ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সোনালি গম্বুজের ইতিকথা

জাকারিয়া জুবায়ের
সোনালি গম্বুজের ইতিকথা

সোনালি গম্বুজ আল আকসার মূল মসজিদ থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে, একটি উঁচু চত্বরের ওপর নির্মিত। যা কুব্বাতুস সাখরা নামে পরিচিত। কুব্বাতুন মানে গম্বুজ, সাখরা মানে পাথর। সরল অর্থে পাথরের ওপরে নির্মিত গম্বুজ। আল আকসার পবিত্র ভূমির আঙিনায় অবস্থিত। যা মূলত মিরাজের সফরে রাসুল (সা.)-এর বাহন বোরাক বাঁধা পাথরকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এক কুদরতি পাথরের ওপরে স্থাপিত। যা অষ্টভুজ আকৃতিতে সজ্জিত। প্রতিটি বাহু ৬৬ ফুট দীর্ঘ। ভেতরের ব্যাস ১৯২ ফুট। ভিত্তিমূলের ব্যাস ৬৬ ফুট এবং এ গম্বুজ ৯৯ ফুট উচ্চতায় কাঠ নির্মিত। বাইরের দিকে পিতল দিয়ে আবৃত। তার ওপর সোনালি প্রলেপকৃত। ভেতরের অংশে রয়েছে চিনা মাটির আস্তর। যা অত্যন্ত সুক্ষ্ম জাঁকজমকপূর্ণ সোনালি কারুকার্যমণ্ডিত।

সংস্কার যখন থেকে শুরু : ৬৬ হিজরি মোতাবেক ৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালেক বিন মারওয়ান এর কাজ শুরু করেন। ৭২ হিজরি মোতাবেক ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র ওয়ালিদ বিন আবদুল মালেকের হাতে এ কাজ সুসম্পন্ন হয়। কথিত আছে, মিশর থেকে প্রাপ্ত সাত বছরের ট্যাক্স এ নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়। এ গম্বুজের দায়িত্বে ছিলেন প্রখ্যাত তাবেয়ি রাজা বিন হাইওয়ান ও ইয়াজিদ বিন শারিক। তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে জানালেন, এখনও ১ লাখ স্বর্ণমুদ্রা অবশিষ্ট আছে। বাদশাহ বললেন, এটা আপনাদের আমানতদারির পুরস্কার। আপনারা তা গ্রহণ করুন। তারা উত্তরে বলে পাঠালেন, এ সৌভাগ্যজনক কাজের অংশীদার হয়ে আমাদের উচিত ছিল, নিজেদের স্ত্রীদের স্বর্ণ-গহেনাও এ কাজে ব্যবহার করা। আমরা এর বিনিময় নিতে অক্ষম। এরপর বাদশাহ সেই স্বর্ণ গলিয়ে গম্বুজের ওপর সোনালি প্রলেপ দিতে আদেশ দিলেন। আজ সোনালি গম্বুজ দেখে মানুষ বিমোহিত হয়। যা মূলত দুই তাবেয়ির আমানতদারি ও ইখলাসের চমক।

বর্তমান স্থাপনার আয়ুষ্কাল : কুব্বাতুস সাখরার বর্তমান স্থাপনা ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি সম্রাট সুলতান আবদুল হামিদ ও ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আবদুল আজিজ কর্তৃক সংস্কারককৃত। তার ফলে বাইরে দেওয়ালের কারুকার্য ৩৮টি রঙিন গ্লাসের জানালা এবং সাজসজ্জায় তুর্কি নির্মাণশৈলীর ছাপ বিদ্যমান। দেওয়ালের বাইরে চতুর্দিকে পাথরের ওপর সুরা বনি ইসরাইল ও সুরা ইয়াসিন অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর শৈলিতে খোদাই করা। এ গম্বুজ একটি বর্গাকৃতির উঁচু চত্বরে নির্মিত। সেখানে পৌঁছাতে সিঁড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। সিঁড়ির মাথায় মিহরাবের দরজা। যেখান থেকে প্রশস্ত চত্বর আরম্ভ। সেই চত্বরের ঠিক মাঝখানে গম্বুজটি অবস্থিত। গম্বুজের ভেতরে স্তম্ভগুলো দুটি সারিতে বিন্যস্ত। প্রথম সারিতে পাথর-সংলগ্ন চারটি বৃহদাকার ও ১২টি গোলাকার ছোট স্তম্ভ রয়েছে। দ্বিতীয় সারিতে আটটি বড় এবং ১৬টি ছোট স্তম্ভ। এভাবে চত্বরের ভেতরের অংশ মোট তিন ভাগে বিভক্ত।

এটি যে উদ্দেশ্যে নির্মিত : এটি মূলত মসজিদের অংশ নয়। মসজিদুল আকসা হওয়া তো দূর কি বাত। এখানে মুসলমানরা বসে কোরআন তেলাওয়াত করে। কেবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করে। এ জন্য এটিকে মসজিদে কুব্বাতুস সাখরাও বলা হয়। মূলত এটি মসজিদ আকারেও নির্মাণ করা হয়নি। তবে এটির গুরুত্ব ও মর্যাদা অসামান্য। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম, পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন ও মুসলিম বাদশাহগণ এটিকে অসামান্য গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। সুতরাং এদের গুরুত্ব ও মর্যাদা স্বতঃসিদ্ধ। এর প্রতি ভালোবাসা অন্তরে লালন করা নৈতিক দায়িত্ব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত