স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কি আর সম্ভব?
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত বিশ্ব ডেস্ক
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবার আগে দরকার ভূখণ্ড। কিন্তু পশ্চিম তীর যেটা কিনা ফিলিস্তিনের অংশ হবে, সেখানে এখন কয়েক লাখ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী বসবাস করছে। এ ছাড়া জেরুজালেমকেও ইসরাইল তার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমেরিকা সেটাকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। ফলে ভৌগলিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন এখন আর বাস্তবসম্মত নয় বলেই অনেকে মনে করেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে অনেকটাই অসম্ভব করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক শাহিন বেরেনজি মনে করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। তিনি বলেন, ‘এটা বাস্তবায়ন করা ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় খুবই কঠিন। কারণ, পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে ইহুদি বসতি। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এটা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার। গেল তিন দশকে ইহুদি বসতি স্থাপনকারী বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ। এ ছাড়া খোদ ইসরাইলের আইন অনুযায়ীই অবৈধ এ রকম ইহুদি বসতিও আছে।’
তিনি মনে করেন, এ রকম বসতি সম্প্রসারণ এবং ইসরাইলের রাজনীতিতে এর প্রবল সমর্থনের কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কঠিন হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতিও এখন আর ইসরাইলের আগ্রহ নেই। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরাও হামাস এবং ফাতাহ দুই দলে বিভক্ত। তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কথা বলা বা শান্তি প্রক্রিয়া এগোনোর মতো একক এবং বিশ্বস্ত নেতা নেই। ইসরাইলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেইর লিটভ্যাক অবশ্য বলছেন, ‘সুযোগ এখনও আছে। কিন্তু ইসরাইল কি দুই রাষ্ট্র সমাধান আর চায়? সেটা চায় না। আমি এখানে ইসরাইলের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করি। তারা যেটাকে সমাধান মনে করে, সেটা হচ্ছে, পরিস্থিতি যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক। অর্থাৎ তারা পশ্চিম তীরকে নিয়ন্ত্রণ করবে, যেখানে আবার একটা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও থাকবে। তবে দুর্বল এবং ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চিরদিন ইসরাইল এভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে, এটা ভুল ধারণা। এটা থেকে বেরিয়ে এলে সমাধান সম্ভব।’
মি. লিটভ্যাক মানছেন, ইহুদি বসতি একটা বড় সমস্যা। কিন্তু তিনি এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ইসরাইলের আগে গাজা থেকে তাদের সব বসতি সরিয়ে নিয়েছিল এবং নিজেরাও গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং কঠিন হলেও পশ্চিম তীরে সেটা করা যাবে। এমনকি জেরুজালেম নিয়েও দু’পক্ষ ছাড় দিলে ঐকমত্যে আসা সম্ভব। কিন্তু ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে এখন যে নতুন যুদ্ধাবস্থা, সেখানে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা অচলাবস্থার পরিবর্তন কে করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। মার্কিন গবেষক শাহিন বেরেনজি মনে করেন, এখানে আমেরিকাকেই আবার এগিয়ে আসতে হবে। তার মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তির উদ্যোগ নিলে সেটা সফল হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকা যখন মধ্যপ্রাচ্যে কিছু করতে চেয়েছে, তখন সেটার বাস্তবায়নও হয়েছে। মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি, জর্ডানের সঙ্গে চুক্তি এমনকি সাম্প্রতিককালে আব্রাহাম অ্যাকর্ড-এর সবগুলোর পেছনে আমেরিকার ভূমিকা আছে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আমেরিকার আগ্রহ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে মি. শাহিন বলছেন, ‘দুই যুগ আগে নাইন-ইলেভেনের পর আমেরিকার চোখ অসলো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন থেকে সরে যায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। সেটা শেষ হলে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইরান, রাশিয়া, চীন নিয়ে। কিন্তু এখন আমেরিকাকে আবারও মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় হতে হচ্ছে। কারণ, এখানে অবহেলা করলে এর ফল সবাইকেই ভোগ করতে হবে, কিছু সময় পরপর সংঘাত সামনে আসবে। আমেরিকা শান্তির উদ্যোগ নিলে হয়তো সেটা আশা দেখাতে পারে। কিন্তু এখন ইসরাইল-গাজা সংকট যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে, সেখানে আমেরিকাণ্ডইসরাইল কিংবা হামাস, শান্তির কথা কেউই বলছে না। সংকটটা এখানেই।’