংসতার জন্য প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি না দেয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা নয়। আমি তখন হেসে বললাম, জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দিলে তাকে সামরিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক ভাষা এবং মুখের অভিব্যক্তি দেখে যতটুকু বুঝলাম, তিনি ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার এ সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় ইমরান তাকে দু’বার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। আমি নির্বাচন সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, হ্যাঁ, আমরা এ বছরের অক্টোবরে নির্বাচন করতে যাচ্ছি।
হামিদ মীর বলেন, কোনো সন্দেহ নেই, ইমরান খান গভীর সংকটে পড়েছেন। তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ইমরান খানের দল ভেঙে গেছে। বিচার বিভাগের একটি অংশ তার পক্ষে অবস্থান নিলেও এখন অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তবে ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রথম নেতা, যিনি এমন গভীর সমস্যায় পড়েছেন। শাহবাজ শরিফ ইমরান খানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা বা গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু তাকে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জেনারেল জিয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু তার দলকে নির্মূল করা হয়নি। তার মেয়ে বেনজির ভুট্টো দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তার নাতি বিলাওয়াল এখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নওয়াজকে জেনারেল জিয়া রাজনীতিতে তুলে এনেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফ তাকে উৎখাত করেন। কিন্তু তার ভাই এখন পাকিস্তান শাসন করছেন। পছন্দ করুন বা না করুন, ইমরান খান এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তার রাজনৈতিক ভুলের জন্য এখন মাশুল দিচ্ছেন। কারণ, তিনি কখনোই দলকে গণতান্ত্রিক নীতিতে সংগঠিত করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়, রাজার মতো দেশ চালাচ্ছিলেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীই তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। উল্টো তিনি সেনাবাহিনীর বদলি ও পদায়নে হস্তক্ষেপ শুরু করে ‘আসল প্রভুদের’ বিরক্ত করেন। তবে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, আইনের শাসনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান। ইমরান খানের মতো সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়া যে ঠিক নয়, তা রাজনীতিবিদরা বুঝতে শুরু করেছে। এ ধারণা রাজনীতিবিদদের মাঝে যত বদ্ধমূল হবে, সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দ্রুত দূরে থাকতে হবে। নওয়াজ শরিফের মতোই রাজনীতিতে ব্রাত্যজন হতে পারেন ইমরান খান। আমি মনে করি, নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরতে পারলে ইমরান খানও ফিরতে পারবেন, হয়তো কয়েক বছর পর। তিনি এখন খাদের কিনারে; কিন্তু একেবারে ফুরিয়ে যাননি।
লেখক : কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক