ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভারতের জ্ঞানবাপী মসজিদে রাতারাতি পূজার আয়োজন

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
ভারতের জ্ঞানবাপী মসজিদে রাতারাতি পূজার আয়োজন

জ্ঞানবাপী মসজিদের নিচে ব্যাসজীর ভূগর্ভস্থ কক্ষ বলে যেটি পরিচিত, সেখানে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দিয়ে বারাণসীর জেলা আদালত বলেছিল, প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে পূজার বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার গভীর রাতে পূজা শুরু করার সব ব্যবস্থা করা হয়। কীভাবে অতি দ্রুত পূজার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, তা বিস্তারিত জানতে পেরেছে গণমাধ্যম। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্ট ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্বটা বেশ কঠিনই ছিল। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষ থেকে যেসব মূর্তি পাওয়া গেছে, শুধু সেগুলোই পূজা করার কথা ছিল। তাই প্রশাসনের প্রথম কাজ ছিল কোষাগারে রাখা নির্দিষ্ট ওই মূর্তিগুলো চিহ্নিত করে বের করে আনা। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যে সার্ভে চালিয়েছিল, সেই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ওই মূর্তিগুলোর ছবি দেখে সেগুলেরকে চিহ্নিত করা হয়। ছবি দেখে মূর্তিগুলের শনাক্ত করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। আটটি মূর্তি চিহ্নিত করে কোষাগার থেকে ভূগর্ভস্থ কক্ষে নিয়ে যায় প্রশাসন।

ফাঁকা করা হয়েছিল চত্বর : সাধারণভাবে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডোরে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার ভক্ত থাকেন সব সময়। তাদের সরানোর বন্দোবস্ত করতেও প্রশাসনের বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ ও নিকটবর্তী চেতগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বারাণসীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কমিশনার সিদ্ধান্ত নেন, মন্দির ও মসজিদের মাঝে যে লোহার বেড়া রয়েছে, সেটা কেটে রাতের বেলাতেই পূজার ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লোহার ব্যারিকেড কেটে সেখানে লোহার গেট বসানো হয়েছে। ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে অন্ধকার থাকায় সেখানে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঘরটি বেশ স্যাঁতস্যাঁতেও ছিল বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আবার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে সেখানে ফের পূজো শুরু করার ধর্মীয় রীতি কী, সে ব্যাপারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেয় প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে খবরে জানা গেছে, কাশী মন্দিরের পুরোহিত ওমপ্রকাশ মিশ্র পূজা শুরু করেন। বারাণসী প্রশাসন বলছে, যখন ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে প্রবেশ করে পূজা করানো হয়, তখন সেখানে সোমনাথ ব্যাসের পরিবার অথবা এ মামলার আবেদনকারীদের কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

কক্ষটির কোনো দরজা ছিল না : বারাণসী প্রশাসনের মতে, ভূগর্ভস্থ কক্ষটির কোনো দরজা ছিল না, তাই ভেতরে ঢুকতে কোনো সমস্যাই হয়নি। আদালতের নির্দেশে ওই কক্ষটিতে ২০২২ সালে যে সার্ভে করা হয়েছিল, তখন এ ঘরটিতেই সব থেকে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ওই সার্ভের সময়েই মসজিদের অজুখানায় একটি শিবলিঙ্গ থাকার দাবি করেছিল হিন্দুরা। এরপরে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যখন সাম্প্রতিক সমীক্ষা করে, তখন তারা এ কক্ষটি থেকে জমে থাকা মাটি সরিয়ে রেখেছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগে এ কক্ষটির দুটি চাবি ছিল। ‘ব্যাসজীর’ ভূগর্ভস্থ কক্ষ নামে পরিচিত ওই ঘরটির একটি চাবি ছিল সোমনাথ ব্যাসের কাছে এবং অন্যটি থাকত জেলা প্রশাসনের কাছে। সোমনাথ ব্যাস বছরে একবার করে রামায়ণ পাঠের আয়োজন করাতেন প্রশাসনের কাছ থেকে আলাদা করে অনুমতি নিয়ে। সোমনাথ ব্যাসের মৃত্যুর পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আর চাবিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটা সময়ে কক্ষটির কাঠের দরজাটি ভেঙে যায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ কক্ষটি ৩৫ থেকে ৪০ ফুট লম্বা এবং ২৫ থেকে ৩০ ফুট চওড়া। এতে পাঁচটি ছোট কুঠুরি রয়েছে। একটি কুঠুরিতে মাটি ভর্তি রয়েছে আর বাকি তিনটি খোলাই থাকে। পঞ্চম কুঠুরিটি একটা দেওয়াল তুলে বন্ধ করা রয়েছে। এএসআই মনে করে, সেটির ভেতরে একটি কুয়া আছে।

একজন পুরোহিতের প্রবেশাধিকার : ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে শুধু একজন পুরোহিতের প্রবেশাধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে ঘরটি পরিষ্কার করা এবং আলো ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে কয়েকজন সেখানে ঢুকেছিলেন, কিন্তু রাতে মূর্তি স্থাপনের পর একবার আরতি করা হয়। আর শুক্রবারও একজন মাত্র পুরোহিতই ভেতরে গিয়ে পূজা করছেন। লোহার ব্যারিকেড কেটে যে প্রবেশপথ বানানো হয়েছে, তা ভোর সাড়ে তিনটা নাগাদ আরতির সময় খোলা হচ্ছে আর রাতে আবারও আরতির পরে সাড়ে ১০টায় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত