বাংলাদেশ নিয়ে বিবাদে ওয়াশিংটন-মস্কো
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। মস্কো দাবি করেছে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংঘটিত করার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। তবে রাশিয়ার এসব মন্তব্যকে অপব্যাখ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচন এখন বৈশ্বিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংসহ গোলটেবিল বৈঠক বা সংসদে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে চর্চা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে আবারো বিবাদে জড়াল বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই পরাশক্তি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর নির্বাচন পরিচালনা করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার ওপর আস্থা রেখে ওয়াশিংটনের কর্মকাণ্ডকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে রাশিয়া।
শুক্রবার ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) জানায়, ২২ নভেম্বর মস্কোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তিনি আরো বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার আড়ালে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে একাধিকবার বলেছি। আপনারা কি বোঝেন, কোথায় যুক্তরাষ্ট্র আর কোথায় বাংলাদেশ! এ নিয়ে আমরা আবারো বলব।
একটি তথ্য পাওয়ার বিষয়ে জানিয়ে রুশ মুখপাত্র বলেন, জানা গেছে, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অক্টোবরের শেষদিকে স্থানীয় বিরোধী দলের উচ্চপদের এক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা বাংলাদেশে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংঘটিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তার কথোপকথনের সময় এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করলে তথ্য সহায়তা প্রদান করবে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ওই আশ্বাস দিয়েছে বলে কথিত রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন কর্মকাণ্ডকে কীভাবে দেখা উচিত, সে প্রশ্নও তুলেছেন। এ সময় ১০ বছর আগে মার্কিন সিনিয়র কূটনীতিক ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি। মারিয়া জাখারোভার মতে, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন তৎপরতা একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চরম হস্তক্ষেপ। এমন তৎপরতা কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান অনুসরণ করে স্বাধীনভাবে ও বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম, তা নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ঢাকার দূতাবাস জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার অপব্যাখ্যার বিষয়ে তারা অবগত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশের কোনো দলকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দেয় না। বাংলাদেশের জনগণের মতো যুক্তরাষ্ট্রও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিন্ন লক্ষ্য পূরণে এবং বাংলাদেশিদের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীরা সরকার, বিরোধীদল, নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।